গান্ধী-নেহরুতে অ্যালার্জি!!

 গান্ধী-নেহরুতে অ্যালার্জি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কেন্দ্রের শাসক বিজেপির গান্ধী-নেহরুতে বেজায় আপত্তি। কে সুযোগ পেলেই গান্ধী- নেহরুর ইস্যুগুলিকে মুণ্ডুপাত করতে পিছুপা হয় না বিজেপি নেতৃত্ব। সংসদে বক্তৃতার সুযোগ পেলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা অমিত শাহরা নেহরু-গান্ধীর মুণ্ডুপাত করে ছাড়েন। নেহরুর সময়কার ভারতের দেশীয় নীতি, বিদেশ নীতি থেকে শুরু করে ইন্দিরার আমলের জরুরি অবস্থা কোনও ইস্যুতেই বিবৃতি ছাড়েনি বিজেপি। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুর যাবতীয় কাজকর্ম, এমনকী ইন্দিরার কাজকর্মও অপছন্দ বর্তমান বিজেপি সরকারের। একদা বিজেপির সর্বোচ্চ নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী নেহরুর বেজায় প্রশংসা করেছেন এবং ইন্দিরাকে দেবী দুর্গাও বলেছেন তিনি। এদের ইতিহাস থেকে একেবারে নেহরু বা গান্ধীকে মেটাতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক বিজেপি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ ধরনের বহু উদাহরণ রয়েছে যে কেন্দ্রের শাসক বিজেপি নেহরু বা গান্ধীর ইতিহাসকেই মুছে ফেলতে চাইছে। এবার উত্তরাখণ্ডে এমন ঘটনা ঘটেছে যা দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি জগতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত করল। নেহরু-গান্ধী সম্পর্কিত বা তাদের লেখা কোন বই বইমেলায় থাকা চলবে না- এরকম শর্তে বইমেলাই বাতিল করতে হয়। আয়োজক সংস্থা যেখানে একটিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান এরকম স্থানে। বইমেলা বাতিল হয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ঘটনা গত ১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারী। উত্তরাখণ্ডের হেমবতী নন্দনা বহুগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বইমেলা হবার কথা ছিল উক্ত দুইদিন। কিন্তু বাদ সাধে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির হুমকি। এছাড়াও এর সাথে জুড়ে যায় আরও কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তাদের বক্তব্য নেহরু বা গান্ধী সম্পর্কিত বা তাদের লেখা বই বইমেলায় রাখা যাবে না। এই শর্ত জুড়ে দিয়েছে তারা। দফায় দফায় এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসে। কিন্তু সমাধানসূত্র বের হয়নি। এবিভিপির হুমকির মুখে শেষপর্যন্ত বইমেলা বাতিল করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।উত্তরাখণ্ডের হেমবতী নন্দন বহুগুনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু, তাই নয়, এটি একটি নামকরা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যদিও বইমেলা করার উদ্যোগ নিল ক্রিয়েটিভ উত্তরাখণ্ড নামের একটি সংগঠন। গত ১২ বছর ধরে কিতাব কৌতিচ নামে তারা বইমেলার আয়োজন করে থাকে। গত মাসেও শ্রীনগরে বই বইমেলা হুমকির মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে হেমবতী নন্দন বহুগুনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বইমেলার জন্য অনুমতিও নেয় উদ্যোক্তারা। কিন্তু এবিভিপির হুমকির মুখে সেই এই অনুমতি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবিভিপি নেতারা বলে যে, গান্ধী এবং নেহরুর উপর কোনন বই বইমেলায় থাকতে পারবে না। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে সংস্কৃতি জগতকে গভীর চিন্তায় ফেলবে একটি বইমেলায় নেহরু, গান্ধীর বই থাকবে না। এটা কি বইমেলা বাতিলের কোনও কারণ হতে পারে। বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডেন এই ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। বিস্মিত হয়েগে বইপ্রেমীরা। এবিভিপির দাবি ছিল নেহরু-গান্ধীর বই কর্মীর ধর্মী ভাবাবেগকে আঘাত করবে। কিন্তু বইপ্রেমীরা বুঝাতে পারছে না নেহ গান্ধীর বই থাকলে, কী করে তা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। বিজেপি আমলে এ ধরনের নেহরু, গান্ধীর নাম নিয়ে আপত্তি নতুন কোনও ঘটনা নয়। তাদের ইতিহাস বিকৃতি করতে বা মেটাতে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সদাই সচেষ্ট। উত্তরাখণ্ডের বইমেলা বাতিলের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নেহরু গান্ধীকে মেটাতে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলির এই ধরনের প্রচেষ্টা আগামী দিনেও জারি থাকবে এ টা বলাই যায়, যতদিন দিল্লীর বুকে তাদের শাসন থাকবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.