গতিছন্দে সংশয়!

 গতিছন্দে সংশয়!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ভারতকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন সঙ্কল্পের কথা ঘোষণা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।একটি দেশকে তখনই উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকার করে নেওয়া হয় যখন দেশটি সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের মানদণ্ডকে ছুঁতে পারে।এই সার্বিক উন্নয়ন বলতে সাধারণত দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান, দেশটির মাথাপিছু আয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সাক্ষরতা, শিশু ও বৃদ্ধের সার্বিক বিকাশ সবকিছুকে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান এক তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রীয় সরকারকে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন তাতে এই মর্মে আশা ব্যক্ত করা হয়েছে, আগামী ২৫ বছরের মধ্যেই ভারত বিশাল এক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাক্ষী হতে চলেছে।

শুধু তাই নয়; এই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এক বড় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে চলেছে বলে উপদেষ্টা পরিষদ মন্তব্য করেছে। অর্থনীতির এই উল্লম্ফন কীভাবে সম্ভব সেটা বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে, যদি এখন থেকে ভারতের অর্থনীতির বার্ষিক গড় বৃদ্ধি সাত থেকে পৌনে আট শতাংশ হয় তাহলেই আগামী ২৫ বছর বাদে ২০৪৭ সালে ভারতের অর্থনীতি মার্কিন ২০ ট্রিলিয়ন ডলারকে স্পর্শ করবে। আর এটা সম্ভব হলে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ২৫ বছরের মধ্যে ২০ ট্রিলিয়নের অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে পারবে ভারত।

আর তখন প্রতিটি ভারতীয় গড় মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি। বিশ্ব ব্যাঙ্কের নিয়ম বলছে, কোন দেশের নাগরিকের বার্ষিক মাথাপিছু আয় বা পার ক্যাপিটা ইনকামের পরিমাণ যদি ১২ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি হয়, তবেই সেই দেশের অর্থনীতিকে উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ২০৪৭ সালে ভারতের সম্ভাব্য মাথাপিছু বার্ষিক আয় দাঁড়াবে ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে জনগণের কাছে মেলে ধরতে নতুন নিচ্ছে মারণ নেশায়।

কর্মকৌশলে নেমেছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ২০৪৭-এর মধ্যে দেশকে উন্নত অর্থনীতির তালিকায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। এবার সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রূপরেখা তৈরি, ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে রোডম্যাপ এবং সর্বোপরি দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির আকাশছোঁয়া প্রচারকে সামনে নিয়ে যেতে মুখ্যসচিবদের দিল্লীতে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৫ থেকে ৭ জানুয়ারী নতুন বছরে সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের নিয়ে সেই সম্মেলন ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। মাত্র এ বছরই জুন মাসে ধর্মশালায় সম্মেলনে বসেছিল দেশের সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের।

তাতে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যপূরণের দিকে জোর দেওয়া হয়েছিল। ছয় মাস না ঘুরতেই এবার ২০৪৭ এ ভারতকে উন্নত অর্থনীতির তালিকায় নিয়ে যেতে ফের মুখ্যসচিবদের দিল্লীতে ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এবারের লক্ষ্য ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতির দেশে ভারতকে পরিণত করা। বলা হচ্ছে, এখন দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশের মতো। যদি এই বৃদ্ধিকে ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে ভারত মাঝারি আয়ের শ্রেণীভূক্ত দেশের তালিকায় পড়বে। আর যদি উচ্চ আয়ের শ্রেণীভুক্ত দেশের তালিকায় ঢুকতে হয় তবে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।

কিন্তু এখানে প্রশ্ন হলো, শুধু ভাবনা দিয়েই ভারতকে উন্নত আর্থিক দেশে টেনে তুলে নেওয়া যাবে না। ভাবনার সঙ্গে চাই এর উপযুক্ত ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করার কাজ শুরু করা। কিন্তু এর আগে দেশের বাস্তবতাটুকুকেও মাথায় রাখতে হবে। দেশের বিশাল জনসংখ্যা যদি অর্থনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে বড় সাফল্যের দ্যোতক হয়, এর পাশাপাশি দেশটির বিশাল দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সংক্রমণের জন্য আশি পরিকাঠামোগত ব্যাপক সমস্যা সর্বোপরি সামাজিক অস্থিরতা শিকড়গুলিও দেশটির এগিয়ে যাওয়ার পথে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এই সমস্ত পিছুটানগুলোর জন্য কোন দেশ তার বৃদ্ধির গতিছন্দকে উন্নততর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে না। রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ব্যাপক পরিসরে ঘাটতি। এই সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে শুধু তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বাস্তবকে অস্বীকার করতে চাইলে তা হিতে বিপরীত ফলও দিতে পারে।এক্ষেত্রে আশার ছলনে ভূলে উদ্বাহু হওয়ার চেয়ে সাবধানে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখে এগিয়ে যাওয়াই হবে যথাযথ পদক্ষেপ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.