চরম বঞ্চনার শিকার রাজ্য কর দপ্তরের একাংশ কর্মী!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের
অর্থনীতি এবং আর্থিক অবস্থাকে সচল ও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নিরলসভাবে করে চলেছেন রাজ্য সরকারের বিক্রয় কর দপ্তরের কর্মীরা।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, ওই বিক্রয় কর দপ্তরের কর্মীরাই বছরের পর বছর ধরে নানাভাবে চরম বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ফলে এই নিয়ে কর্মচারী মহলে ব্যাপক ক্ষোভ এবং হতাশা তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর, ২০২২ সালে রাজ্য মন্ত্রিসভা অর্থ দপ্তরের অধীন কর সংস্থায় অ্যাসিস্টেন্ট স্ট্যাটিসটিকেল অফিসার (গ্রুপ-সি, নন-গেজেটেড) পদের প্রমোশনের জন্য স্ট্যাটিসটিকেল অফিসার (গ্রুপ-বি, গেজেটেড) পদ সৃষ্টি করে।এটি ত্রিপুরা গেজেট নং- ১৪৯৮ তারিখ ০২/০৯/২০২২-তে প্রকাশিত হয়।দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও সেই প্রমোশন এখনও কার্যকর করা হয়নি।ঠিক একইভাবে, দীর্ঘ প্রায় আঠারো বছর পর, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভা অর্থ দপ্তরের অধীন কর সংস্থায় সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট (গ্রুপ-সি, নন- গেজেটেড) পদের প্রমোশনের জন্য প্রোগ্রামার (গ্রুপ-বি, নন-গেজেটেড)পদ সৃষ্টি করে।এটি ত্রিপুরা গেজেট নং-২৫১ তারিখ ০৬/০২/২০২৪-তে প্রকাশিত হয়।কিন্তু আট মাস পেরিয়ে গেলেও এই প্রমোশন প্রক্রিয়া এখনও অগ্রগতি পায়নি। ফলে এই কর্মচারীরাও তাদের প্রাপ্য প্রমোশন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
এত দীর্ঘ সময় ধরে প্রমোশন স্থগিত থাকা কর্মচারীদের কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
অন্যদিকে,২০২৩ সালে রাজ্য সরকার ইন্ডাস্ট্রিস অ্যান্ড কমার্স (ইনফরমেশন টেকনোলজি) দপ্তরে সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট থেকে প্রোগ্রামার পদের প্রমোশনের জন্য নিয়োগের নীতি তৈরি করে।যা ত্রিপুরা গেজেট নং-৮১ তারিখ ০৮/০১/২০২৪-তে প্রকাশিত হয়।পরবর্তী সময়ে সেই নিয়োগের নিয়ম অনুসারে দশ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্টদের প্রোগ্রামার পদে ১০০% প্রমোশনের মাধ্যমে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এমনকী প্রয়োজন হলে অন্য দপ্তর থেকে ডেপুটেশনের মাধ্যমে বা সরাসরি নিয়োগের ব্যবস্থাও রাখা হয়।মাত্র দুই-তিন মাসের মধ্যেই সেই নিয়োগ নীতি কার্যকর হয় এবং প্রমোশন দেওয়া সম্পন্ন হয়।
পূর্ববর্তী সময়েও, ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের GA (P&T) দপ্তর ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট (গ্রুপ-সি, নন-গেজেটেড) থেকে প্রোগ্রামার (গ্রুপ-বি, নন-গেজেটেড) পদের জন্য একই নিয়োগবিধি প্রকাশ করেছিল।উক্ত নিয়োগবিধি অনুযায়ী সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট পদে দীর্ঘ দশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের প্রোগ্রামার পদে উন্নীত করা হয়।
তাছাড়া, ত্রিপুরা উচ্চ আদালতেও সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট (গ্রুপ-সি, নন-গেজেটেড) পদের প্রমোশনের জন্য প্রোগ্রামার (গ্রুপ-বি, নন-গেজেটেড) পদ
