চাকরি দুর্নীতিতে আদালতে মুখ পুড়লো রাজ্য সরকারের!!

 চাকরি দুর্নীতিতে আদালতে মুখ পুড়লো রাজ্য সরকারের!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আবারও নিয়োগ
কেলেঙ্কারি ত্রিপুরায়।এভাবেই একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতির জন্য চাকরি বঞ্চিত রাজ্যের বেকার। এবার ত্রিপুরা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নিয়োগেও দুর্নীতি হাতেনাতে ধরা পড়েছে। শুধু তাই নয়, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে ত্রিপুরা হাইকোর্টে পর্যন্ত মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের। এরপর ও রাজ্য সরকারের কোন হেলদোল নেই। উল্টো বেকারদের সাথে চাকরির নামে কেন ছলচাতুরি হচ্ছে- এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গড়ছে না রাজ্য সরকার। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম মেধা তালিকা ঘোষণার পর প্রত্যাহার করতে বাধ্য হল রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক। এমনকী বুধবার হাইকোর্টে দাড়িয়ে মেধা তালিকা ত্রুটিপূর্ণ ছিল তাও স্বীকার করে নিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।শুধুমাত্র
উচ্চ আদালতের চাপে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমবায় ব্যাঙ্ক। তবে এক্ষেত্রেও যদি মামলা না হতো তবে এই ত্রুটিপূর্ণ মেধা তালিকার প্রার্থীদের চাকরি এক প্রকার মোটা বেতনে নিশ্চিত ছিল। তবে এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াল আদালত।
মহাকরণ সূত্রে খবর ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কে সহকারী ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, অ্যাকাউন্টেন্ট সহ বিভিন্ন পদে ১৫৬ জন অফিসার-কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল। তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে প্রথম দিন থেকেই নানা অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বহিঃরাজ্যে পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ে রাজ্যের বেকারদের গাঁটের পয়সা খরচ হলো। এমনকী রাজ্যের এক যুবকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। সে যাই হোক। এরপর বেকার বিক্ষোভের চাপে পড়ে সম্প্রতি এই নিয়োগ সংক্রান্ত মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছে। আর মেধা তালিকা প্রকাশের পরই চাকরি কেলেঙ্কারির বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়। যদিও ওই সময় বেকারের দাবিতে গুরুত্ব দিল না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। উল্টো ত্রুটিপূর্ণ মেধা তালিকাকে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থা আইবিপিএসের ভুল বলে দায় এড়িয়ে যাবার চেষ্টা হয়। যদিও পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থাকে রাজ্যের নিয়মকানুন বোঝানোর দায় যে ব্যাঙ্কে কর্তৃপক্ষের ছিল এই বিষয়টি চেপে দেওয়া হয়। এরপরই রাজ্যের ক্ষুব্ধ বেকারদের পক্ষে উচ্চ আদালতে মামলা হল। আইনজীবী শংকর লোধ জানান, রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী মহিলাদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণ ৩৩ শতাংশের বেশি কোনও অবস্থায় হতে পারবে না। সমবায় ব্যঙ্কের সহকারী ম্যানেজার পদে অসংরক্ষিত শ্রেণীতে ২৬ টি আসন ছিল। ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ অনুসারে অসংরক্ষিত ক্যাটাগরিতে ৯টি আসন মহিলা প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। সংরক্ষণের অতিরিক্ত ৮ টি পদে মহিলা প্রার্থী বাছাই করে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।যা ছিল রাজ্য সরকারের সংরক্ষণ নীতিবিরোধী।
তাই বুধবার বিচারপতি অরিন্দম লোধের বেঞ্চ মামলার নিষ্পত্তি করে এক রায়ে বলেছে এই মেধা তালিকা বাতিল করতে হবে এবং নতুন মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এদিন আদালতে সশরীরে হাজির ছিলেন ব্যাঙ্কের এমডি ভজন চন্দ্র রায় এবং ম্যানেজার সোমনাথ দে। এমডি মেধা তালিকায় অসঙ্গতির কথা স্বীকার করে নিতেও বাধ্য হলেন। সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মেধা তালিকা পুনরায় যাচাই করে আবার প্রকাশ করবে জানার পর মামলার নিষ্পত্তি করে দেন বিচারপতি। আবেদনকারীদের পক্ষে উচ্চ আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী শংকর লোধ। উল্লেখ্য, ত্রিপুরাতে এর আগে আইবিপিএস পরিচালিত কোনও পরীক্ষায় এমন দুর্নীতি হয়েছে বলে খবর নেই। এই অসঙ্গতি আইনের ব্যাখ্যায় ভুলের জন্য হয়েছে নাকি অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ বাঁকাপথে চাকরি দেওয়ার পূর্ব পরিকল্পনার দৌলতে এসব হল। এদিকে ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলনে চাকরি নিয়ে ভাণ্ডগোলের কথা পরোক্ষে মেনে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ বিকালে ব্রাজ্যের রাজদানী শহর আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনীস্থিত ব্যাঙ্কর প্রধান কার্যালয়ে আহূত সাংবাদিক সম্মেলনে এর জন্য দায় চাপানো হয়েছে ব্যাঙ্কের চাকরির পরীক্ষা গ্রহণের সর্বভারতীয় সংস্থা আইবিপিএসের উপর। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের চার মাস বয়সি চেয়ারম্যান নগধাধিরাজ দত্ত এবং ব্যবস্থাপক অধিকর্তা তথা এম ডি ভজন চন্দ্র রায় বলেন, ব্যাঙ্কের মোট ১৫৬ টি পদের জন্য চাকরি প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয় দুই বছর আগে। তার মধ্যে ৫০ টি সহকারী ম্যানেজার, ৭৮ টি করণিক এবং ২৮ টি বহুমুখী কর্মী রয়েছে।এর জন্য গত বছর ২০২৪ লালের ৩, ৪, ৫ মে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করে আইবিপিএস। রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলা সহ আসামের বিভিন্ন অংশে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষার ভিত্তিতে মোট ৬৫৮ জনকে বাছাই করা হয়।তাদের সাক্ষাৎকার হয় ২১ ফেব্রুয়ারী।এরপর রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের নিজস্ব ওয়েবসাইটে চাকরি প্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপরই ধরা পড়ে গোলযোগ। চাকরিপ্রার্থী চার জন তাদের অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে ব্যাঙ্কের কাছে প্রতিবাদ জানায়। অঙ্কুর ভট্টাচার্য সহ মোট চারজন এ নিয়ে ত্রিপুরা উচ্চ আদালতে মামলা করেন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক সম্মেলনে চাকরি প্রদান ঘিরে এই গণ্ডগোলের দায় চাপান কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর। সেই সঙ্গে দাবি করেন চাকরি প্রদান ঘিরে কোনও দুর্নীতি হয়নি। হয়নি বড় কোন গোলমাল। আদালতের নির্দেশে চাকরি প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল না করাকে নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি হিসাবে খাড়া করতে চেষ্টা করেন ব্যাঙ্কের কর্তারা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.