এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- বিরোধী দেখলেই অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইডি এবং সিবিআই। অথচ গেরুয়া রং দেখলেই একেবারে শান্তশিষ্ট পোষ মানানো এ নীরব হয়ে যাচ্ছে এই দুই তদন্তকারী সংস্থা। গত সাত-আট বছর ধরেই কেন্দ্রের এই দুই তদন্ত সংস্থার সম্পর্কে এমনটাই ধারনা পোষণ করেছেন আমজনতা। অথচ ন্যূনতম নিরপেক্ষতা, সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কোনও চেষ্টা সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তরফে দেখা যায়নি। বরং পরিস্থিতি একটু একটু করে বিপরীত ধর্মী হতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, দেশের অপরাপর সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর উপর সরকারে নিয়ন্ত্রণ এবং একাধিপত্য ক্রমেই উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারের এই একচ্ছত্র ক্ষমতার প্রবণতা যে গতিতে বেড়ে চলেছে, তাতে দেশের নির্বাচন কমিশনকে নিজের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার একটা উগ্র বাসনা আর সুপ্ত রইল না। বরং অনেকটা পরিকল্পিত ভাবেই নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নিজের কবজায় আনতে কেন্দ্র দেশের সর্বোচ্চ বিচারালায় সুপ্রিমকোর্টকে পর্যন্ত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি আইন করে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশনের অপরাপর সদস্যদের নিয়োগের কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। সদ্য সমাপ্ত সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে প্রায় বিরোধী শূন্য লোকসভা ও রাজ্য সভার পাস করানো হয় এই বিতর্কিত বিল। ইতিমধ্যেই এই বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সম্মতিও দিয়ে দিয়েছেন। দেশের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যাবতীয় শর্ত বদলে দিয়ে মোদি সরকার যে নজির গড়েছেন তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় কোনভাবেই সাধুবাদ যোগ্য নয়। মোদি সরকারের পাস করা এই বিলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টে বেশ কিছু জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় আবেদন রাখা হয়েছিল, যেন দেশের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে- নতুন পদ্ধতি চালু করার জন্য নতুন আইন কার্যকরী করতে একি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। জনস্বার্থ মামলাতে সেই বিজ্ঞপ্তিতেও বাতিল করার আর্জি জানানো হয়েছে। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট এই সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয়- সরকারের উপর নোটিশ জারি করেছে। তবে এখনই এই মামলা সরকারী জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি খারিজ করার কোনও নির্দেশ দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত। মনে রাখতে হবে গত বছর মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল দেশে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করছে একটি কমিটি। এই কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে সেদিন দেশের সমস্ত বিরোধী দলগুলো ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছিল। কিন্তু নতুন আইনে বলা হয়েছে, দেশের নির্বাচন কমিশনারদের এখন থেকে নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধীনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা মনোনীত একজন মন্ত্রী। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অপরিসীম। অতীতেও একাধিকবার ব রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে নির্বাচন কমিশনে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে শাসকদলের বেলায় নীরব এবং বিরোধীদের ক্ষেত্রে অতি সক্রিয় থেকেছে কমিশন। বর্তমানেও বিতর্কিত ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু হলে কমিশন পুরোপুরি পক্ষাপাতদুষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ১০০ শতাংশ থেকে যাচ্ছে। কারণ নতুন ব্যবস্থায় যারা নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত হবেন, তা সব সময়েই ২-১ ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাকেই পূর্ণ করবে। ভোটকে কুক্ষিগত করার এ হচ্ছে অসাধু একটি পদক্ষেপ, যা গণতন্ত্রের জন্য কাম্য নয়। সরকারের ঘনিষ্ট কোনও আমলাকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে বসিয়ে ইচ্ছেমতো ভোট করার এই অশুভ মনোভাবের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে এগোয়, সেটাই এখন দেখার। তবে বিলকিস বানুর ধর্ষিতাদের মুক্ত করার রায়ের বিরুদ্ধে কিংবা নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিতর্কিত বিল নিয়ে প্রতিবারই সুপ্রিমকোর্টকে যদি এগিয়ে আসতে হয় তবে সেটা নিঃসন্দেহে সরকারের জন্য খারাপ নজির।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

21 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

22 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago