চলে গেলেন দ্বাদশ অশ্বারোহীর মানস দেববর্মা!!

 চলে গেলেন দ্বাদশ অশ্বারোহীর মানস দেববর্মা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-চলে গেলেন দ্বাদশ অশ্বারোহীর একজন,মানস দেববর্মা। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর সোমবার কৃষ্ণনগরে নিজ বাড়িতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।মৃত্যুকালে
বয়স হয়েছিল ৮২ বৎসর। তাঁর মৃত্যু সংবাদে শোকের ছায়া নেমে আসে তার বিশাল পরিচিত পরিসরজুড়ে। ত্রিপুরার মূল নিবাসী হিসাবে প্রথম প্রেসিডেন্সি কলেজের পড়ুয়া মানস দেববর্মা এমবিবি কলেজে শরীরতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে প্রথমে টিপিএসসির সদস্য ও পরে টিপিএসসির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।অল্প কিছুদিন বিরতির পর ইউপিএসসির সদস্য হিসাবে কাজ শুরু করেন ও দীর্ঘদিন এই কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনিই ত্রিপুরা থেকে প্রথম এবং একমাত্র ইউপিএসসি সদস্য।এই কর্মজীবনই তাঁর সার্বিক পরিচয় নয়।সাতের দশকের আগরতলা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন যারা তাদের মধ্যে মানস দেববর্মা অন্যতম একজন।মানস দেববর্মা, ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য, কালীপদ চক্রবর্তীরা সে সময়ে এই রাজ্যের শিল্প সংস্কৃতির জগতে সমান্তরাল শাসন কায়েম করে রাখতেন। ত্রিপুরা দর্পণ পত্রিকার পূর্বতন অবয়ব ‘জনযুগ’-এর বাঁশের বেড়ার অফিস ছিল তাঁদের ভাবনাচিন্তার আঁতুড়ঘর।সে সময় তাঁর নেতৃত্বে নাটকের দল এলডিজি তৈরি হয়েছিল। পরে এলডিজি ভেঙে গেলে তৈরি করেন নতুন দল সিএসিটি।আগরতলা ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি।নিয়মিত পত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি গল্প লিখতেন। তবে বেশকিছু কবিতাও তার রয়েছে।১৯৭২ সাল নাগাদ বর্তমান পৌণমি প্রকাশনের কর্ণধার নীলিপ পোদ্দার রাজ্যের বারোজন কবির বাছাই কবিতা নিয়ে প্রকাশ করেন কবিতা সংকলন ‘দ্বাদশ অশ্বারোহী’।সেখানে মানস -দেববর্মাও একজন। নীলিপ পোদ্দার এ দিন জানিয়েছেন, মানসদার মোট বইয়ের সংখ্যা চার। গল্পের সবগুলিই পৌণমি প্রকাশনের। শেষ গল্পের বইটি তিন বছর আগে আগরতলা বইমেলায় পুরস্কৃত হয়েছে। একটি উপন্যাসে হাত দিয়েছিলেন। শেষ করে যাননি। মানসদা কথা রাখেননি। মানস দেববর্মার শেষ বইটি ছিল নীহারিকা প্রকাশনীর- ‘আত্মসংঘাত’।
বন্ধুবৃত্তে বা পরিচিত, আধাপরিচিত মহলে মানস দেববর্মা ছিলেন বন্ধুবৎসল, সদাহাস্যময়, রসিক একজন মজার মানুষ হিসাবে পরিচিত। সাতের – দশকের আগরতলায় তারা ‘হুল্লোড়বাজ’ নামেও পরিচিতি পান। কিন্তু একে একে ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য, কালীপদ চক্রবর্তী তাঁকে একা রেখে চিরতরে চলে যান। তাঁর শবশকট এদিন যখন বটতলা শ্মশানমুখী, স্মৃতিচারণে ত্রিপুরা দর্পণ সম্পাদক সমীরণ রায় জানালেন, একা হয়ে গেলেও দমেননি মানসদা। তিনি তাঁর মতোই থেকেছেন শেষ অবধি, জ্ঞান হারানোর আগে পর্যন্ত।প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারে – ভুগছিলেন মানস দেববর্মা। মাঝে মাঝেই তাকে দিল্লী থাকতে হয়েছে চিকিৎসক কন্যা জয়া দেববর্মার চিকিৎসা-যত্নে। সম্প্রতি অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকলে আগরতলার বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা হয় এবং পরে বাড়িতেই নিয়ে আসা হয়। সোমবার দুটো নাগাদ তার জীবনদীপ নিভে যায়, থেমে যায় টগবগে অশ্ব। বিকালে তার শবশকট বের হয় রবীন্দ্রগানের মূর্ছনায় সমাজসেবী স্ত্রী কৃষ্ণা দেববর্মার চোখের জলে। কৃষ্ণনগরের বাড়ি থেকে বড় কন্যা তিথি দেববর্মণের সুরে সুর মেলান অন্যরাও- আগুনের পরশমণি। মৃতদেহে রাখা হয় গীতাঞ্জলি, গীতবিতান। শবশকট রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন হয়ে উমাকান্ত একাডেমিতে যায়। উমাকান্ত একাডেমি হায়ার সেকেন্ডারির প্রথম ব্যাচের সে দামাল ছাত্র মানস দেববর্মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান এলামনির সদস্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়াও শিক্ষাজগতের নানান লোকজন।
স্মৃতিচারণে দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক প্রদীপ দত্ত ভৌমিক বললেন, সাহিত্যিক হিসাবে নয়, স্যারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ছাত্রের-শিক্ষকের।কিন্তু কী ক্লাসের ভেতরে কী ক্লাসের বাইরে, পরবর্তী জীবনে পত্রিকা অফিসে- সবখানেই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে ম্লান করে এক বন্ধুসুলভ ভালোবাসায় আপন করে ফেলতেন।মানস দেববর্মার মৃত্যুতে শোকমগ্ন তাঁর পড়শি, প্রতিবেশীও।ইউনাইটেড ফ্রেন্ডসের প্রাক্তন সহসভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের প্রয়াণে শোক জানিয়েছে ক্লাবের সব সদস্যরা। শবশকট বটতলা শ্মশানে পৌঁছুলে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন মেয়র দীপক মজুমদার।
এক শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মানস দেববর্মার মৃত্যুতে শিল্প সংস্কৃতি জগতের একজন অভিভাবককে হারিয়েছি আমরা। শোক ব্যক্ত করে ত্রিপুরা রবীন্দ্র পরিষদের সম্পাদক রামেশ্বর ভট্টাচার্য বলেছেন, প্রয়াত মানস দেববর্মা ছিলেন পরিষদের অন্যতম এক শুভাকাঙক্ষী। ত্রিপুরা পাবলিশার্স গিল্ড শোকবার্তায় পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছে, তাঁর লেখা বই ‘দশ টাকা পাঁচ টাকার গল্প’ আটের দশকে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.