রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
চাই ইতিবাচক বার্তা
সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বড়সড় ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়-হিন্দি বলয়ের এই তিন রাজ্যেই বিপর্যয় ঘটেছে শতবর্ষপ্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটির। ৩ ডিসেম্বর ভোটের ফল ঘোষণার দিনই সম্মিলিত বিরোধী দলের গঠিত ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের দিন তারিখ ঘোষণা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কিন্তু বিরোধীদের অনেকেই ৬ তারিখের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না জানিয়ে দিতেই বৈঠকে পিছিয়ে দিতে হয়। শেষমেষ আগামী ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের প্রস্তাবিত বৈঠক হওয়ার কর্মসূচি স্থির হয়েছে। ১৯তারিখ দিল্লীর কনস্টিটিউশন ক্লাবে জোটের এই বৈঠকটি হবে। বিজেপি বিরোধী ঐক্য মঞ্চ গঠিত হওয়ার পর এটি সম্ভবত ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠক।
লোকসভা নির্বাচনের আর খুব বেশি বাকি নেই। সম্ভবত নতুন বছরে এপ্রিল ও মে মাস জুড়ে লোকসভার নির্বাচন হতে চলেছে-এমনটাই ধারণা করছে রাজনৈতিক মহল। সেদিক থেকে ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। ওই বৈঠকেই ইন্ডিয়া জোট কোন পথে লড়াই করবে তার দিক নির্দেশিকা চূড়ান্ত করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আসন সমঝোতা সম্পূর্ণ করা, সেই বিষয়েই মূলত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পথে এগোবে জোট শরিকরা। ৫ রাজ্যের ভোটের ফলাফলে একদিকে যেমন বিজেপি উচ্ছসিত, তেমনি অনেকটাই বেকায়দায় পড়ে গেছে কংগ্রেস। শুধুমাত্র তেলেঙ্গানায় সরকার গড়ে কোন রকম নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে দেশের প্রধান বিরোধী দল। ৫ রাজ্যের উপ-নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে অনেক রসায়ন কাজ করলেও, মূলত মধ্যপ্রদেশে আসন রফার প্যাঁচে পড়েই যে কংগ্রেসের নৌকাডুবি হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। তিন রাজ্যে কংগ্রেসের পরাজয় নিয়ে বিস্তর অভিযোগ এখন সামনে আসছে।
একটা বিষয় এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু একটা কথা বেশ অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলেন কে, কোথায়, কত আসনে লড়বে সেই বিষয়টি আগে থেকে আলোচনা করে ঠিক করে নেওয়া দরকার। কিন্তু ৫ রাজ্যের ভোটে ইন্ডিয়া জোট সেই অর্থে কোন ঐক্যবদ্ধ চেহারা নিয়ে ময়দানে নামতে পারেনি। বরং বিরোধী দলগুলি নিজেদের মধ্যে ভোট কাটাকুটিতে যাত্রা ভঙ্গ হয়েছে কংগ্রেসের। প্রায় ২-৩ মাস বাদে লোকসভায় নির্বাচনে যাচ্ছে বিরোধীরা, প্রবল শক্তিধর বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোটের হাতে নেই কোন কমন মিনিমান প্রোগ্রাম বা যৌথ ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি। নেই জোটের কোন স্লোগান। তবে ৫ রাজ্যে বিরোধীদের পরাজয় খানিকটা হলেও ইন্ডিয়া জোটকে একটা সত্যের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে।
‘ম্যায় নেহি হাম’-এই আপ্তবাক্যটিকে মাথায় রেখেই ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা এই বক্তব্যটিকে তাদের জেটের স্লোগান হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে। তবে ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে রাজ্যে-রাজ্যে আসন ভাগাভাগি, কিংবা কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম চূড়ান্ত করার চেয়েও বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে বিজেপির হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোটের পাল্টা কৌশল স্থির করা। কারণ সামনেই অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধন। বিজেপির এই তুরুপের তাসকে বিরোধীরা পাল্টা কোন কার্ড দিয়ে ট্রাম্প করবে সেই নিয়ে ধোঁয়াশায় গোটা ইন্ডিয়া শিবির। শুধু মোদি সরকারের বিরোধিতার প্রচার দিয়ে ভোটে জেতা যায় না। সেই সঙ্গে দরকার পাল্টা ইতিবাচক কর্মসূচি। বিজেপি বা মোদি দেশের জন্য বিপদ-বিরোধীদের এই দাবি কিংবা বক্তব্য থাকতেই পারে।
কিন্তু বিরোধী জোট ক্ষমতায় এলে জনগণের জন্য তাদের কর্মসূচি ও চিন্তাভাবনা কী, কী কী প্রকল্প গ্রহণ করে বিগত দিনের ‘ক্ষত’কে সারাই করা যাবে তার জুতসই ব্যাখ্যা মানুষের কাছে জানাতে হবে এবং সেটা আমজনতার কাছে গ্রহণযোগ্য হলে তবেই একমাত্র বিকল্পের সন্ধান মানুষ বেছে নেবে। বিরোধীরা এতদিন শুধুই অর্থনৈতিক অসাম্য, সামাজিক মেরুকরণ, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। কিন্তু পাশাপাশি বিরোধীদের ইতিবাচক ভাবনার রূপরেখা কী হবে তা জনসম্মুখে মেলে ধরতে হবে। সেইদিকে ইন্ডিয়া জোটের আসন্ন বৈঠক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তা আগাম বলা যায়।