চন্দ্রযানের ‘পালক স্পর্শ’ অবতরণের দায়িত্বে এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে তৃতীয় মিশনে নামবে ইসরো। এবার চন্দ্রযান-৩ প্রস্তুত করা হচ্ছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আঁধার পিঠে নামানোর জন্য। ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবন জানান, এবার ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করাতেই ত্বপূর্ণ হবে। কোনও ভুল আর করা চলবে না। তাই সমস্ত দিক চিন্তাভাবনা – এই করে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এবার চন্দ্রাভিযানে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অবতরণ করার আগে এখন বিশেষ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে চাঁদের বুকে নামার অপেক্ষায় থাকবে চন্দ্রযান। সে জন্য থাকবে একাধিক থ্রাস্টার বা কম্পনরোধী স্পাইক। তার সাহায্যেই চাঁদের বুকে নামবে চন্দ্রযান।গতবার যেমন মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছিল বিক্রমকে। এবার যাতে সেই পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সুসংহত পরিকল্পনা করছে ইসরো। আর এ ব্যাপারে তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। চন্দ্রাভিযানের আগে এমন পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে যে, অবতরণ স্থলের ছবি সংগ্রহ করা হবে আগে থেকে। যাতে অবতরণস্থ থেকে সরে এলে বড় কোনও সমস্যা না হয়, সেটাও দেখা হবে। এই ইমেজিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ইলেকট্রবনিক্স আন্ডা টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সায়ন চট্টোপাধ্যায়। শুধু চন্দ্রাভিযানের ক্ষেত্রে নয়, ইসরোর একাধিক প্রকল্পের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে যাদবপুর।কী ভাবে অবতরণ হবে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন যাদবপু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অমিতাভ গুপ্ত৷ তিনি জানান, এই প্রযুক্তির নাম ‘‘হোভারিং” টেকনোলজি। অর্থাৎ, নীচে নামার আগে মহাকাশযানটি চিলের মতো একটি জায়গায় স্থির হয়ে তে অবতরণস্থলটিকে দেখতে পারবে। তার পর পরিস্থিতি বুঝে ‘থ্রাস্টার’- এর মাধ্যমে নিজেকে সোজা রেখে যাদ ছে নীচে নেমে আসবে। তারা এই অবতরণের একটি পরিস্থিতি (রিয়েল টাইম সিমুলেশন) তৈরি করছেন।এই পরিস্থিতির জন্য ‘লেগো’ দিয়ে মহাকাশযানের মডেল তৈরি হয়েছে।সেই সিমুলেশন-এর মাধ্যমে নিরাপদ অবতরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।ভিন গ্রহে কিংবা উপগ্রহে অবতরণই হল মহাকাশ অভিযানের সব থেকে কঠিন ধাপ। সফল উৎক্ষেপণের পরেও নামতে গিয়েই বিপত্তি ঘটেছিল চন্দ্রযান-২ অভিযানে। এ বার যাতে পালকের মতো মসৃণ ভাবে চাঁদের মাটি ছোঁয়া যায় তার হবে উপরেই বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।‘থ্রাস্টার’এর সাহায্যেই পালকের হিে রিং মতো চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযান।বিজ্ঞানীদের ভাষায়, ‘ফেদার টাচ’
বা পালকের স্পর্শ’ । সায়নের ব্যাখ্যা,থ্রাস্টারগুলির মাধ্যমে জ্বালানি টি নিঃসরণ বাড়িয়ে-কমিয়ে নিরাপদ অবতরণ করা যাবে। তবে শুধু চন্দ্ৰ অভিযানের ক্ষেত্রে নয়, ইসরোর একাধিক প্রকল্পের সঙ্গে যোগ রয়েছে যাদবপুরের। একাধিক গবেষক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়াকেও এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে।যাদবপুরের গবেষকরা যে মডেল তৈরি করবেন, ইসরোর ইঞ্জিনিয়াররা সেটারই বাস্তবায়ন করবেন। ইসরো জানিয়েছে, শুধু চন্দ্রাভিযান নয়। অন্যান্য গ্রহ মহাকাশযান অবতরণের ক্ষেত্রেও এই মডেলের ল্যান্ডারই ব্যবহার করা হবে। উল্লেখ্য,৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দুই গহ্বরের মাঝে অবতরণ ল করার কথা ছিল বিক্রম ল্যান্ডারের। যে অবতরণ সফল হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা, চিনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কৃতিত্ব অর্জন করত ভারত। দক্ষিণ মেরুতে নামত প্রথম দেশ হিসেবে। কিন্তু নামার আগেই হারিয়ে যায় ল্যান্ডার বিক্রম।