জাতিদাঙ্গা এই উপমহাদেশের ভবিতব্য। জাতিদাঙ্গায় দেশভাগ জা জান্তাবী হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু দেশ ভাগের পরেও কি থামিয়াছে ঘৃণ্য ভাষণ, উগ্র প্রচার ? বরং আমাদিগকে আরও খণ্ড বিখণ্ড করিবার বাসনা যেন দিনে দিনে উদগ্র হইতেছে। বাংলার মানুষের এই উৎসবের কালে এই কথাগুলি অধিক মনে পড়ে কারণ বড় বাংলার বাঙালিরা ঘরপোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘ দেখিলেই মনে পড়িয়া যায় আগুনের কথা। অনেকাংশে পরিস্থিতি এমন যে পার্বণ আসিলেই মনে আশঙ্কা জমিতে থাকে, আবার না কোনও আপদ আসিয়া হাজির হয়! গেল দুর্গোৎসবের সময়ে বাংলাদেশে হনুমানের মূর্তির পায়ে বা গায়ে কোরান রাখিয়া গিয়াছিল কোনও দুষ্টচক্র। এই লইয়া বাঙালি হিন্দুর পূজা বিঘ্নিত হয়। এইবার পূজা আসিবার আগে সেই আশঙ্কায় শঙ্কিত ছিল বাংলাদেশের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ।
নাগরিক সমাজ ছিল সচেতন। দেশ ভাগের আগেকার কথা বলিলে, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার সঙ্গে লেপ্টাইয়া থাকে নোয়াখালি দাঙ্গার দুঃখ স্মৃতি। সেই সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে যখন শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি চলিতেছিল, ছিল উৎসবের পরিবেশ তখনই সূচনা হয় দাঙ্গার, যাহা পরবর্তীতে জাতিদাঙ্গার রূপ লইয়া অবিভক্ত ভারত ভূখণ্ডের রাজনৈতিক বিভাজনের এজেণ্ডার সঙ্গে যুক্ত হইয়া যায়। নোয়াখালি দাঙ্গার নানান বিশ্লেষণ রহিয়াছে। বাংলাদেশে সেইসময় মন্বন্তর অবস্থা চলিতেছিল। প্রকৃতিগত না যতটা তাহার চাইতে অধিক ছিল মনুষ্যসৃষ্ট মন্বন্তর। খুব ছোট অংশের মানুষের হাতেই টাকাকড়ি ছিল। সিংহভাগ মানুষের ঘরে চুলা জ্বলিতেছে না। নিরন্ন অসহায় বিশাল অংশের মানুষ এক সন্ধ্যায় দেখিলেন কাহারও কাহারও ঘরে উৎসব আয়োজন চলিতেছে।
সেইসকল ঘর ছিল বিত্তবানের, জমিদারের।মানুষ সেইসকল আয়োজনের উপর হামলাইয়া পড়ে। সূচনা ছিল ক্ষুধাকেন্দ্রিক। তাই আক্রমণ হইল বাছিয়া বাছিয়া জমিদার, ভূস্বামীদের গৃহে। সেইসময়ে নোয়াখালির ভূস্বামী স্বচ্ছল মানুষেরা অধিকাংশই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। আর কৃষিক্ষেত্রে যাহারা শ্রম দিয়া দিনাতিপাত করিতেন তাহাদের সিংহভাগ ছিলেন মুসলমান ধর্মাবলম্বী। ফলে এই হিংসার ঘটনাকে ধর্মীয় জাতিগত রূপ দিতে কাহারও কোনও অসুবিধা হয় নাই। যে হামলা ছিল ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে ক্ষুধার্ত মানুষের, তাহাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের জেহাদ বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়া যায়। সাধারণ, গরিব হিন্দুরাও জাতিদাঙ্গার শিকার হইয়া যায়। নৃশংসতা সীমা ছাড়ায়। দেশের নানা প্রান্তেই তখন দাঙ্গা আর ঘৃণা ছড়িতেছিল। যেখানেই সেই ধরনের পরিস্থিতি আসিতেছে, ছুটিয়া যাইতেছেন মহাত্মা গান্ধী ও তাহার অনুগামীরা।
কিন্তু প্রেমের বার্তার চাইতে ঘৃণার আগুন চিরকালই অধিক শক্তিশালী। মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনি নাইডু প্রমুখেরা সেইদিন নোয়াখালিতেও ছুটিয়া আসিয়াছিলেন। আগুন থামিলেও এজেণ্ডা ততদিনে স্থির হইয়া যায়। স্থির হইয়া যায় এই বাংলা আর গোটা দেশের ভবিতব্য। মহাত্মা গান্ধী বেশিদিন নোয়াখালিতে থাকিতে পারিলেন না। কারণ বিহারে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হইয়া গিয়াছিল। বাংলা ছাড়িয়া বিহারে ছুটিতে হইল তাহাকে। এর পরের ইতিহাস আমরা সকলেই জানি। দেশ ভাগ দিয়া মধ্যরাতের যে স্বাধীনতা আমরা পাইয়াছিলাম তাহার বয়স আজ ৭৫ বৎসর। এই অমৃতবর্ষে দাড়াইয়া আমরা যদি পেছনে ফিরিয়া তাকাই তাহা হইলে দেখিতে পাই এই দেশে দাঙ্গার ইতিহাস অতি বিশাল। এমন বছর কমই আছে, যে বছরে এই দেশের কোথাও না কোথাও জাতিগত ছোটবড় দাঙ্গাহাঙ্গামা হয় নাই।
