গেরুয়া প্রতীক ধরে রাখাই বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২৭ ফেব্রুয়ারী নাগাল্যান্ড বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হয়তো কুড়িতে কুড়ি নয়, কিন্তু কুড়ির কম কত সেটাই এখন দেখার। এই রাজ্যে বিজেপি এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি বা এনডিপিপির নির্বাচনি প্রচার কংগ্রেসের চোখে “আস্ফালন” লাগলেও এই দলের সাংগঠনিক ভিত্তি অনেকটাই দুর্বল। ইতিমধ্যে একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও মনে করছেন, শাসক বিজেপি ও এনডিপিপি জোটের পাল্লাভারী। এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেতে শাসক জোট উঠেপড়ে লেগেছে। নয়াদিল্লী থেকে বিজেপির হেভিওয়েটরা নাগাল্যান্ডে এসে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। আগামী ২৪ তারিখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডিমাপুর আসার কথা। এই কপি লেখা পর্যন্ত দিল্লী সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্বাচনি সভায় নাগাল্যান্ডের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তথা এনডিপিপির প্রধান নেফিউ রিও উপস্থিত থাকবেন। ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারী আসার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। সফরের দ্বিতীয় দিনে মোকুকচুং শহরে একটি জনসভা করবেন তিনি। তার আগে ডিমাপুরে আজ সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিওর সঙ্গে রোড শো-এ অংশ নেবেন। এক কথায় বিজেপির বর্ণময় ভোট প্রচার নাগাল্যান্ডের ভোটের উত্তাপকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা নাগাল্যান্ডের জন্য দলের যে ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন তাতে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নাগাল্যান্ড কালচারাল রিসার্চ ফান্ড তৈরি করা। এই ফান্ডের জন্য ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারে। নাগা সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য কিফায়ারে ৫০০ কোটি টাকা খরচে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে আদিবাসী উৎসবের ওপরে। এর পাশাপাশি মহিলা ও যুবাদের ক্ষমতায়ন, সুশাসন, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি, কৃষি ও কৃষকদের জন্য কল্যাণমুখী প্রকল্প, আর্থিক উন্নতির জন্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন, পর্যটন ক্ষেত্রে উন্নতির মতো নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে নাগাল্যান্ড সংকল্পপত্রে। শান্তি স্থাপন, বিদ্যুৎ, পর্যটন, ৫ জি সংযোগ, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক কৃষির মতো মোট আটটি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার কথাও জানিয়েছেন নাড্ডা। এর নামকরণ করা হয়েছে “অষ্টলক্ষ্মী”। রাজ্যের মেয়েদের জন্য বিনা খরচায় শিক্ষা প্রদান এবং মেধাবী কলেজ ছাত্রীদের জন্য “সিএম ফ্রি স্কুটি স্কিম” নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবী পড়ুয়াদের হাতে ডিজিটাল ট্যাবলেট তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারে।
ছোট্ট পার্বত্য রাজ্য নাগাল্যান্ডকে নিয়ে কেন গেরুয়া শিবিরে এই তৎপরতা? কেন এই প্রতিশ্রুতির বন্যা ? রাজনৈতিক মহলের মতে, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ভোট বিজেপির কাছে সেমিফাইনাল। আর সেই কারণে এই ছোট রাজ্যে অস্তিত্ব রক্ষা বড় কথা নয়, বরং ভারতের মানচিত্রে “গেরুয়া ছাপ” যেন ফিকে না হয় সেদিকে নজর দিতে হচ্ছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে ২০২৩ সালেই ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মিজোরামের মতো রাজ্যগুলির নির্বাচন। মিজোরাম বাদে অন্য রাজ্যগুলিতে বিজেপি কেমন ফল করবে তা সময় বলবে। আবার অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ অর্থাৎ বাংলা, বিহার, ওড়িশার মতো পূর্বাঞ্চলের কোনও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় নেই। ঝাড়খণ্ডের নামও এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে। একই অবস্থা দাক্ষিণাত্যে। কর্ণাটক বাদে বিজেপি কোনও রাজ্যে ক্ষমতায় নেই। উত্তর ভারত, পশ্চিম ভারতে বিজেপির উপস্থিতি আছে। সেজন্য কোনো ঝুঁকি না নিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলে দলের সংগঠনকে আরও বাড়াতে তৎপর বিজেপির শীর্ষ নেতারা। গেরুয়া ছাপকে আরও গাঢ় করার কৌশল। ২০১৮ সালের নাগাল্যান্ড বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকানো যাক। সেবছর নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি বা এনডিপিপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করে বিজেপি। উদ্দেশ্য একটাই, এনডিএ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন। সেবার ১৮টি আসনে জয়ী হয়ে এনডিপিপি । ১২টি আসনে জয়ী হয়ে বিজেপি। এনডিপিপিতে শামিল হয় এনপিপির দুই বিধায়ক এবং জেডিইউ-এর এক বিধায়ক। ফলে সরকার গঠনে বেগ পেতে হয়নি বিজেপিকে। মুখ্যমন্ত্রী হন এনডিপিপি প্রধান নেইফিউ রিও। