চক্রবৃদ্ধি হারে মশা!!

 চক্রবৃদ্ধি হারে মশা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ব্যাঙ্কের ঋণের সুদের জালে ঋণগ্রহীতার যেমন দফারফা হয়, ঠিক একইভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে মশার বিস্তার রাজধানী আগরতলাবাসীকে এক অসহনীয় যন্ত্রণার দিকে নিয়ে চলেছে।মশা নিয়ে আগরতলাবাসীর অভিযোগ-আক্ষেপ নতুন নয়। কিন্তু বছরের পর বছর পরিস্থিতি যে ভয়ানক রূপ নিয়ে এগিয়ে চলেছে তাতে এই শহরে পুর নিগমের অস্তিত্ব এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে সংশয় ও প্রশ্ন জন্মাচ্ছে।এতদিন সূর্য ডোবার পর রাজধানী শহরের যে কোনও জনপদে খোলা স্থানে দাঁড়ালেই মাথার উপর ঝাঁক বেধে বৃত্তাকারে উড়তে থাকত মশা। আর এখন সকাল সন্ধ্যা দিনের চব্বিশ ঘন্টাই ভয়ানক রূপ নিয়ে মশার হামলার চলছে বাড়িঘরে- রাস্তায়- বাজারে-কর্মস্থলে এমন কী চলমান গাড়িতেও।এই রাজধানী শহরে এমন কোনও এলাকা নেই যে এলাকাকে মশকমুক্ত অঞ্চল বলে চিহ্নিত করা যায়।অভিজ্ঞতা বলছে, এতকাল মূলত বাড়িঘরের নীচতলাতেই মশার যন্ত্রণা বেশি অনুভূত হতো।কিন্তু এই মুহূর্তে মশার অত্যাচার এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে বহুতল ভবনের তিন চারতলা ফ্ল্যাটে পর্যন্ত জানালা কিংবা করিডরে,বারান্দাতে নেট লাগাতে হচ্ছে।এই মশার যন্ত্রণা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ ছড়াচ্ছে, মশাবাহিত রোগ,যেমন ম্যালেরিয়া,ডেঙ্গু কিংবা চিকনগুনিয়ার মতো জটিল এবং প্রাণঘাতী রোগের কারণে।

মশার হাত থেকে নিস্তার পেতে মশারি, স্প্রে, মশার কয়েল,ইলেকট্রিক ব্যাট সহ হাজার উপকরণ কাজে লাগিয়েও কোনও ফল হচ্ছে না।বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরীখে বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ হল আগরতলা শহরে মশার বংশবিস্তার রোধ করতে পুর নিগম,স্বাস্থ্য দপ্তর, ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণ কর্মসূচি কিংবা নগরোন্নয়ন দপ্তর কারোর ভূমিকাই সদর্থক এবং প্রশ্নাতীত নয়। আগরতলা শহরের বেশিরভাগ এলাকাতেই নালা-নর্দমা,ডোবা, নির্মাণাধীন ভবনের রিজার্ভারের জমে থাকা জলে মশা বংশবিস্তার করছে।মশা নির্মূলীকরণ কর্মসূচিতে পুর নিগম থেকে শুরু করে সবাই বড় বড় প্রচার আর উদ্যোগ ও কর্মসূচির কথা মুখে বলে বেড়ালেও বাস্তবে তেমনটা মানুষ দেখতে পাচ্ছেন না।

