খাদ্য লুকিয়ে রাখতে পাখির স্মৃতিতে থাকে ‘বারকোড’, জানাল গবেষণা!!

 খাদ্য লুকিয়ে রাখতে পাখির স্মৃতিতে থাকে ‘বারকোড’, জানাল গবেষণা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আকারে ছোট।গোলগাল।মাথায় ও থুতনিতে কালো ছোপ।এ পাখির নাম চিকাডিস।এদের স্মৃতি অসম্ভব প্রখর।কোথায়,কোন গাছের কোটরে নিজের খাদ্য সে সঞ্চয় করে রেখেছে,যেন কম্পিউটার, ঠিক বুঝে ফেলে সে।কারণ চিকাডিসের স্মৃতিতে থাকে ‘বারকোড’ কৌশল।মার্কিন গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণায় চিকাডিস পাখিদের স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।খাবার কোথায় লুকিয়ে রেখেছে তা মনে করতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের সচরাচর সারা দিন কাবার হয়ে যায়।গবেষকদের বক্তব্য ছোট্ট চিকাডিস তেমন ‘মোটা মাথা’র পাখিদের দলে পড়ে না।খাবার খুঁজে বের করতে বস্তুত তাদের ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয় না। কারণ খাবার লুকিয়ে রাখার সময় প্রতিবার চিকাডিস পাখিদের মস্তিষ্কে বারকোডের মতো স্মৃতি তৈরি হয়।এই প্রজাতির পাখিরা সাধারণত পরে খাওয়ার জন্য গরমকালে খাবার। সংগ্রহ করে লুকিয়ে রাখে।নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন প্রাণী বিজ্ঞানীরা দেখেছেন,ছোট একটি চিকাডিস পাখি প্রায় ৫০ লাখের মতো খাবারের টুকরো লুকিয়ে রাখতে পারে।কিন্তু এরপরেও তারা প্রত্যেকটি টুকরোর অবস্থান নিখুঁতভাবে মনে রাখতে পারে। গবেষকরা বলেছেন, চিকাডিস কীভাবে খাবার লুকিয়ে রাখার স্থান মনে রাখে, সেই কৌশলই তারা আবিষ্কার করেছেন।প্রাণী বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সেল’-এ গবেষণাটি প্রকাশিত
হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা করার জন্য একটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে সূর্যমুখী বীজ ছড়িয়ে রাখা হয়।সেখানে পাখিদের খাবার লুকনোর জন্য ১২০টির মতো জায়গা ছিল।পাখিদের আচরণ ও প্রতি স্থানে খাবার সঞ্চয়,খুঁজে বের করা বা লুকিয়ে রাখা প্রভৃতি কার্যকলাপ ভিডিয়ো করা হয়। এজন্য পাখিদের নি মস্তিষ্কে ছোট একটি ডিভাইস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।এসব পাখির মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসে নিউরনের কার্যকলাপ রেকর্ড করার জন্য এই ডিভাইসটি ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা।হিপ্পোক্যাম্পাস মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট স্থানের স্মৃতি গঠনে সহায়তা করে।এতে দেখা যায়, প্রতিবার বীজ লুকানোর সময় পাখিদের হিপ্পোক্যাম্পাসে নিউরনের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে।একই স্থানে বীজ লুকালেও তাদের মস্তিস্কে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণ দেখা যায়।এসব ক্রিয়াকলাপ তাদের মস্তিষ্কে বারকোডের মতো নকশা তৈরি করে।বিজ্ঞানীরা বলেছেন,সূর্যমুখী বীজগুলি লুকানোর প্রত্যেকটি স্থানের জন্য তাদের মস্তিষ্কে আলাদা বারকোডের মতো স্মৃতি তৈরি হয়।একটি পাখি যখন বীজ সংরক্ষণ করে বা খুঁজে বের করে, শুধু তখনই বারকোডগুলি দৃশ্যমান হয়।
গবেষণাপত্রের মুখ্য লেখক, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জুকারম্যান ইনস্টিটিউটের ড. সেলমান চেত্তিহ বলেন, বারকোড একটি নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার প্রতিনিধিত্ব করে।চিকাডিসের জীবদ্দশায় স্থান ও সময়ভেদে বারকোডগুলি ভিন্ন হয়। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ীর মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটে। চেত্তিহ বলেন,কেউ যখন কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার স্মৃতি তৈরি করে, তখন তার মস্তিষ্ক একটি অবিন্যস্ত স্তর তৈরি করে। বিষয়টি সুপার শপে প্রতিটি পণ্যের গায়ে থাকা লেবেল বা বারকোডের মতো। পণ্যের লেবেল স্ক্যান করলেই যেমন সেটি সম্পর্কিত সব তথ্য পাওয়া যায়, এই বিষয়টিও ঠিক তেমন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.