গণ হিস্টিরিয়া না হইয়া যায়!

 গণ হিস্টিরিয়া না হইয়া যায়!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সরকার গঠন, মন্ত্রিসভার দপ্তর বন্টন সকল কাজই হইয়া গিয়াছে। আর তাহার বাহিরে দলের ক্ষেত্রে সম্পন্ন হইয়াছে বিজয় উৎসব। মূলত শাসক বিজেপি-আইপিএফটির জোট এই উৎসব উদযাপন করিয়াছে সারা রাজ্যে। তাহার বাহিরে তিপ্পা মথাও নিজ নিজ নির্বাচনি কেন্দ্রে যেখানে জয় পাইয়াছে সেইখানে বিজয় উৎসব পালন করিয়াছে। এইদিক হইতে কিছু আসনে জয় পাইলেও সেই সেই কেন্দ্রে কোনও বিজয় উৎসব উদ্যাপনের অবস্থায় নাই বিরোধী কংগ্রেস-বাম জোট। এই নির্বাচনের ফলাফলে তাহাদের হাত রহিয়াছে ১৪ আসন। কোথাও তাহাদের তরফে বিজয় উৎসবের আয়োজন নাই। বরং চলিতেছে আক্রমণ এড়াইয়া জীবন, সম্পদ বাঁচাইয়া রাখিবার প্রয়াস।ভোট গণনার পর দশ বা এগারো দিন অতিক্রান্ত, কিন্তু নানা জায়গায় নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস বন্ধ হইতেছে না। সন্ত্রাসের অভিযোগ কেবল বিরোধী দল আনিতেছে এমন নহে। অভিযোগ বিজেপির পক্ষেও রহিয়াছে। সমতলে কিংবা পাহাড়ে আক্রমণ-সন্ত্রাসের ঘটনা অস্বীকার না করিলেও কোথাও আক্রমণকারীদের দলের নাম বলিতেছে না বিজেপি। কিন্তু সকলেরই জানা পাহাড়ে বিজেপির সহিত সংঘাত হইতেছে মথার। প্রায় সকল জায়গাতেই মথার আক্রমণে আহত, নিগৃহীত হইতেছে বিজেপির সমর্থকেরা। আবার সমতলে নলছড় কেন্দ্রের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক যখন থানায় সন্ত্রাসের অভিযোগ করিতেছেন তখনও কিন্তু আক্রমণকারীদের দলের নাম বলিতেছেন না। দেখা গিয়েছে এই আক্রমণকারীরাও শাসকদল বিজেপির সমর্থক, কর্মী।স্বদলীয় আক্রমণের ঘটনা একেবারে কম নহে নানা জায়গায়। তুলনায় এত দলীয় কোন্দল নাই শাসকদলে। তাহা হইলে এই স্বদলীয় আক্রমণ কি পারিবারিক শত্রুতা এবং ব্যক্তিগত রেষারেষির ফল? অনেকাংশেই সেইরকম ঘটনা ঘটিতেছে। আগেও ঘটিয়াছে নানা সময়ে। কিন্তু দীর্ঘ অ সময় ধরিয়া এই সকল ঘটনা ঘটিতে দেওয়া উচিত নহে। বিষয়টি তখন সংক্রামক আকার লয় এবং গণ হিস্টিরিয়ার রূপ লইতে থাকে। সম্প্রতি বিরোধী দলের সাংসদেরা রাজ্যে আসিয়া এই ধরনের বারোশত ঘটনার সংখ্যা নিরূপণ করিয়া রাজ্যপালকে জানাইয়া গিয়াছেন। দেখা গিয়াছে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক রেষারেষিতে ব্যক্তি চরিত্র গোষ্ঠী চরিত্রের উপর চাপাইয়া দিয়া ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধি করা হইয়া থাকে এই সময়ে। কিন্তু গোষ্ঠী চরিত্র কোথাও কোথাও বিরোধী দলের অফিসেও ঝাঁপাইয়া পড়িতেছে।এই সকল অসংযত ঘটনা শাসকদলকে বেকায়দায় রাখিবে, ইহা আমাদের সদ্য অতীতের অভিজ্ঞতা।মানুষ শান্তির পক্ষে ভোট দিয়াছে। শান্তির পরিবেশ অটুট রাখিতে যাহাদের হাতে শাসন ক্ষমতা তুলিয়া দিয়াছে তাহাদের দায় এইক্ষেত্রে অধিক। রাজ্যের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী কিংবা শপথের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের ঘটনাগুলিকে স্বার্থান্বেষী মহলের কাজ বলিয়া নিন্দা করিয়াছেন। কিন্তু ইহার পরেও একই ঘটনা ঘটিতেছে, বরং আরও বেশি
