এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মোদি-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল যে, সিবিআই, ইডির মতো তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে বিরোধীদের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকার দেশে একতরফা গণতন্ত্র কায়েম করেছেন। এতে করে গণতন্ত্রের যেমন দমবন্ধ অবস্থা তৈরি হয়েছে, তেমনি এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সাধারণের মধ্যে সংশয় এবং প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থাগুলোর তদন্তের গতিপথ কী ধরনের হবে এই সম্পর্কিত একটি গাইডলাইন চেয়ে দেশের ১৪টি বিরোধী দল গত মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, মহামান্য আদালত যেন এই সম্পর্কিত শুনানিতে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু ইডি এবং সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ১৪টি বিরোধী দলের আবেদনের উপর শুনানি গ্রহণ করতে অস্বীকৃত হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই আদালতে দায়ের করা আবেদন প্রত্যাহার করে নেন মামলাকারীরা। আবেদনকারীরা তাদের হলফনামায় দাবি করেছিল ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় – আসার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হলফনামায় আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী পরিসংখ্যান দিয়ে একথাও বলার চেষ্টা করেছেন ইডি- সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলার ৯৫ শতাংশই বিরোধী নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে, অথচ এই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর তদন্তের সাফল্যের হার চার থেকে পাঁচ শতাংশ । কিন্তু পাঁচ-ছয় বছরে আচমকা এই দুই সংস্থার তদন্তের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তাই এই ধরনের এজেন্সিগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার এবং জামিন নিয়ে গাইডলাইন স্থির করে দিতে মামলাকারীদের পক্ষে আবেদনে আর্জি রাখা হয়েছিল। কিন্তু ইডি, সিবিআই বেছে বেছে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে, এই অভিযোগ করে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তারির ক্ষেত্রে যে ধরনের রক্ষাকবচ চাইছিলেন মামলার আবেদনকারীরা সেটা মাননীয় সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, রাজনৈতিক নেতারা কখনই সাধারণ নাগরিকের তুলনায় কোনও অতিরিক্ত সুবিধাভোগ করতে পারেন না। তাছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনও মামলার ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি বা জামিনের জন্য নির্দেশিকা জারি করা যেতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কখনই একটি বিষয় নিয়ে নির্দেশিকা জারি হতে পারে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এই সম্মিলিত প্রয়াস খারিজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরোধী দলগুলোর জন্য বড়সড় রাজনৈতিক ধাক্কা এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থার দেউলিয়া প্রকাশ তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ কংগ্রেস, ডিএমকে, তৃণমূল, সিপিএম সহ দেশের চৌদ্দটি বিরোধী দলেরই প্রধান অভিযোগ ছিল মোদি জামানায় আট বছরে সিবিআই বেছে বেছে বিরোধীদের জব্দ করতে মামলা করেছে। আর এতদিন এই অস্ত্র দিয়েই বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন মোদি-অমিত শাহ জুটিতে তীব্র আক্রমণে বিদ্ধ করত। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতে বিরোধীদের এই মামলা খারিজ হওয়ার পর সেই অস্ত্রটিই যে এখন বুমেরাং হয়ে মোদি- অমিত শাহদের হাতে অধিক শক্তি নিয়ে ব্রহ্মাস্ত্রের মতোই বিরোধীদের একের পর এক ঘায়েল করতে তৎপর হবে সেটা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার কঠোর হতেই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত বিরোধীরা একজোট হয়েছে। গত সোমবার দিল্লীতে সিবিআইয়ের হীরক জয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠানেও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের কোনও রেয়াত নয়, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে তদন্ত করুন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতের এই বার্তা বিরোধী দলগুলোর জন্য কঠিন রাজনৈতিক সঙ্কট ডেকে আনতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ এতে করে এখন প্রধানমন্ত্রী মোদির উত্থাপিত দুর্নীতিগ্রস্ত বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তত্ত্ব যেমন সাধারণের কাছে অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিগ্রাহ্য মনে হতে পারে, ঠিক তেমনি বিরোধী দলগুলোর এতদিনকার এই রাজনৈতিক ইস্যুকে এভাবে আদালতের আঙ্গিনায় টেনে নিয়ে গিয়ে বিরোধীরা কার্যতঃ নিজেদের অবস্থানটাই আরও নড়বড়ে এবং দুর্বল করে দিল। কারণ এই ধরনের রাজনৈতিক ইস্যুতে লড়াই চালানোর জায়গা আদালত হতে পারে না। জনগণের কাছে রাজনৈতিক মঞ্চেই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগকে সর্বোচ্চ মাত্রায় তুলে ধরা প্রয়োজন ছিল। আর এটাই হতে পারত বিরোধীদের হাতে স্থায়ী কৌশলী অস্ত্র। যা বিরোধীরা নিজেদের রণকৌশলগত ব্যর্থতার কারণেই হাতছাড়া করে এখন না ঘর কা, না ঘাট কা।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

16 mins ago

সোপিয়ানে সেনা-জঙ্গির গুলির লড়াইয়ে, খতম ৩ লস্কর জঙ্গি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোপিয়ানে সেনার হাতে খতম হল তিন লস্কর জঙ্গি। সেনার দাবী, জম্মু-কাশ্মীরে বহুদিন ধরেই…

21 mins ago

বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ভিতর কোটি কোটি টাকার মাদক পাচার!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-অভিনব কায়দায় গাজা পাচার করতে গিয়ে আটক দুই পাচারকারী। চুরাইবাড়ি থানার সামনে অসম…

25 mins ago

যুদ্ধে ট্রাম্প কোথায়!!

যদিও সংঘর্ষ বিরতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার শুরুবাত হইতেছে তথাপিও এই কথা আগাম বলা…

30 mins ago

রক্তশূন্যতার সমস্যায় বেশি ভোগেন মহিলারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হল রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ…

34 mins ago

দূষিত বাতাস থেকে শিশুদের দূরে রাখুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আজকের দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে গোটা বিশ্বজুড়ে।তার ওপর নগরায়ন, শিল্পায়ন এসবের প্রভাবও…

38 mins ago