গ্যাংটকে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক বিদ্যুৎমন্ত্রী সম্মেলনে,প্রশংসিত ত্রিপুরা, পরিকাঠামো উন্নয়নে আশ্বাস কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর!!


অনলাইন প্রতিনিধি :-দেশের বিদ্যুৎ খাতে আমূল রূপান্তরের ধারায় ত্রিপুরা আবারও নিজেদের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ত্রিপুরা এবার জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে স্মার্ট মিটার ব্যবস্থাপনা এবং সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য। স্মার্ট মিটার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে, যা গোটা দেশের মধ্যে রাজ্যের অবস্থান তৃতীয় স্থানে। শনিবার গ্যাংটকে অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির বিদ্যুৎমন্ত্রীদের সম্মেলনে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের ভূমিকাও প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথের নেতৃত্বেরও এ দিন প্রশংসা করেছেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎমন্ত্রীরা।এমনকী কেন্দ্রীয় মনোহরলাল খট্টরও বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনবাবুর কার্যকারিতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ ও আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্ররম সিং তামাং এবং উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীরা।ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ দপ্তরের অতিরিক্ত বিশ্বজিৎ বসু, অর্থ অধিকর্তা সর্বজিৎ সিং ডোগরা এবং বিদ্যুৎ পরিবহণ নিগমের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দেববর্মা।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক ‘সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে রতনলাল নাথ রাজ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ খাতে ‘রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম (আরডিএসএস)-এর অধীনে গৃহীত প্রকল্পসমূহ এবং তার সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ত্রিপুরা এং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে প্রথম এবং সারা দেশে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আরডিএসএস-এর অগ্রগতির ভিত্তিতে। এই অর্জনের জন্য তিনি রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর, বিদ্যুৎ নিগম এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘ত্রিপুরার বিদ্যুৎ খাতে এই সাফল্য কোনও আকস্মিক ঘটনা নয় এটি পরিকল্পিত নীতিমালা, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং অদম্য প্রয়াসের ফসল।’ তিনি জানান, রাজ্যে এটি অ্যান্ড সি ক্ষতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা দক্ষ ব্যবস্থাপনারই প্রমাণ।
শ্রীনাথ ত্রিপুরার স্মার্ট মিটার স্থাপন সংক্রান্ত সাফল্য নিয়েও তথ্য তুলে ধরেন। রাজ্য বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে প্রথম এবং গোটা দেশে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্মার্ট মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে। স্মার্ট এবং প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থার সম্প্রসারণে ত্রিপুরা এগিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মনোহরলাল ত্রিপুরার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘ত্রিপুরা অন্য রাজ্যগুলোর জন্য এক অনুকরণীয় উদাহরণ তৈরি করেছে।’ শ্রীনাথ এই সম্মেলনকে ‘ঐতিহাসিক এবং জনমুখী পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি পর্যালোচনার মতো উদ্যোগ একমাত্র একটি জনবান্ধন সরকারই নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লালের যৌথ নেতৃত্বে যে দৃষ্টিভঙ্গি আজকের ভারতে বিদ্যুৎ খাতকে নতুন রূপ দিচ্ছে, তা নজিরবিহীন’ তিনি জানান, ত্রিপুরায় গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ প্রয়োজন ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, অথচ বর্তমানে রাজ্যে ৩৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সুরক্ষিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যান্ত্রিক বিভ্রাট ছাড়া লোডশেডিংয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শ্রীনাথ বলেন, ‘যতটা সম্ভব স্বনির্ভরতা অর্জন করতে চাই আমরা। তবে আমাদের মতো সীমিত সম্পদসম্পন্ন রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রের সার্বিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।’ ত্রিপুরা বিদ্যুৎ পরিবহণ লিমিটেডের পক্ষ থেকে ‘সম্মেলনে ১৩৩১.২৬ কোটি টাকার এক বিশাল প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়, যা কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (সিইএ) ২০৩১-৩২ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য “সুপারিশ করেছে।
রতনলাল নাথ সৌরশক্তির ক্ষেত্রেও ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ ‘করেন।তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল নয়, আমরা বিকল্প এবং পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকেও অগ্রসর হচ্ছি। রাজ্যে সৌরশক্তিরকে গুরুত্ব দিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প শুরু হয়েছে যা ভবিষ্যতে কার্বণ নির্গমন হ্রাস এবং সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’

কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মনোহরলাল এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, ‘ত্রিপুরা ভারতের টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে।’
সম্মেলনে মন্ত্রী রতনলাল নাথ বিদ্যুৎখাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার একটি স্বচ্ছ ও সুসংবদ্ধ বিশ্লেষণ তিনি প্রদান করেন। তিনি বলেন,আমরা শুধু স্বনির্ভর বিদ্যুৎ খাত গড়ে তোলার দিশায় এগোচ্ছি না, বরং একটি স্মার্ট সবুজ এবং দুর্যোগ প্রতিরোধ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।’ তিনি আরও বলেন,
-‘কেন্দ্রের ২৪×৭ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যপূরণে ত্রিপুরা সর্বদা শামিল থাকবে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সঠিক নীতি এবং প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান- এই তিনটি স্তম্ভের উপর আমাদের ভবিষ্যৎ দৃষ্টি স্থাপিত’ গ্যাংটকে অনুষ্ঠিত উত্তর– পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ সম্মেলন শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক বৈঠক ছিল না এটি ছিল দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় ও আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।