গণতন্ত্রের জয় কাম্য!!

 গণতন্ত্রের জয় কাম্য!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভোটগ্রহণের আগেই যদি বুঝতে পারা যায় নির্বাচনের ফল কী হতে চলেছে, তাহলে সেই ভোট নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আগামী রবিবার,৭ জানুয়ারী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নিলেও, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সহ বেশ কিছু রাজনৈতিক পার্টি নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছিলো বিরোধীরা।দেখা গেছে, বিরোধীদের প্রত্যাশ্যা দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রধান বিরোধী দল সহ সহযোগী অপরাপর দলগুলো ভোট ঘোষণার পর থেকেই ধারাবাহিক অবরোধ,হরতাল বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে। যদিও বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে শুরুতে বেশ কিছুদিন বাংলাদেশের জনজীবন কার্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেও, সরকারকে তাদের দাবির সামনে মাথানত করাতে পারেনি।এই পটভূমিকায় বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য হতে চলেছে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ডানা মেলতে শুরু করেছে।বিশেষ করে কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুলের একটি বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছে।তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের দিকে গোটা বিশ্বের নজর রয়েছে।চাইছেন,ভোটাররা যেন যথার্থ অর্থেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে গেলে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।শুধু তাই নয়, নির্বাচন নিয়ে কমিশনের অপর এক সদস্য মোহম্মদ আনিসূর রহমানের কন্ঠেও উদ্বেগের সুর শোনা গেছে।তার বক্তব্য হলো, সুষ্ট ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেও এবং বাষ্ট নিজেই ব্যর্থ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সেই দেশের নির্বাচন কমিশনের দুই কর্তার এই ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবাহী বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে তাদের উপর চাপ রয়েছে। সেই চাপ।একদিকে যেমন আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের বার্তা দিচ্ছে।পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুনিয়ার তরফে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের জন্য কমিশনের উপরঅদৃশ্য চাপ কাজ করছে।আর সেই কারণেই হয়তো ভোটের আগে থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ঠারেঠোরে নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি দেশের চলমান নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মধ্যে, সেই দেশটির নির্বাচন পরিচালনকারী সংস্থার শীর্ষ কর্তারা যখন এই ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ ও সংবেদনশীল বক্তব্য রাখেন, তখন সেই দেশটির জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হতে চলেছে তার প্রাথমিক আভাস শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক সমাজও বেশ ভালো করেই অনুভব করতে পারেন। প্রথমেই দেশের প্রধান বিরোধী দল সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।ফলে কার্যতঃভোট হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল এবং তাদেরই নিজস্ব ছায়াপ্রার্থীর সঙ্গে।দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলোই যখন নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা থেকে উধাও, তখন প্রতিদ্বন্দ্বী দল বলতে যারা থাকেন, হয় তারা শাসকের ছদ্মবেশধারী কল্পিত বিরোধী অথবা এমন সব কিছু দল যাদের নাম, গন্ধ সাধারণ মানুষের অজানা। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নিয়ে অশান্তির কোন বাহ্যিক প্রকাশ থাকে না।ফলে বাইরে থেকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ মনে হলেও বাস্তবে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হচ্ছে সেই প্রশ্ন কিছু জনমনে ও আন্তর্জাতিক দুনিয়ার দেখা দিতেই পারে।গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য দিক হচ্ছে নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন মানেই শুধুই লোকদেখানো প্রহসনাত্মক ব্যবস্থা নয়। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সব সময়েই একটি সরকারকে বৈধতা দেয়। আর যখন নির্বাচন পক্ষপাতদোষে দুষ্ট হয়, তখন সেই ক্ষমতার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক নয়। তাই নির্বাচন
শুধু অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আইনি কিংবা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়ে নয়। এর সঙ্গে ক্ষমতার বৈধতা, গণতন্ত্র এগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে।এ কথা অস্বীকার করার কোন বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই যে, ভোটের রাজনীতিতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের প্রধান প্রতিদ্ব-ন্দ্বী। কিন্তু এবারের-নির্বাচনে বিএনপি সহ বেশ কিছু প্রধান দল ভোটে অনুপস্থিত। এই অবস্থায় শাসক দল নিজের দলের লোকেদেরকেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ভোটে নামিয়ে নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সংবিধান মেনে ভোটারদের রায় যাতে
অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সুনিশ্চিত করা যায় সেদিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে।আর সেটা সম্ভব হলেই সমস্ত বিতর্ক প্রশ্নচিহ্নকে দূরে ঠেলে গণতন্ত্রের জয় নিশ্চিত করা যাবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.