বদ্ধ জলাশয় সহ ব্যক্তিমালিকানাধীন বহু জায়গা এই শহরের উপর পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে।যেখানে নির্মাণ কাজ হচ্ছে না।এই জায়গাগুলো আগাছায় ভরে মশার সূতিকাগৃহ তৈরি করছে। এমনকি কালে ভদ্রে পুর নিগম কর্মীদের নালা-নর্দমায় অ্যান্টি লার্ভা স্প্রে করতে দেখা গেলেও এর কোনও সুফল মানুষ দেখতে পাচ্ছেন না।নালা-নর্দমা এবং ড্রেনের জল যেন জমে না থেকে প্রবাহিত হয়- সেই উদ্যোগ নিতে কখনো সখনো দেখা গেলেও সর্বত্র সমানভাবে সেটা কার্যকরী করা হচ্ছে না। মশার লার্ভা ধ্বংস করতে মাঝে মধ্যে ড্রেনে-নর্দমায় সকালে তরল অষুধ ছিটানো হচ্ছে।আর বিকালে ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মন্ত্রী আবাস এলাকায় কিংবা বিশেষ কিছু অভিজাত এলাকায় তা প্রয়োগ করা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে সেই কাজ হচ্ছে না।ফলে বিচ্ছিন্নভাবে অষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর যেমন উদ্যোগ নেই।তেমনি মশার অষুধগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কোন্ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ প্রয়োজন সেই বিষয়েও গবেষণা জরুরি।অথচ দুর্ভাগ্যের হলো,আগরতলা পুর নিগম,এলাকা পুনর্বিন্যাস করে ৫১ টি ওয়ার্ড নিয়ে নতুন এলাকা সংযুক্ত করে বৃহত্তর আগরতলা গঠন করলেও, নির্বাচিত হওয়ার দুই বছর বাদেও সুস্থ স্বাচ্ছন্দ্যময় নগর সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।এখানেই আগরতলা পুর নিগমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।একদিকে বর্ষার মরশুমে আগরতলাবাসীকে প্রতিবছর জলডুবির মুখে পড়তে হয়।গোটা বছর জুড়ে স্বচ্ছ পানীয় জলের নিরাপদ ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে করতে
পারেনি প্রশাসন।অথচ পুরবাসীর ঘাড়ে পুর করের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলেও বেঁচে থাকার জন্য যে নূনতম পরিষেবা তার
কিছুই নাগরিকদের জুটছে না।জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রে নাগরিকের সুরক্ষার জন্য সরকার ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলো যে ন্যূনতম দায়িত্ব
থাকা দরকার সেগুলো সঠিকভাবে এই রাজ্যে পুর নিগম কিংবা নগরোন্নয়ন দপ্তর আদৌ কতটা পালন করছে সেটা অবশ্যই বড়
জিজ্ঞাস্যা।ডবল ইঞ্জিনের সরকার- সবকা সাথ, সবকা বিকাশ,মুখে মুখে প্রচারের ফানুস উড়ালেও বাস্তব কিন্তু ভিন্ন কথাই বলছে।রাজ্যে-
বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার তার শাসনকালের ৬ বছর ইতিমধ্যেই পূর্ণ করেছে।কিন্তু আর দশটা আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করা দূরের কথা,সামান্য মশার অস্বাভাবিক যন্ত্রণা থেকে রাজধানীবাসীকে রক্ষা
করতে পারছে না-এরচেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছুই হতে পারে না।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী আগরতলায় মশার মিছিল রুখতে পুর নিগমের ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিতে ত্রুটি।
মশা নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত সময় হলো যখন মশা কম থাকে। অথচ সেই সময় হাত গুটিয়ে বসে থাকে নিগম।আর যখন মশা বেড়ে যায় তখন লোক দেখানো ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কিছু দৌড়ঝাপ করেই দায়িত্ব খালাস করেন তারা।এতে করেই আজ ভয়াবহ আকার নিয়েছে আগরতলার মশার তাণ্ডব।মশা মারার জন্য অষুধ প্রয়োগ পদ্ধতি সঠিক নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। নিরন্তর ও ধারাবাহিক এই কাজটি না করে মাঝে মধ্যে কীটনাশক এবং অ্যান্টি লার্ভা প্রয়োগের ফলে মশার দেহে
এর সহ্য ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এখন আর মশা মরছে না। তাছাড়া একেক স্থানে মশার জন্য একেক ধরনের অষুধ ও কীটনাশক ব্যবহার
করতে হয়।যা এই শহরে হচ্ছে না।এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে
আগরতলা পুর নিগমের দিবানিদ্রা কবে ভাঙবে সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.