ত্রিপুরার সাহিত্য চর্চায় নয়া ইতিহাস রচনা করেছে উড়ান: জয় গোস্বামী।।
গণতন্ত্রের নির্যাস!!

অদ্য রজনী গত হলে পরদিন বিশাল এই দেশের অষ্টাদশ সাধারণ নির্বাচন।৯৮ কোটি ৬৮ লক্ষ ভোটার।একাধিক পর্বে ভোটগ্রহণ।এ কথা আমরা সকলেই জানি ভারতের লোকসভা নির্বাচন বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন। বহির্বিশ্ব ভারতকে ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসাবে অভিহিত করে। প্রশ্নাতীত গণতন্ত্রের অধিষ্ঠান হিসাবেই ভারতের বিশ্বখ্যাতি। তবে সাদা পৃষ্ঠার উপরে কালো অক্ষরে লেখা এবং সাধারণ্যের ধারণার কুঠুরিতে থাকা গণতন্ত্রের সঙ্গে বাস্তবের মিল কতখানি?সর্বোচ্চ নেতাদের কথা ছেড়ে দিলেও ভোট দিয়ে যাদের আমরা প্রতিনিধি নির্বাচিত করি, তিনি কি সত্যিই আমাদের প্রতিনিধি?প্রশ্নটি অপ্রিয় হলেও মিথ্যা কি?গত লোকসভার ৮৭ শতাংশ সাংসদ ছিলেন কোটিপতি, যাদের গড় সম্পত্তি একুশ কোটি টাকা। তারা কতখানি ‘আমাদের লোক’ কিংবা আমি-আপনি কতখানি ওই বলদর্পী প্রতিনিধির ‘লোক’, ভোটদানের আগে প্রতিটি ভোটারের তা স্মরণে রাখা উচিত।সার্থক প্রতিনিধিত্ব কাকে বলে?একজন লোক আরও পাঁচজনের ‘প্রতিনিধি’ হতে পারেন কী করে,সে তর্ক সুপ্রাচীন।ফরাসি দার্শনিক রুশো বহুকাল আগেই বলে গেছেন, গণতন্ত্রের অর্থ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র, যেখানে প্রত্যেককে নিজের কথা বলতে হবে।কিন্তু প্রতিনিধিত্বমূলক এই গণতন্ত্রে তার কতটুকু রক্ষিত হয়, ভুক্তভোগী মানুষ বিলক্ষণ জানেন।উদাহরণ,এই ধারণার ভিত্তিতে আইন করে সংসদে মেয়েদের আসন বাড়ানো হয়েছে যে, মহিলা সাংসদরা মেয়েদের ‘প্রতিনিধি’।কিন্তু সত্যিই কি তাই?গত পাঁচ বছর পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটের সাংসদ ছিলেন মহিলা, ডজন ডজন মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যাও ছিলেন সেখানে। তবুও সন্দেশখালির মেয়েদের হয়ে কেউ মুখ খোলেননি। নির্যাতিতা মেয়েদেরই নিজেদের লড়াই লড়তে হয়েছে।
গুনতিতে সাড়ে সাত দশকে পা দিয়েছে ভারতীয় গণতন্ত্র। সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে এই নিয়ে আঠারোবার। অথচ রাজনীতিতে অপরিণত আচরণ, কু-কথার ফুলঝুরি স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ নেই, বরং বাড়ছে।বিশেষত মহিলা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটের সঙ্গে সংশ্রবহীন কদর্য ব্যক্তি-আক্রমণ,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া চটুল ‘মিম’ কি আদৌ উন্নত গণতন্ত্রের লক্ষণ?কেন এমন হচ্ছে, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের ভেবে দেখা উচিত।এ সবের বিপ্রতীপে সত্য এই যে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বাসিন্দা হিসাবে বারবার গর্ব করি আমরা। গণতন্ত্রের এমন সুবৃহৎ ব্যপ্তি পৃথিবীর আর কোনও প্রান্তে দেখা যায় না।
গত চুয়াত্তর বছর ধরে মাথা উঁচু করে এগিয়েছে ভারতীয় গণতন্ত্র।কোনও আন্তর্জাতিক শক্তির সামনে অথবা চাপে তা অবনমিত হয়নি।যে বিপুল কর্মকাণ্ড ভারতের সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে চলে, তা গোটা বিশ্বের কাছে আজ দ্রষ্টব্য ও শিক্ষণীয় বিষয়। ভারতের সাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে অন্য অনেক দেশ সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার শিক্ষা নেয়।সেই দেশের নাগরিকদের, বিশেষত নেতাদের রাজনৈতিক রুচি নিম্নগামী হলে মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন প্র হয়।
সাতটা দশক মাথা উঁচু করে কাটিয়ে দিতে পারে যে গণতন্ত্র, তার কাছ থেকে অনেক বেশি রুচিশীলতা কাম্য নয় কি?নিম্নরুচির ব্যক্তিগত আক্রমণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচায়ক হতে পারে না।শালীনতার সীমা অতিক্রম না করেও প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে বিদ্ধ করা যায়।এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা স্তরের নেতাদের মধ্যে এবং নাগরিকদের একাংশের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আগ্রহ।
ভোটের প্রাক্কালে আমাদের আরও স্মরণে থাকুক, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র পরস্পরের সঙ্গে গ্রন্থিত। একমাত্র গণতন্ত্রই সর্বস্তরের মানুষকে সমানাধিকার দেয়। এই সমানাধিকার সম্মান এবং স্বীকৃতির।সাধারণ নাগরিককে উদ্বেগের মুখে রেখে রাষ্ট্রের সর্বাগ্রাসী স্বরূপ দেখে কারও মনে হতেই পারে স্বাধীনতা যে গণতন্ত্র এনেছে, তা প্রকৃত গণতন্ত্র নয়। হয়তো ঠিক, হয়তো ভুল। তবে আমাদের প্রকৃত গণতন্ত্র চাই। প্রকৃত গণতন্ত্র হলো অনাগত গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্র আসবে, যে গণতন্ত্র সম্পূর্ণ হয়নি, যে গণতন্ত্রে রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা থাকবে, প্রতিটি অঞ্চলের বিকাশ ঘটবে, নারীরা মর্যাদা পাবেন, শিশুকল্যাণ, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধিত হবে, শ্রমিকের জীবিকার নিরাপত্তা থাকবে, মজুরি যথাযথ হবে, কৃষকের জীবনের মানোন্নয়ন হবে, নিরপেক্ষ ও নির্ভীক কন্ঠের স্বাধীনতা থাকবে। আশা রাখি, অষ্টাদশ সরকার ক্ষমতায় এলে সেই অনাগত গণতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হবে।