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২৬টি আসনে জয়ী হয়েও সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় নাগা পিপলস ফ্রন্ট বা এনপিএফ। ৩৮.৮ শতাংশ ভোট পায় এই আঞ্চলিক দলটি। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ২০ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে এনডিপিপিতে যোগ দেন এনপিএফ নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং। যদিও ২০২১ সালেই সরকারে যোগ দেন জেলিয়াং। ফলে এনপিএফের বিধায়ক সংখ্যা এখন মাত্র ৪ জন।
২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই এনডিপিপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে বিজেপি। ৬০টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এনডিপিপি। বাকি ২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি। নেইফিউ রিওকে সঙ্গে নিয়েই প্রচারে নেমেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। রাজ্যের জনজাতি সম্প্রদায়ের মন পেতে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
পাল্টা একাধিক ইস্যুকে সামনে রেখে ময়দানে নেমেছে কংগ্রেস এবং এনপিএফ। তাদের দাবি, রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা মিটিয়ে ফেলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি তা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ডের জন্য আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলেছে ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন বা ইএনপিও। ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছে তারা। রাজ্যের বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে প্রচারে নেমেছে জনতা দল ইউনাইটেড। তাদের দাবি, রাজ্যের ৯০ হাজার বেকার এখনও বেকার।
বিরোধীদের এসব দাবিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। তাদের দাবি, ২০১৮ সালে এনডিএ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে অনেক উন্নয়নমুখী কাজ হয়েছে। নাগাল্যান্ডের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে উন্নতিসাধন হয়েছে। নাগাল্যান্ডের উন্নয়নমুখী কাজ তুলে ধরে স্বল্প সময়ের একটি ভিডিও তৈরি করেছে বিজেপি। স্লোগান “মোদি ফর পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট”। এবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ১৮৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নাগাল্যান্ড বিধানসভা নির্বাচনে। ২৩ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। গতবারের জয়ী ৪ জন বিধায়ক সহ এবার ২২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এনপিএফ। এছাড়া সিপিআই, এনসিপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, লোক জনশক্তি পার্টির মতো দলগুলি বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ২০১১ সালের গণনা অনুযায়ী এই রাজ্যের জনসংখ্যা ১৯,৮০,৬০২। নাগাল্যান্ডের বড় অংশের বাসিন্দা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। শেষ গণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যে ১৭ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬৫১ জন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। হিন্দু রয়েছেন ৮.৭৫ শতাংশ। এছাড়া রয়েছেন ১৭টি জনজাতি সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। বিজেপির দাবি, বিগত পাঁচ বছরের উন্নয়নের নিরিখে বিজেপি-এনডিপিপি জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, রাজ্যের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে। শেষ হাসি কে হাসবে তা বোঝা যাবে ২ মার্চ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

23 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

23 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago