দ্বিতীয়দিন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো হাজারো দর্শক-শ্রোতা!!
চাঁদের পর সূর্য

চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য নিয়ে এখনও গোটা বিশ্ব জুড়ে হইহই চলছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতের চন্দ্রযানের সফল অবতরণের পর, প্রত্যাশিতভাবেই ল্যান্ডার বিক্রম এবং বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে ‘আসা প্রজ্ঞান রোভার কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিশ্বের আজ পর্যন্ত কোনও দেশ যা করে উঠতে পারেনি, সেই কাজ ভারত সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করে ইতিহাস রচনা করেছে।চন্দ্রযান-৩-এর ঐতিহাসিক সাফল্যের মধ্যেই এলো নতুন খবর। চাঁদের পর এবার ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর লক্ষ্য সূর্য। গত বুধবার চন্দ্রবিজয়ের পরদিনই ইসরো জানিয়ে দিয়েছে,তাদের পরবর্তী মিশনের কথা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, সামনের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই লঞ্চ করা হবে মিশন ‘আদিত্য’।শুধু চাঁদেই নয়, মহাকাশে বিপ্লব ঘটাতে চায় ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরো। আর তাই চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই পরবর্তী মিশনের টার্গেট ফিক্সড করে ফেললেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। আর সেই মিশন হচ্ছে আদিত্য এল-১’। এবার সূর্যের জলবায়ু, সৌরশিখা, সৌরঝড় সহ একাধিক বিষয় নিয়ে পরীক্ষা চালাবে ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরো।এটি হবে ভারতের প্রথম মহাকাশ মিশন যা সূর্যকে খুব কাছ থেকে অধ্যয়ন করবে। আগামী পাঁচ বছর ধরে চলবে সূর্যের নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা। ইসরোর একটি রিপোর্ট মোতাবেক, ‘আদিত্য এল- ১’ মিশনে ব্যবহৃত মহাকাশযানে সাত ধরনের পেলোড থাকবে। যার সাহায্যে নানারকমভাবে সূর্যকে ঘিরে পরীক্ষা চালানো হবে। আর এই অভিযান সফল হলে বিজ্ঞানের আরও একটি দিক উন্মোচিত হবে।প্রকাশিত রিপোর্ট মোতাবেক, সূর্য অভিযানে ব্যবহৃত ‘আদিত্য এল- ১’ নামক মহাকাশযানটিকে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে লো আর্থ অর্বিটে বসানো হবে। ইসরোর দাবি, এই জায়গা থেকে সূর্যকে পরখ করা, সূর্যকে বোঝা অনেক সহজ হবে। এই অভিযান ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মিশন সফল হলে সূর্য নিয়ে বহু অজানা রহস্য গোটা বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হবে। মহাকাশ গবেষণার একাধিক দিগন্ত খুলে যাবে।সূর্যের নামে ‘আদিত্য এল-১’ এই স্যাটেলাইটটি তৈরি হয়েছে বেঙ্গালুরুর ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারে। সূর্যের তথ্য অনুসন্ধানে এই প্রথম ইসরো মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে চলেছে। খবরে প্রকাশ, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে ‘আদিত্য এল-১’। সেই সাথে প্রহর গোনা শুরু হয়েছে আরও একটি ঐতিহাসিক সাফল্যের সাক্ষী হওয়ার জন্য। আমরা এমন এক মহাবিশ্বে বসবাস করি, যার বিশালতা কল্পনা করাই দু:সাধ্য। পৃথিবীবিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, ‘আমরা এক পাগল করা মহাবিশ্ব পেয়েছি।আমরা চারদিকে যা দেখছি এর অর্থোদ্ধার করতে চাই এবং জানতে চাই এই মহাকাশের প্রকৃতি ঠিক কী ? এখানে আমাদের স্থান কোথায় এবং এই মহাবিশ্ব আর এই আমরা কোথা থেকে এলাম? এই মহাকাশ আমরা ঠিক যেভাবে দেখছি সেটাই বা কেনো ?” এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতেই তো নিরন্তর প্রয়াস চলছে। বিজ্ঞানীরা রাত-দিন এক করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নানা অজানা রহস্যের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এই তালিকায় ভারত আজ সামনের সারিতে। ভারতবাসী হিসেবে আজ আমরা সত্যিই গর্বিত। শুধু চন্দ্রবিজয়ই নয়, চন্দ্রের পর সূর্য। এরপর গগনযান, শুক্র অভিযান। ইসরোর তালিকায় রয়েছে আরও অনেক কিছুই। আপাতত চন্দ্ৰযান- ৩-এর ঐতিহাসিক সাফল্যের মধ্যে আরও একটি সাফল্যের শিখর ছোঁয়ার অপেক্ষায় গোটা দেশবাসী। ইসরো এবং ইসরোর বিজ্ঞানীদের আগাম শুভেচ্ছা রইল।