ত্রিপুরার সাহিত্য চর্চায় নয়া ইতিহাস রচনা করেছে উড়ান: জয় গোস্বামী।।
চপলচঞ্চল রসিকতা

নতুন কাজ বা উন্নয়ন নয়। আগেকার ধারাগুলি বজায় রাখিয়া সাধারণ মানুষের প্রয়োজন , সুযোগ সুবিধাগুলি যথাযথ দেওয়া গেছে কি না এই আমলে , এই লইয়া খোদ শাসকদলকেই ভাবিতে হইবে। পাঁচ বৎসরকাল অতিক্রম করিয়া আরও একখানা পাঁচ বৎসর শুরু করিতে চায় বিজেপি । এই চাওয়া যতটা না নিজেদের কাজ আর সাফল্যের নিরিখে তার চাইতে অধিক হইলো ডবল ইঞ্জিনেপ জোরে । ডবল ইঞ্জিনের নরেন্দ্র মোদিই ত্রিপুরা বিজেপির ভরসা । অবশ্য কেবল ত্রিপুরাই বলা হইবে কেন , দেশের সকল রাজ্যেই এই এক চিত্র । শাসকদলের সমর্থক কর্মকর্তারা সতত বিশ্বাস করেন মোদিজি হ্যায় তো সব মুমকিন হ্যায়।

আমাদের সংস্কার , বিশ্বাস বলিয়া দেয়,বিশ্বাসে মিলয়া হরি তর্কে বহুদূর।তাই বিজেপি ত্রিপুরায় আরও এক পাঁচ বছর ইনিংস শুরু করিতে পারিবে কি পারিবে না এই লইয়া তর্ক বা কুতর্কের অভিপ্রায় একপ্রস্থ অলস কালহরণ মাত্র । কথা বলিতে হয় জনস্বার্থ আর জনগণের প্রাপ্য পরিষেবা লইয়া । মানুষ যতটা পাইয়া অভ্যস্ত তাহা এই আমলে পাইয়াছেন কি না । এই প্রসঙ্গে প্রথমেই বলিতে হইবে বিদ্যুৎ , পানীয় জলের কথা । এইগুলি মানুষের প্রাথমিক চাহিদা । আজ পরিশ্রুত পানীয় জলের সরকারী প্রকল্প সম্পূর্ণ হোক কিংবা অর্ধেক , সকল গ্রামেই পাইপলাইনে জল দেওয়া হয়

আর পাইপলাইনে জল দিতে গেলে একমাত্র পথ হইলো বিদ্যুৎ চালিত পাম্প । এই সকল পাম্প দিয়া সেচের জলও দেওয়া হইয়া থাকে ।ত্রিপুরার গ্রামগঞ্জের মানুষ কোনওদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা না দেখিতে পাইলেও সাত আটদিন ধরিয়া বিদ্যুৎ নাই এমন অবস্থার শিকার হন নাই , অন্তত আগের দেড় দুইদশক । শহরাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুৎহীনতা ভুলিয়াছিলেন অনেকদিন । একসময় ঘোষিত লোডশেডিং চলিতে থাকায় পাড়ায় পাড়ায় যাহারা জেনারেটরের ব্যবসা করিতো তাহাদের মাথায় হাত পড়িল । তাহারা লোডশেডিং কেন নাই সেই দাবি লইয়া বিদ্যুৎ মন্ত্রীর সহিত দেখা করিলো

এই সকল ঘটনা মানুষের স্মৃতিপট হইতে মুছিয়া যায় নাই বরং এই আমলে অঘোষিত বিদ্যুৎহীনতা আর চপলতার কারণে সেইসব স্মৃতি সজীব হইতেছে । গ্রামগঞ্জের কথা বলিয়া লাভ নাই , শহর রাজধানী , স্মার্ট সিটির মানুষ দিন দুপুর বা রাত দুপুরে চপলতার শিকার । বুঝিয়া উঠিতেছেন না উহাকে চপলতা বলা হইবে নাকি রসিকতা । পানীয় জল কিংবা সেচের জল সকলই যখন পাইপবাহী তাই বিদ্যুৎ নির্ভর । এই নির্ভরতার অপর নাম নিদারুণ অসহায়তা । সাত দিন দশ দিন ধরিয়া যখন বিদ্যুৎ দেখা দেয় না তখন মানুষ নির্জলা কাটায় , মরশুম চলিয়া গেলেও কৃষক জমিতে ফসল রোপিতে পারিতেছে না ।

যদিও এই রাজ্যে বিদ্যুতের অভাব নাই । বরং উৎপাদন আগের মতোই উদ্বৃত্ত । বহির্দেশে বহিঃরাজ্যে যাইতেছে ত্রিপুরায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ । এ যেন প্রদীপের নিচের ঘন অন্ধকারের ছবি । এককথায় মানুষ দীর্ঘদিন যে সকল সুযোগসুবিধা ভোগ করিতেন তাহা হইতে এই আমলে বঞ্চিত হইয়াছেন । এই নিরিখ রাখিতে হইবে শাসকদলকে আগামী নির্বাচনে ভোট ভিক্ষা করিতে হইলে ।নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের কথা আসিলে এই সরকারকে অনেক গোমস্তাকে বলিতে শোনা গিয়াছিল , বেসরকারী হইলে পরিষেবা ভালো হইবে । গোমস্তাগণের দিবানিশি আরতি কীর্তনের মধ্যেই এই সরকার রাজ্যের একটি বড় অংশ জুড়িয়া বিদ্যুৎ পরিষেবার বেসরকারীকরণ করিলো ।

দেখা গেল সেই সকল অংশের মানুষ , মানে বিদ্যুতের আদি ও অকৃত্রিম ভোক্তাগণ দাবি তুলেছিলেন নিগমের পুরানো পরিষেবা ফিরাইয়া দেওয়া হোক । আজ ভাবিতে হইতেছে , বিদ্যুতের উদ্বৃত্ত উৎপাদন রহিয়াছে , রহিয়াছে সকল পরিকাঠামো । কমিয়াছে কিছু কর্মী , একযোগে অনেক ইঞ্জিনীয়ার অবসরে গিয়াছেন । এই সকল শূন্যপদ সরকার পূরণ করে নাই । নিগমের আয় সঠিক রাখিয়া বিদ্যুৎ পরিবহণ আর বাড়ি বাড়ি পরিষেবা প্রদানের কাজটুকু করিলো না । ইহাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা যেমন মান হারাইলো তেমনি রাজ্যের মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের নানান পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের সুফলও চোখে দেখিতে পাইতেছেন না । এর অর্থ কি ?