গাঁদা ফুল চাষ পদ্ধতি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সুশান্ত কুমার দেব

শীতকালীন ফুলগুলির মধ্যে গাঁদা অন্যতম একটি জনপ্রিয় ফুল।ধুসর এই শহরের অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা জুড়ে নানা জাতের, বিভিন্ন রঙের গাঁদা ফুলে ছেয়ে যাওয়া খুব একটা অপরিচিত নয়। এই ফুলের চাহিদা সারা বছর ব্যাপী। বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে, বিয়ে, সভা-মিছিল, মিটিং এ গাঁদা ফুলের মালা, তোড়ার ব্যবহার অনস্বীকার্য। তাই প্রতিদিন রাজ্যের আশেপাশের এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে এই ফুল পৌঁছে যাচ্ছে জেলাশহরগুলোত।জলবায়ুঃ
ক) গাঁদা ফুলের বৃদ্ধি এবং ফুলের বিকাশের জন্য হালকা জলবায়ুর প্রয়োজন।খ) এর প্রসারমান বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম তাপমাত্রার পরিসীমা ১৮-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ) ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে তাপমাত্রা গাছগুলির বৃদ্ধিকে হ্রাস করে, যা ফুলের আকার এবং সংখ্যায় প্রভাব ফেলে।ঘ) প্রচণ্ড শীতে গাছপালা এবং ফুলগুলি শৈত্য দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাটিঃ

ক) গাঁদা বিভিন্ন রকম মাটিতে জন্মাতে পারে, কারণ এটি বিভিন্ন ধরনের মাটিতে অভিযোজিত হতে নামে পারে।
খ) ফরাসি (বামন) গাঁদা হালকা মাটিতে সবচেয়ে বেশি চাষ কর৷ যেখানে মাটির নিস্কশন ব্যবস্থা ভালো, আদ্র মাটি আফ্রিকান (লাম্বা) গাঁদা চাষের জন্য উপযুক্ত।গ) টবে বা পাত্রে চাষ করলে তিন ভাগ দো-আঁশ এটেল বা দো-আঁশ মাটির সাথে এক ভাগ গোবর মিশিয়ে সার মাটির মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই সার মাটি টবে বা পাত্রে বা পলিব্যাগে ভরতে হবে।ঘ) পিএইচ ৫.৬ থেকে ৬.৫ থাকা অত্যাবশ্যকীয়।জমি প্রস্তুতি,জমিতে চাষের জন্য, এটি ভালোভাবে চাষ করা উচিত এবং এরপরে প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ টন পরিমাণে গোবর মিশ্রিত করতে হবে।

