গণতন্ত্রের নামে

 গণতন্ত্রের নামে
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-একটি মাত্র দাবি। আর তার জেরেই গত তিনদিনে দেশের লোকসভা এবং রাজ্যসভা থেকে বহিষ্কার মোট ১৪১ জন সাংসদ। যা ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রথম। এর আগে এতজন সাংসদকে একই কারণে লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেনি। এই নজিরবিহীন ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত তিনদিন ধরেই উত্তাল দেশের রাজনীতি। দেশের তামাম বিরোধী দলগুলি এখন এই ইস্যুতে সরব হয়েছে। বিরোধীদের দাবিটা কি ছিল? সম্প্রতি সংসদে ঢুকে দুই যুবকের আস্ফালন এবং রঙিন ধোঁয়া ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সংসদে বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হয়েছে। এই ব্যাপারে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করেছেন। বিরোধীদের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদের উভয়কক্ষেই যেন এই ব্যাপারে বিবৃতি প্রদান করেন। এখান থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দেবেন না, অন্যদিকে বিরোধীরাও তাদের দাবিতে অনড়। এই নিয়ে ঘটনার পর থেকেই উত্তাল হতে থাকে সংসদের উভয়কক্ষ। কিন্তু গত তিনদিনে পরিস্থিতি আরও গরম হয়ে উঠে। যার পরিণতি গত তিনদিনে লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে মোট ১৪১ জন সাংসদের বহিষ্কার। দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ঘটনাকে বিরোধীরা নির্লজ্জ প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, শাসক দলের দাবি, গণতন্ত্রের নামে বিরোধী সদস্যরা সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। বিরোধীদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সংসদের সুষ্ঠু কার্যক্রমকে যেনতেন প্রকারে অচল করে দেওয়া। সংসদের সুষ্ঠু কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটানো। সংসদের নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রতিবাদের নামে সংসদ অচল করে দেওয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এখন কার বক্তব্য সঠিক ? সেটা আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে জনতার রায়েই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কেন না, দেশের জনতাই আসল বিচারক। দেশবাসী সবকিছু দেখছে। দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এর আগে সাংসদদের
বহিষ্কারের ঘটনা ঘটলেও, একসাথে এতজন (১৪১) সাংসদকে বহিষ্কার এই প্রথম। এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি সত্যিই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ? নাকি এর পেছনে গভীর কোনও রহস্য রয়েছে? সংসদের উভয়কক্ষে এর আগেও তো বহুবার নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। বিরোধীরা সংসদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পীঠস্থানকে অচল করে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এমন বহু ঘটনা দেখেছে দেশবাসী। কিন্তু এবারের ঘটনা নজিরবিহীন। যা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার পেছনে মোদি সরকারের বিশেষ রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করিয়ে নিতেই গত তিনদিনে ধাপে ধাপে মোট ১৪১ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করেছে। যাতে ওই বিলগুলি পাস করাতে কোনও সমস্যা না হয়। এমনিতে সংখ্যার বিচার করলে বিল পাস করতে সরকারের কোনও সমস্যা হওয়ার নয়। বিল এমনিতেই পাস হয়ে যেত। কিন্তু সমস্যা হলো সময় নিয়ে। কেন না, সংসদে রং বোমা কান্ড নিয়ে বিরোধীরা যেভাবে সংসদের কাজকর্ম অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ঝাঁপিয়েছে, তাতে বিল পাস কার্যত অসম্ভব ছিল। তাই নজিরবিহীন ভাবে সংসদের উভয়কক্ষ থেকে বিরোধী সাংসদদের বহিষ্কারের পথে হাঁটতে হয়েছে শাসকদলকে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এতে অবাক অথবা বিস্মিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। কেন না, একশ চল্লিশ কোটির দেশে, সবই তো চলছে গণতন্ত্রের নামে। শাসক বলবে, আমরা সঠিক। বিরোধীরাও বলবে আমরা সঠিক। আসলে সঠিক কে? এই প্রশ্নের জবাব আর কয়েক মাস পরেই মিলবে জনতার রায়ে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.