বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
ঘৃণা-পর্যবেক্ষণ

ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দিন যত যাচ্ছে ততই উদ্বেগের মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর এই নিয়েই শঙ্কিত দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিমকোর্ট।গত বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে ভিন্ন ধর্ম, জাতপাত,ভাষা,খাদ্য এমনকি আচার-আচরণ নিয়ে দেদার আক্রমণ,ব্যক্তিগত নিশানা এমনকি হিংসা ছড়ানোর লক্ষ্যে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার একাধিক অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কখনই এই নিয়ে কোনও কঠোর ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গৃহীত হয় নি। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে যখন ঘৃণা ভাষণের প্রবণতা দেশের বিভিন্ন স্থানে বেলাগামভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন বছর দুই আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই নিয়ে অসন্তোষ ও উদ্বেগের কথা প্রকাশ্যে আনলেন।কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই সম্পর্কিত বিষয়ে উদ্বেগ ও নজরদারি সত্ত্বেও ঘৃণা ভাষণের পায়ে বেড়ি পরানো যায়নি। মূলত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের আলটপকা মন্তব্য এবং ঘৃণা ভাষণ সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ভারতে যে মাত্রায় বিষ ছড়িয়েছে অতীতে তা দেখা যায়নি। সর্বোচ্চ আদালত এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের একাধিক ঘৃণা ভাষণ মামলায় অভিযুক্তদের সতর্ক করেছে ব্যবস্থার কথা বলেছে।কিন্তু এই ব্যাধি সমাজে আরও জাঁকিয়ে বসেছে। এই প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে ঘৃণা ভাষণ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিকালে মাননীয় শীর্ষ আদালত এই কথাও বলেছেন যে, রাজনীতি এবং ধর্মকে যেদিন আলাদা করা যাবে এবং রাজনীতিকরা যেদিন ধর্মের রাজনীতি করা বন্ধ করবেন সেদিন নিজে থেকেই ঘৃণা ভাষণ থেমে যাবে।শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আদালতের আরও বক্তব্য ছিল, ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মতো সুবক্তারা যখন ভাষণ দিতেন, তখন রাত যতই গভীর হোক না কেন মানুষ গ্রাম থেকে সেই ভাষণ শুনতে ছুটে আসতেন। আর আজ সেই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।এখন প্রশ্ন হলো কোন্ ধরনের ভাষণকে ঘৃণা ভাষণ হিসাবে করা যাবে? উত্তর হল- ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে এই ব্যাপারে পরিষ্কার বলা আছে একজন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সম্প্রদায়, বাসস্থান, জন্মস্থান ইত্যাদি নিয়ে অসম্মান করা হলে তাকেই ঘৃণা ভাষণ হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে। ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৫৩ ‘এ’ ধারায় নাগরিকদের এই ধরনের ক্ষেত্রে ঘৃণা ভাষণ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধে দোষী ব্যক্তির ৫ বছর পর্যন্ত কারাবাসের সংস্থান রয়েছে। ঘৃণা ভাষণ নিয়ে গত ক’বছর ধরেই দেশে তুমুল হইচই চললেও গত বছর উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লীতে ঘৃণা ভাষণ সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা শুনানির সময় সুপ্রিমকোর্ট বেশ কিছু কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছিলেন। ঘৃণা ভাষণ সংক্রান্ত অনেকগুলো অভিযোগের একটি ছিল হরিদ্বারে অনুষ্ঠিত সাধুদের একটি ধর্ম সম্মেলনের বক্তব্য থেকে। এই ঘটনাগুলো নিয়েই সুপ্রিমকোর্টে জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা দায়ের করেছিলেন জনৈক সাংবাদিক।সেই মামলার শুনানির সময় গত অক্টোবর মাসে দেশের শীর্ষ আদালত দিল্লীচ উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সরকারকে ঘৃণা ভাষণ বন্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিল। কিন্তু ৬ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।এবার শীর্ষ আদালতের দরজায় ফের কড়া নাড়তেই, ঘৃণা ভাষণ নিয়ে গোটা দেশের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কতটি মামলা দায়ের হয়েছে তার রিপোর্ট তলব করলো সুপ্রিমকোর্ট।সেই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ,গোটা দেশেই ঘৃণা ভাষণের ঘটনা ঘটলে এবং কোনও অভিযোগ জমা না পড়লেও রাজ্য প্রশাসনকে এখন থেকে স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর নিতে হবে। আর যদি তা না করা হয় তবে সেটাকে আদালত অবমাননা হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে দেশে প্রশাসনের এই দুর্বলতা এবং রাজনীতির সামনে নতজান য়ে পড়ার প্রবণতা কোন্ স্তরে গিয়ে দাঁড়ালে সর্বোচ্চ আদালতকে এই নির্দেশিকা জারি করতে হয় সেটাই দেশবাসীর সামনে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সুপ্রিমকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।