বংশবিস্তারঃ

ক)গাঁদা জন্মানোর দুইটি সাধারণ
ক) গাঁদা জন্মানোর দুটি সাধারণ
পদ্ধতি হলো বীজ এবং কাটিং।
খ) বীজ থেকে জন্মানো উদ্ভিদগুলি লম্বা, জোরালো এবং ভারী হয় এবং তাই কাটিং এর চেয়ে বীজ দিয়ে বংশবিস্তার করাই শ্রেয়।নার্সারিতে বৃদ্ধি ক) গাঁদা বীজ কালো বর্ণের এবং চারা জন্মানোর জন্য প্রায় ১-২ বছর পর্যন্ত টেকসই থাকে।খ) ৫-৭ দিনের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হয়। বীজ বপনের আগে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা রোধ করতে ক্যাপ্টান ২ গ্রাম/কেজি বীজ ট্রিটমেন্ট করতে হবে। গ) বীজগুলি পাত্র, বীজবাক্সে বা নার্সারি বেডে বপন করতে হবে।ঘ) নার্সারি বেডগুলি খনন করে এবং ভালো পচা গোবর সার মিশিয়ে দিতে হবে।ঙ) বীজ বপনের আগে পিঁপড়া এড়ানোর জন্য ক্যাপ্টান মাটিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।চ) বীজগুলি পাতলা (৬-৮ সেমি সারি সারি) এবং ২ সেমি গভীর গর্ত করে বপন করতে হবে।ছ) নার্সারি বেডগুলি পুরো সময়কাল আর্দ্র থাকতে হবে।জ) বীজের পরিমাণ তার বিশুদ্ধতা এবং অঙ্কুরোদগমের হারের উপর নির্ভর করে।ঝ) সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে নার্সারিতে বৃদ্ধির জন্য ২০০-৩০০ গ্রাম বীজ/একর প্রয়োজন হয় এবং শীত মৌসুমে প্রতি একর ১৫০-২০০ গ্রাম প্রয়োজন হয়।
ঞ) এক হেক্টর জমিতে রোপণের জন্য প্রায় ১.০-১.৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়, তবে হাইব্রিডের ক্ষেত্রে ২৫০ গ্রাম/হেক্টর। বীজ ৫-৭ দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়।
ট) বীজ বপনের ৪-৫ দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হয় এবং বীজ বপনের ৩-৪ সপ্তাহ পরে রোপণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।চারা রোপণ,ক) গাঁদা চারা সহজেই রোপণ করা যায় এবং জমিতে স্থানান্তরের সময় এর মৃত্যুহার খুবই নগণ্য ।
খ) প্রতিস্থাপনের সময় এগুলিতে ৩- ৫টি পাতা থাকতে হবে।গ) পাতলা এবং লম্বা চারা ভালো গাছ তৈরি করে না ।ঘ) খুব পুরোনো চারা থেকেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব নয়।ঙ) ভালোভাবে জমি তৈরি করা জমিতে চারা রোপণ করতে হবে এবং মূল অঞ্চলটির চারপাশে মাটি চাপা দিত হবে যেন বায়ুপূর্ণ ফাকের সৃষ্টি না হয়।চ) রোপণের পরে হালকা সেচ দেওয়া উচিত।
ছ) উদ্ভিদের ঘনত্ব মূলত জাতের বৃদ্ধির অভ্যাস, চাষ প্রক্রিয়া এবং মাটির উপর নির্ভর করে।জ) সাধারণভাবে ফ্রেঞ্চ গাঁদার জন্য এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব ৩০ সেমি x ৩০ সেমি এবং আফ্রিকান গাঁদা গাছের জন্য ৪০ সেমি × ৪০ সেমি হওয়া উচিত।
ঝ) উদ্ভিদের উন্নত বর্ধন ও ফুলের ফলনের জন্য গাছের মধ্যে যথাযথ ব্যবধান প্রয়োজন ৷সার,ক)২৪ টন / হেক্টর জমিতে ভালো পচা গোবর চাষের আগে মিশ্রিত করা উচিত।খ) অতিরিক্ত প্রস্তাবিত এনপিকে (নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ) সার ডোজ ৪:৩:৩ হবে।গ) অর্ধেক নাইট্রোজেন থাকতে হবে এবং পটাশ এবং ফসফরাস পরিপূর্ণ করে বেসাল ডোজ হিসেবে প্রয়োগ করা উচিত, রোপণের এক সপ্তাহ পরে।ঘ) নাইট্রোজেনের অবশিষ্ট পরিমাণ রোপণের ৩০-৪০ দিন পরে হওয়া উচিত।ঙ) গাঁদা ফুলের মান এবং ফলনের জন্য দস্তা এবং বোরনও প্রয়োজন।আগাছা নিয়ন্ত্রণ,
ক) আগাছা বিশেষত বর্ষাকালে জমিতে গাঁদা চাষের একটা বড় সমস্যা। সময়মতো আগাছা অপসারণ না করা হলে গাঁদা বৃদ্ধির ও উৎপাদনশীলতার দিক থেকে বড় ক্ষতি হয়।খ) পুরো বৃদ্ধি সময় ৩-৪ বার হাত দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা প্রয়োজন
হয়।গ) আগাছা পরিষ্কার যখন প্রয়োজন তখনই করা উচিত।
সেচ,ক) সপ্তাহে একবারে বা যখন প্রয়োজন হয় সেচ দেওয়া হয়। খ) জমিতে যেন জল জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।গ) ৭-৮ দিনের ব্যবধানে গাছে জল দিন, তবে জলের ফ্রিকোয়েন্সি এবং পরিমাণ মাটির ধরন এবং ঋতু অনুযায়ী নির্ভর করে। হালকা মাটিতে ভারী জমি থেকে আরও ঘন ঘন সেচ প্রয়োজন।ঘ) গ্রীষ্মে এটি ৪-৫ দিনের ব্যবধানে পরে শীতকালে দশদিনের ব্যবধানে সেচের প্রয়োজন হয়ঙ) বর্ষাকালে মাটির আর্দ্রতা অনুসারে সেচ দেওয়া উচিত।মুকুল গঠন থেকে ফুল সংগ্রহ পর্যন্ত নিয়মিত জল সেচ বজায় রাখা উচিত।প্রুনিং ও মাটির ব্যবস্থাপনা,ক) রোপণের তিন সপ্তাহ পরে মাটি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিতে হবে এবং তারপর আবার এক সপ্তাহ পরে বা চারা রোপণের এক মাস পরে করতে হবে। খ) গাছের ডালপালা বৃদ্ধি এবং পার্শ্বীয় শাখার বিকাশের জন্য প্রুনিং অনুসরণ করতে হবে।
গ) প্রতিস্থাপনের পরে সাধারণত চল্লিশ দিন ধরে প্রুনিং করা হয় ৷
ঘ) ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৷ ফুল সংগ্রহ,ক) টবে বা জমিতে প্রতিস্থাপনের পরে ফুলগুলি ৪০-৫০ দিন সময় নেয়।খ) জাতের উপর নির্ভর করে পূর্ণ
আকার অর্জন করলে ফুল তোলা হয়।গ) সকাল বেলা ফুল তোলা শ্রেয়। ঘ) ফুল তোলার আগে সেচ দিলে ফুলের মান বৃদ্ধি পায় । চ) নিয়মিত ফুল তোলা এবং শুকনো
ফুল অপসারণ করলে ফলন বাড়ে। ছ) আলগা ফুলগুলি একটি বাঁশের ঝুরিতে প্যাক করা হয় এবং ডাঁটাযুক্ত ফুলগুলি গুছিয়ে বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
জ) একটি গাছ থেকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ফুল পাওয়া যায়। পুষ্পকালীন সময়কাল প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি। টবে গাঁদাফুল চাষ,গাঁদা ফুলের জন্য প্রয়োজন এঁটেল দোআঁশ মাটি। তবে খেয়াল রাখতে হবে মাটিতে যেন কোনওভাবেই না জল জমে থাকে । আফ্রিকান গাঁদা চাষ করার জন্য উপযুক্ত সার দরকার হয়। ছাদেতে বা টবে যেখানে উপযুক্ত সূর্যের আলো পড়ে সেখানে গাঁদা গাছ চাষ করতে হবে। নার্সারি থেকে কোনও ভালো জাতের চারা কিনে আনতে হবে।এটেল দোআঁশ মাটি এক বছরের পচানো গোবর সার, পাতা পচা সার, ভার্মি কম্পোস্ট, কোকোপিট ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে মাটি প্রস্তুত করে রাখুন। দশ ইঞ্চির একটি টব নিতে হবে। টবের নীচে ফুটোর জায়গাটি খোলামকুচি দিয়ে চাপা দিয়ে তার উপরে ছোট ছোট কাঁকড় এবং বালি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। অতিরিক্ত জল সহজে বেরিয়ে যেতে পারে।শীতকালীন গাঁদা ফুল গাছ অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে টবে লাগাতে পারেন। চারা কিনে এনে টবের মাটিতে রোপণ করে বেশ খানিকটা জল দিয়ে দিতে হবে। প্রথম কয়েক দিন চারাকে হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হবে। নিয়ম করে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। আর প্রতিদিন জল দিতে হবে। দশদিন অন্তর অন্তর সরষের খোল পচা জল দিতে হবে।জল ভোরবেলা এবং সন্ধ্যাবেলায় দিতে হবে। প্রচণ্ড রোদে জল দিলে চারার ক্ষতি হতে পারে। টবে গাঁদা ফুল চাষ করলে মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা কেটে দিতে হবে। তাতে গাছ ঝাঁকড়া হবে এবং গাছে বড় বড় ফুল দেখা দেবে। তবে এই গাছে নানান রকম রোগ দেখা যায়। তার মধ্যে একটি অন্যতম হলো গাঁদা ফুলের কাণ্ড পচা রোগ । এর জন্য চারা রোপণের আগে টবের এবং মাটিকে ভালো করে রোদ খাওয়াতে হবে। গাঁদা ফুলের পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। তবে অনেক সময় জমিতে শামুকের আক্রমণ হয়। যা গাছের জন্য ভালো না। এমন হলে জমিতে খানিক চুন ছিটিয়ে রাখুন। এমন নিয়ম মেনে গাঁদা ফুলের চাষ করতে পারলে আশি দিনের মধ্যেই চারা থেকে ফুল পাবেন।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

হৃদরোগে হঠাৎ মৃত্যু: কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…

18 hours ago

প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…

18 hours ago

আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা প্রদ্যোতের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…

19 hours ago

হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…

19 hours ago

সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়!!

নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…

19 hours ago

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

2 days ago