খাঁটি বনাম ছদ্মবেশী!!

 খাঁটি বনাম ছদ্মবেশী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে লোকসভার ভোটে বিজেপিকে ইতিপূর্বে যেমনটা কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার নাম নিয়ে ইউপিএ জোট হয়েছিল, অনেকটাই সেই ধাঁচেই এবারও জোট চাইছে কংগ্রেস। কারণ তৃতীয় ফ্রন্ট কিংবা বিজেপিবিরোধী যতগুলো ফ্রন্ট বা জোট গড়ে উঠবে, বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা তত বেশি উজ্জ্বল হবে। সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের রায়পুরে কংগ্রেসের যে প্লেনারি হয়ে গেল, তাতে এমনটাই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস ইউপিএ ধাঁচে জোট গড়ার জন্য যতই তৎপরতা দেখাক না কেন, দিন যত যাচ্ছে সেই ধরনের সম্ভাবনা ততটাই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বরং দেখা যাচ্ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে সমমনোভাবাপন্ন সবগুলো দলকে একজোট করার প্রশ্নে সবগুলো বিরোধী দলই মুখে কোরাস গাইলেও বাস্তবে তারা সবাই হাঁটছে গো অ্যাজ ইউ লাইকের মতো। কংগ্রেস পরিষ্কার বলছে, আগে দুবার ইউপিএ যেভাবে জোটবদ্ধ হয়েছিল এবারও সেই পথে হাঁটা জরুরি। কারণ তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার অর্থই হচ্ছে, বিজেপিকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যবস্থা করে দেওয়া। রায়পুরে কংগ্রেসের প্লেনারিতে এটাও বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যে, ইউপিএ ধাঁচের জোটের নেতৃত্ব কংগ্রেস নিজের হাতেই রাখতে আগ্রহী। এবং এই কাজের জন্য অভিন্ন ন্যুনতম কর্মসূচিও গঠন করা দরকার। কংগ্রেস রায়পুরের প্লেনারিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথারও উল্লেখ করেছে। যেমন দলের রাজনৈতিক প্রস্তাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সমমনোভাবাপন্ন বিজেপিবিরোধী জোটে কারা কারা স্থান পাবে, সেই জোটশরিকদের বাছাইয়ের দায়িত্বও কংগ্রেস নিতে চায়। অর্থাৎ সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আদর্শগত মিল রয়েছে তাদের নিয়ে এই জোট হতে পারে। পাশাপাশি তৃতীয় কোন শক্তি যদি এই প্রয়াসের বাইরে গিয়ে নিজে থেকে তৎপরতা শুরু করে তবে তার অর্থ দাঁড়াবে ওই শক্তিগুলো পরোক্ষে বিজেপিকে সাহায্য করার জন্যই তৃতীয় শক্তির নাম নিয়ে ময়দানে নেমেছে।
কংগ্রেসের এই বক্তব্য থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি যা হালে নাম বদল করে ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি হয়েছে, কিংবা ওয়াইএসআর কংগ্রেস বা উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী দল— প্রত্যেকেই এই তৃতীয় ফ্রন্টের অংশীদার হতে চাইছে। মুখে সবগুলো দলই তীব্র বিজেপি বিরোধিতায় কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে কংগ্রেস যখন বিজেপিবিরোধী ঐকজোট গড়ার কথা বলছে তখন তারা কংগ্রেসের সুরে সুরে মেলাচ্ছে না। আসল সমস্যাটা হলো নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার। কেননা কংগ্রেস ইউপিএ ধাঁচের জোট গড়ার কথা বলেও এই জোটের নেতৃত্ব নিজের হাতে রাখতে চায়। এর অর্থ হলো, সরাসরি মুখে না বললেও কায়দা করে কংগ্রেস বলতে চাইছে যে এই জোটের নেতৃত্ব দেবেন রাহুল গান্ধী। অথচ এই প্রশ্নে আপত্তি রয়েছে অধিকাংশ বিরোধীদের। বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব একেবারেই মানতে নারাজ বাংলার মমতা ব্যনার্জী, তেলেঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও, দিল্লীর অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং অন্ধ্রের জগনমোহন রেড্ডী। আবার অখিলেশ যাদব কংগ্রেস বা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের প্রশ্নে এতটা কঠোর না হলেও উত্তরপ্রদেশ এবং কিছু কিছু স্থানে কংগ্রেসকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। পাশাপাশি নীতীশ কুমার চান কংগ্রেসের নেতৃত্বেই বিজেপিবিরোধী জোট গঠিত হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে নীতীশ কুমার নিজেকে দেখতে চান। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, মমতা ব্যানার্জী এবং কে চন্দ্রশেখর রাও নিজেদের ১ নম্বর বিজেপিবিরোধী শক্তি হিসাবে প্রচার করলেও তারা দুজনেই তৃতীয় ফ্রন্টের নেতৃত্বের দাবিদার। অন্যদিকে মমতা, চন্দ্রশেখর রাও এদের বিজেপি বিরোধীতার চরিত্র কতটা নিখাদ এ নিয়ে কংগ্রেসের মনে প্রশ্ন আছে। সাথে সাথে দিল্লীর কেজরীওয়ালকে তো কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপিবিরোধী শক্তি হিসাবেই মানতে নারাজ। এই যখন দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পরিস্থিতি, তখন দিল্লীর যন্তরমন্তরে শুক্রবার তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা এসেছিলেন মহিলা সংরক্ষণ বিল ইস্যুতে অনশন মঞ্চে। লক্ষ্য বিরোধী ঐক্যমঞ্চ গড়া। কিন্তু গড়হাজির রইলো কংগ্রেস, ডিএমকে আর তৃণমূল। আর এক বছর বাদে দেশের সরকার গঠনের ভোট। এর আগে বিজেপিবিরোধী জোট গড়ার মঞ্চে তিন বড় দলের অনুপস্থিতি যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। স্বাভাবিক কারণেই তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন বনাম বিরোধী ঐক্যজোট গড়ার ক্ষেত্রে যে মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে, তাকে বিজেপি যথেষ্ট হাওয়া দিয়ে নিজের পালেই লোকসভার ভোটের আগে পরিস্থিতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তাতে ২৪এর আগে বিরোধী জোটের সম্ভাবনাই ক্রমেই ম্লান হচ্ছে তা একপ্রকার স্পষ্ট।কে খাঁটি বিজেপিবিরোধী, কে ছদ্মবেশী বিজেপিবিরোধী, এই লড়াই যে আখেরে বিরোধীদের সম্ভাবনা নিঃশেষ করে দিচ্ছে সেটা উপলব্ধির চেষ্টা বিরোধীদের মধ্যে নেই। এটাই বিরোধী মঞ্চের চিত্র।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.