চতুর্থ অর্থনীতির ভারত!!

১জানুয়ারী ২০১৫,কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে ‘নীতি আয়োগ’ গঠিত হয়েছিল।দেশের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নরদের নিয়ে নীতি আয়োগের পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল।পরবর্তীকালে গত ২০২১ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রি পরিষদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তি মূলে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। নীতি আয়োগ গঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দশটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ অর্থাৎ দশম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল ২৪ মে ২০২৫ ইং তারিখে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নীতি আয়োগের দশম বৈঠকের আলোচ্য বিষয়, প্রধানমন্ত্রী কোন কোন বিষয়গুলিতে সবথেকে বেশি জোর দিয়েছেন এবং আলোকপাত করেছেন, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির পক্ষ থেকে কীকী দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় ইতিমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে গেছে। ফলে দেশবাসীও বৈঠকের নির্যাস সম্পর্কে কমবেশি অবগত হয়ে গেছেন, এইটুকু বলা যেতেই পারে। ফলে এসব নিয়ে বিশদ আলোচনার আর কোনোও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
তবে একটা বিষয়ে আলোকপাত অবশ্যই করতে হবে।আর সেটা হলো দেশের অর্থনীতি।শনিবার দিল্লীতে অনুষ্ঠিত নীতি আয়োগের দশম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকশেষে নীতি আয়োগেগর সিইও বিডিআর সুব্রহ্মণ্যম যে কথাগুলো বলেছেন, তা প্রতিটি ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত খুশির এবং গর্বেরও বটে।সুব্রহ্মণ্যমের বক্তব্যের নির্যাস হলো, বিশাল গতিতে ছুটছে ভারতীয় অর্থনীতি। এবার জাপানকে টপকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। অর্থাৎ ভারত এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। এমনটাই জানিয়েছেন নীতি আয়োগের সিইও সুব্রহ্মণ্যম। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, চার ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে দাঁড়িয়ে আমরা। এখন ভারতের থেকে শুধুমাত্র আমেরিকা, চিন ও জার্মানি অর্থনীতিতে বড়। আমেরিকা প্রথম, দ্বিতীয় চিন এবং তৃতীয় অর্থনীতি হচ্ছে জার্মানি। সুব্রহ্মণ্যমের দাবি, আমরা যদি পরিকল্পনামাফিক চলি, তবে আগাম আড়াই-তিন বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীততে পরিণত হবে।এখানে উল্লেখ করার বিষয় হলো,২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন ভারত ছিল বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২৪ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে পরিণত হয়। সেখান থেকে আরও একধাপ এগিয়ে ভারত এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পৌঁছেছে। গত দশ-এগারো বছর ভারত যে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, এ নিয়ে সন্দেহের কোনোও অবকাশ নেই। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, গত বছর অর্থাৎ নীতি আয়োগের নবম বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, এখন সরকার এবং সকল দেশবাসীর সম্মিলিত লক্ষ্য হলো বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া। নবম নীতি আয়োগের বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, গত দশ বছরে আমাদের দেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমদানিনির্ভর দেশ থেকে ভারত এখন রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিরক্ষা, মহাকাশ, স্টার্ট আপ সহ আরও একাধিক ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বমঞ্চে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরের বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্ট ও পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে,২০২৫ অর্থাৎ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারতের অর্থনীতি অভাবনীয় এবং চমকপ্রদ গতি অর্জন করেছে, যা বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতির নীতি নির্ধারকদেরও চমকে দিয়েছে। এপ্রিল মাসে ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) আদায় দাঁড়িয়েছে ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী মাস ও বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। শুধু তাই নয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে যেভাবে শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং তা নিয়ে বিশ্বের নানা দেশে অস্থিরতা চলছে, তার মাঝে ভারতের এই সাফল্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা। আগামীতে ভারতীয় অর্থনীতি আরও উপরের দিকে উঠবে বলে ইতিমধ্যে দাবি করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক, আইএমএফ সহ বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক সংস্থা। প্রতিটি ভারতবাসীও মনেপ্রাণে প্রত্যাশা করেন যে দেশের এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এবং ভারত খুব শীঘ্রই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।