সৃষ্টি করেছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করেছে।ইতিমধ্যে ত্রিপুরা সরকারের অন্যান্য দপ্তর যেমন রুরাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, ডাইরেক্টরেট অব ট্রেজারি, রেভিনিউ ডিপার্টমেন্ট ও তাদের দপ্তরের সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট (গ্রুপ-সি, নন-গেজেটেড) পদের প্রমোশনের জন্য প্রোগ্রামার (গ্রুপ-বি, নন-গেজেটেড)পদ সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি, ইন্ডাস্ট্রিস ও কমার্স (ইনফরমেশন টেকনোলজি) দপ্তর দুই বছরের ডেপুটেশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন পদ পূরণের জন্য ০৭/১০/২০২৪ তারিখে একটি মেমোরেন্ডাম জারি করেছে।ফাইল নং- 2(52)/DIT/ Estt/2024। উক্ত পদগুলির মধ্যে রয়েছে Accounts Officer (Group-B, Gazetted), Officer Superintendent এবং Programmer (Group-B, Non- Gazetted)।এর মধ্যে গ্রোগ্রামার পদের জন্য দশ বছরের সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট পদের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।কর সংস্থা তাদের কর্মীদের কাছ থেকে এই পদে ডেপুটেশনে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানতে চেয়েছে।প্রশ্ন হলো, কর সংস্থা কেন তাদের নিজস্ব প্রোগ্রামার পদের শূন্যস্থান পূরণ না করে কর্মচারীদের অন্য দপ্তরে ডেপুটেশনে পাঠাতে চাইছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে দেখা যাবে কর সংস্থার দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মচারীদের মধ্যে অন্য দপ্তরে ডেপুটেশনে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।এর ফলে মূল দপ্তরের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে। এতে কোনও সন্দেহ নেই। কর সংস্থায় প্রমোশন প্রক্রিয়ায় জটিলতার মূল কারণ হিসাবে উঠে আসছে কিছু অসাধু কর কর্মচারী ও অফিসারের ষড়যন্ত্র।যারা মহাকরণের ঘনিষ্ঠ কিছু আমলার সাথে মিলে এই প্রক্রিয়াকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের লক্ষ্য সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট এবং অ্যাসিস্টেন্ট স্ট্যাটিসটিকেল অফিসারের প্রমোশন প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব দেরি করানো এবং জটিল করে তোলা। মহাকরণে কর সংস্থার এই প্রমোশনের ফাইল গেলে প্রায় দুই-তিন মাস ধরে ফেলে রাখা হয়। কোনও অগ্রগতি হয় না। উদাহরণস্বরূপ সম্প্রতি অ্যাসিস্টেন্ট স্ট্যাটিসটিকেল অফিসারের প্রমোশনের ফাইল তিন মাস মহাকরণে ফেলে রাখা হয়েছে।অপরদিকে, সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্টের প্রমোশনের ফাইল মহাকরণ থেকে ফেরত পাঠানো হয় নানা আইন বহির্ভূত মন্তব্য সহকারে,যা আইনত গ্রহণযোগ্য নয়।পরবর্তী সময়ে কর সংস্থা ওই মন্তব্যের আইনি ব্যাখ্যা চাইলেও, মহাকরণ সেই ফাইল প্রসেস না করে কিছু না লেখে ফাইল ফেরত পাঠিয়ে দেয়।এই প্রক্রিয়া কার্যত সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্টের প্রমোশন স্থগিত করে রেখেছে।যা কর্মীদের অধিকার এবং উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এই ধরনের প্রশাসনিক বাধা ও অসাধু চক্রান্তের কারণে কর্মচারীদের প্রাপ্য প্রমোশন দীর্ঘকাল ধরে ঝুলে রয়েছে,যা তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এখন বড় প্রশ্ন হলো, কর সংস্থার সিনিয়র কম্পিউটার অ্যাসিস্টেন্ট এবং অ্যাসিস্টেন্ট স্ট্যাটিসটিকেল অফিসাররা তাদের চাকরি জীবনে অন্তত একটি প্রমোশন পাবেন কিনা?নাকি তারাও এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার শিকার হবেন?

Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

11 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

11 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

11 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

11 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

1 day ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

1 day ago