চাই সার্থক রূপায়ণ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২৭ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকার বাজেট শুক্রবার পেশ হলো রাজ্য বিধানসভায়।গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের কারণে এই বছর পূর্ণাঙ্গ বাজেটের পরিবর্তে ২০২৩- ২৪ অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসের জন্য ইতিপূর্বে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করেছিল সরকার। সেইদিক থেকে শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে বিজেপিশাসিত সরকারের পেশ করা বাজেট প্রস্তাবটি ছিল ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। বাজেটে যদিও ৬১১ কোটি টাকার ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। তবে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে ক্ষমতাসীন সরকার রাজ্যবাসীর ঘাড়ে নতুন করে কোনও করারোপের প্রস্তাবের পথে হাঁটেনি।এটা নি:সন্দেহে ত্রিপুরাবাসীর জন্য বড়সড় স্বস্তির খবর। ত্রিপুরার মতো একটি পশ্চাৎপদ রাজ্যের বাজেট নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্যই হওয়া উচিত পরিষেবার ক্ষেত্রগুলোকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করা। এক্ষেত্রে গ্রামীণ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য পরিষেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষার সার্বিক বিকাশ এবং কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়গুলো রয়েছে। বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হচ্ছে সামাজিক পরিষেবার সেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, যেখানে সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয়কে পুরোটাই জনকল্যাণ হিসাবে সামাজিক পরিষেবায় শ্রেণীবদ্ধ করা যায়।যদিও সরকারের রাজস্ব ব্যয়ের কয়েকটি ধাপ বা পর্যায় রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ পরিষেবা, অর্থনৈতিক পরিষেবা, সামাজিক পরিষেবা কিংবা অনুদান সহায়তা হিসাবে সরকার বাজেটে তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। অর্থনৈতিক পরিষেবার মধ্যে পরিবহণ, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলি থাকে। আবার সম্পদ সৃষ্টি এবং উন্নয়ন ব্যয়কে মূলধন ব্যয় হিসাবেও চিহ্নিত ও শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে। দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী ২০২৪-এর মার্চ মাস পর্যন্ত যে অর্থবর্ষ চালু থাকবে তার জন্য সরকার বাজেটে মূলধনী ব্যয় ধরেছে ৫৩৫৮.৭০ কোটি টাকা। আবার বাজেটে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়েে ৪৯৩৯ কোটি টাকা। সড়ক উন্নয়ন ও যোগাযোগের মতো অর্থনৈতিক পরিষেবার ক্ষেত্রেও সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপের চেষ্টা করেছে বাজেটে সড়ক উন্নয়ন খাতে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৩৬০ কোটি টাকা। তবে সবচেয়ে প্রশংসনীয় ও লক্ষণীয় পদক্ষেপ হলো, সামাজি পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র স্বাস্থ্য পরিষেবার সর্বাঙ্গীণ বিকাশে ১৭৫৬ কোটি টাকার অর্থ সংস্থান রাখা। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক পরিষেবার অন্যত ভিত্তি কৃষি এবং কৃষি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষে বাজেটে ১৪৩৬ কোটি টাকার বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।একটি জনকল্যাণকামী সরকারের কাজের অভিমুখ এবং দিশার উপরই সেই সরকারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য জনমনে পরিস্ফুট হয়। দেখা গেছে, এবারের বাজেটে সরকার একাধারে যেমন অর্থনৈতিক পরিষেবা এবং সামাজিক পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তেমনি পাশাপাশি সাধারণ পরিষেবার উপরও প্রাধান্য আরোপ করার চেষ্টা হয়েছে। ২০২৩-২৪ চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১৩টি নতুন প্রকল্পেরও ঘোষণা করা হয়েছে।এই নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে জন আরোগ্য যোজনা। এখানে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ইন্টিগ্রেটেড গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম বরাদ্দের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ক্রীড়া উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। সাধারণ পরিষেবা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর ১৩টি নতুন ঘোষিত প্রকল্পে সামাজিক পরিষেবা প্রদানের জন্য বিশেষ কিছু ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি কল্যাণ প্রকল্পের জন্য বাজেটে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ ও উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেটে ৫০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানব সম্পদকে যথাযথ কাজে লাগাতে মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প অন্তত এ রাজ্যের শিক্ষিত প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন যুব সমাজকে ভবিষ্যতের নতুন যাত্রায় এগিয়ে যেতে বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, সেই প্রত্যাশাটুকু করা যেতেই পারে। বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী নগরোন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১২০ কোটি টাকার বরাদ্দের ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নগরোন্নয়ন কর্মসূচির একাধিক প্রকল্পে বানের জলের মতো অর্থবর্ষা হলেও তা নগরবাসীর সেই অর্থে কোনও উপকারে আসেনি। অতীতের এই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাজেট বরাদ্দের অর্থ সঠিকভাবে রূপায়ণে সরকারকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সরকারের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এখনও নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। এতে প্রকল্পের খরচ যেমন বাড়ছে তেমনি প্রকল্পের গুণমানও প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসে ঠেকেছে। যেহেতু সরকারের সামনে নতুন কর্মসংস্থান বলতে সরকারী চাকরির সুযোগ অনেকটাই সংকুচিত। তাই একদিকে সরকারী দপ্তরে শূন্যপদ পূরণসহ স্বনির্ভর কর্মসূচির ক্ষেত্রেও সরকারকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার শাসক শক্তির যে স্বপ্ন তা বাস্তবিক অর্থেই রূপায়িত করতে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে সরকারকেই। আর বাজেটের সার্থক রূপায়ণেই
সেটা সম্ভব।