আকারে ঘটিতেছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলার পর কাজ করিবার দায়িত্ব ছিল পুলিশের। কিন্তু পুলিশ সেই ভূমিকা লইতেছে কি ? হামলার ঘটনা সম্পন্ন হইয়া গেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাইতেছে এবং অসহায় দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়াইয়া থাকিতেছে। পুলিশ চাহিলে কি অনভিপ্রেত এই সকল ঘটনা ঠেকাইতে পারিবে না?এই রাজ্যে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস যেমন এক লজ্জাজনক পরম্পরা তেমনি ভোটপূর্ব সন্ত্রাসের ঘটনাও নতুন কিছু নহে। তেইশের নির্বাচনকে এই ত্রিপুরায় ঘটনাশূন্য করিতে পারিয়াছে প্রশাসন। ইহা সঠিক যে এই কাজের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহায়তা পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু কম হইলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী আজও রহিয়াছে রাজ্যে। আবার প্রশাসনও একই আছে। তাহা হইলে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস কেন কমিবে না? কেন মানুষের ফসল, বাগিচা পোড়ানো হইবে? দোকানে তালা ঝুলাইয়া দেওয়া, ঘরবাড়ি পোড়াইয়া দেওয়া, মানুষকে মারধর করিয়া জঙ্গলে, খোলা আকাশের নিচে থাকিতে বাধ্য করা কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নির্বাচন পরিণতি হইতে পারে না। ইহাতে ত্রিপুরার মুখ পুড়িতেছে রাজ্যের বাহিরের মানুষের সামনে। নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের খবর উন্নত তথ্য প্রযুক্তির যুগে দেশের অনেক মানুষই পাইয়া গিয়াছেন। রাজ্যে সফররত বিরোধী দলের সাংসদেরা জানাইয়া গিয়াছেন তাহারা রাজ্যের সন্ত্রাসের ঘটনা সংসদে তুলিবেন, বিশ্ববাসীকে জানাইবেন। যদিও বিশালগড়ের এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থানের কারণে পুলিশ কয়েকজন দোষীকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। কিন্তু অনভিপ্রেত ঘটনাটি তো এড়ানো যায় নাই। যাহা ঘটিয়া গিয়াছে তাহার সংবাদ এইবার সর্বত্র যাহাতে ছড়াইয়া পড়ে সেই ব্যবস্থা করিতেছেন সাংসদেরা। ইতিমধ্যে তাহারা উপরাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখিয়াছেন। বলাই বাহুল্য এই লইয়া আলোচনা শোরগোল চলিবে সংসদের অধিবেশনে। মোদ্দাকথা হলো, ইহাতে বিজেপি বা কংগ্রেস, সিপিএম আমাদিগের রাজনৈতিক পরিচয় রাজ্যের ভেতরে যাহাই হোক না কেন সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আমরা সকলেই যেহেতু ত্রিপুরাবাসী তাই কলঙ্কের ছাপ কিন্তু সকলের পৃষ্ঠদেশে সমানভাবেই পড়িল। সবাই ভুল জানিতেছে, অশান্তিতে থাকা, কলহপ্রিয় থাকা ত্রিপুরার সংস্কৃতি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.