স্বাধীনতার পর প্রায় সকল দাঙ্গার ক্ষেত্রেই প্রকাশ্যভাবে ঘৃণা ছড়ানো হইয়া থাকে আগে হইতে। যখন দাঙ্গা হয় পরিকল্পিতভাবে তখন একসময় দাঙ্গা থামিয়া গেলেও দোষী ব্যক্তি থাকিয়া যায় শাস্তির বাইরে। আমাদের দেশে সর্বশেষ বৃহৎ দাঙ্গা ছিল ২০২০ সালে উত্তরপূর্ব দিল্লীর দাঙ্গা। এই ঘটনায় পুলিশ একাধিক মামলা লইয়াছিল। বিচারক সেইসকল মামলার রায় দিতে গিয়া রাতারাতি বদলি হইয়াছিলেন। দোষী প্রকাশ্য ও চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু ঘটনা ছিল পরিকল্পিত তাই শাস্তি তেমন কাহারোই হয় নাই।সম্প্রতি ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের এক অরাজনৈতিক সংগঠন “কনস্টিটিউশনাল কণ্ডাক্ট গ্রুপ” দিল্লী দাঙ্গার তদন্তে যে নাগরিক কমিটি গঠন করিয়াছিল তাহার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে আনা হইয়াছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, দিল্লীর দাঙ্গা আচমকা ঘটে নাই। ঘটানো হইয়াছিল।
দিনের পর দিন ধরিয়া বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী নেতাদের ঘৃণা ভাষণ, কয়েকটি বেসরকারী টেলিভিশনের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমের উগ্র প্রচার ও পুলিশ ও সরকারের ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তা এই রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার কারণ। এই নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুর। তাহারা বলিয়াছেন, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা গিয়াছে দাঙ্গার সময়ে। দাঙ্গা বন্ধের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক অনীহার পাশাপাশি একশ্রেণীর সংবাদমাধ্যমেরও সমালোচনা করা হইয়াছে। কারণ সেইসময়ে সিএএর বিরুদ্ধে সারা দেশে যে স্বতঃস্ফূর্ত বিরোধ দেখা গিয়াছিল, একশ্রেণীর মিডিয়া তাহাকে হিন্দু মুসলমানের লড়াই বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছিল।
অনলাইন প্রতিনিধি :-পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাঙালিরা। বাঙালির ১২ মাসের ১৩ পার্বণের…
গুজরাটে কংগ্রেসের সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে নয়া স্ট্র্যাটেজি নেওয়া হয়েছে।কংগ্রেস এখন থেকে পিছিয়ে পড়া বিশেষ করে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-জিবি হাসপাতালে ক্যান্টিনের ঘর ভাড়া দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা না মিটিয়ে দিয়ে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-৩০ দিন অতিক্রান্ত।কিন্তু তেলেঙ্গনার সেই সুড়ঙ্গ নিয়ে কাটছে না জট।তারই মধ্যে আবার সুড়ঙ্গ…
ডায়াবেটিসকে বলা হয় মাদার অব ডিজিজ।কারণ এই রোগের হাত ধরে শরীরে আরও অনেক স্বাস্থ্য জটিলতা…
অবিভক্ত ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্যের শাসনামলে যিনি সবচেয়ে অ প্রভাবশালী শাসক হিসাবে ইতিহাসে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি…