গাধার খাটালে ৫ হাজার টাকা লিটারে বিকোচ্ছে দুধ!!

 গাধার খাটালে ৫ হাজার টাকা লিটারে বিকোচ্ছে দুধ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-তুই একটা গাধা। স্কুলে পড়া বুঝতে না পারলে শিক্ষকের মুখে এমন আদুরে শাসন শোনেনি তেমন ছাত্র কম। কিন্তু, সেই গাধাই যে মা লক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট করতে পারে কে জানত! গুজরাটের পাটন জেলার বছর পঁয়ত্রিশের যুবক ধীরেন সোলাঙ্কি। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে।

ফলে ব্যবসা ধীরেনের রক্তে। গাধার খামার বা খাটাল তৈরি করে এখন দুই হাতে টাকার মন্দিরা বাজাচ্ছেন ধীরেন।শুধু গাধাদের দয়াতেই তার প্রতি মাসে আয় কম-বেশি ৩ লক্ষ টাকা। কী করে? গাধার দুধ বিক্রি করে! ক্রেতা কারা, দামই বা কত? স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে ধীরেন সোলাঙ্কি জানিয়েছেন, অনলাইনে ১ লিটার গাধার দুধ বিক্রি হয় ৫ হাজার টাকায়!

ধীরেন সোলাঙ্কির খাটালে এখন রয়েছে ৪২টি গাধা। তিনি জানান,দক্ষিণের রাজ্যগুলি মূলত গাধার দুধের ক্রেতা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কোনও স্বীকৃতি ছাড়াই কঠোর, পরিশ্রমের রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে গাধার নাম।এ-হেন গাধার
দুধের দাম যে বাকি গবাদি পশুদের
তুলনায় ৭০ গুণ বেশি, ধীরেনও
আগে বুঝতে পারেননি।ধীরেন বলেন, ‘এই ব্যবসা শুরুর আগে
আমি বেশ কিছুদিন চাকরি খুঁজেছি পাইনি। অগত্যা গাধার দুধের ব্যবসা শুরু করি।’এত কিছু থাকতে হঠাৎ গাধার দুধের ব্যবসা? ধীরেন বলেন,এক ব্যবসায়ীর মুখে দক্ষিণ ভারতে গাধা পালনের কথা জানতে পারি। সেই সূত্রে আমি কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসি।এখন আমার এই খামারের বয়স আট মাস।’
ধীরেন জানান, ২০ টি গাধা এবং ২২ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি এই অভিনব ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তার কথায়, ‘শুরুটা কঠিন ছিল। গুজরাটে গাধার দুধের চাহিদা নেই বললেই চলে। তাই প্রথম পাঁচ মাসে প্রায় কিছুই রোজগার করতে পারিনি। এরপর দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখানে গাধার দুধের চাহিদা খুব।’
ধীরেন বর্তমানে মূলত কর্ণাটক ও কেরালায় দুধ সরবরাহ করছেন। তার খদ্দেরদের মধ্যে কয়েকটি প্রসাধনী সংস্থাও রয়েছে। তারা তাদের বিভিন্ন পণ্যে গাধার দুধ ব্যবহার করে। দাম সম্পর্কে ধীরেন বলেন, ‘প্রতি লিটার গাধার দুধের দাম ৫ থেকে ৭ হাজারের মধ্যে।’ দুধ তাজা রাখতে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া দুধ শুকিয়ে গুঁড়ো করেও বিক্রি করা হয়। গাদার গুঁড়ো দুধের দাম কিলোপ্রতি প্রায় লাখ টাকা! ধীরেন জানান, এখনও পর্যন্ত তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও সহায়তা নেননি।তবে তিনি চান সরকার এই খাতে। মনোযোগী হোক।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রাচীনকালে গাধার দুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত তো। ইতিহাসে বর্ণিত, মিশরীয় রানি ক্লিওপেট্রা গাধার দুধ দিয়ে স্নান করতেন।কিছু ঐতিহাসিক বর্ণনায় দাবি করা হয়েছে, প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস যকৃতের সমস্যা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, বিষক্রিয়া, সংক্রামক রাগ এবং জ্বরের জন্য গাধার দুধ যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।তবে আধুনিক যুগে গাধার দুধের চাহিদা বাড়েনি। এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে জোগান কম থাকায় দাম। আকাশছোঁয়া।

আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের একটি প্রতিবেদন। অনুসারে, গাধার দুধের গঠনে গরুর দুধের তুলনায় মানুষের দুধের সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে। এটি শিশুদের। জন্য দারুণ উপকারী, বিশেষত যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের জন্য এটি সেরা বিকল্প।গাধার দুধের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ অঙ্কের।
মাইক্রোফ্লোরা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। এই দুধে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
সর্বোপরি এই দুধ অ্যান্টি ডায়াবেটিক।এছাড়া, গাধার দুধ দীর্ঘ সময় ভাল থাকে। কারণ এতে অন্যান্য দুধে থাকা বেশ কয়েকটি রোগজীবাণু থাকে না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.