চাপ অন্দরে বাহিরে!!

 চাপ অন্দরে বাহিরে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হইতেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান নাই।এনডিএর শরিক নির্ভর হইয়া অধ্যক্ষ নির্বাচনের ঝক্কি কাটাইতে হইতেছে। তাহার উপর সংসদ ডাকাইয়া নিজের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করিবার অঙ্কুশ তো রহিয়াই গেল। ধরিয়া লওয়া যাইতেছে, সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের পথে কোনও বাধা নাই। কিন্তু দলকে মোদি সরকার আনিয়া দিতে পারেন নাই মোদিশাহ জুটি। এই লইয়া দলের ভেতরের অসন্তোষও মাঝে মাঝেই উঁকি দিতেছে। মোদি এনডিএর প্রধান হইয়াছেন, কিন্তু বিজেপির সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচনের সভা এড়াইয়া যাইতেছেন, ইহাও দলের অভ্যন্তরে এক অসংলগ্ন চিত্র। বিষয়টি যেহেতু দলের আভ্যন্তরীণ তাই ইহা লইয়া অধিক মাথাব্যথা করিবার কিছু নাই। সংসদে সরকারের গরিষ্ঠতা প্রমাণ হইলে বুঝিতে পারা যাইবে আপাতত মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফাঁড়া কাটিয়াছে। সরকার বর্ষাকালীন অধিবেশন ডাকিয়া স্বাভাবিক কাজ শুরু করিবে। এই অবধি অনুমান করা যাইলেও এর পরের বিপত্তি অনুমান করা যাইতেছে না। নির্বাচন কমিশন এই সময়ে চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি লইতেছে, যদিও লোকসভা নির্বাচনের গণনা লইয়া সকল বিতর্কের অবসান এখন পর্যন্ত হয় নাই। জানা যায় কয়েকটি আসনের ফলাফল পুনরায় গণনার দাবির সপক্ষে মতামত দিতে যাইতেছে নির্বাচন কমিশন।
পুনরায় গণনায় ফল যদি ভিন্ন হয় তাহা হইলে দেশে নির্বাচনি বিপত্তি বাড়িবে, ইহাতে সন্দেহ নাই। বিরোধী জোট, কোথাও কোথাও এনডিএ শরিকেরাও ফলাফল লইয়া তাদের অবিশ্বাস ব্যক্ত করিতেছে, তখন তাহারাও পুনরায় গণনার দাবি জানাইতে থাকিবে। এই সকলই অনুমান। তবে যে চার রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন আসন্ন সেই সকল রাজ্যের পরিবেশ পরিস্থিতি মোদি বা বিজেপির অনুকূলে নাই। প্রথমেই জম্মু কাশ্মীরের কথা বলা চলে। যদিও বিশ্ব যোগা দিবসে প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরে দিন কাটাইলেন, যোগচর্চা করিলেন। কাশ্মীরি কন্যাদিগের সঙ্গে তাঁহার নিজস্বী চিত্র সংবাদ মাধ্যমে দেখা গেল। এই কাশ্মীর লইয়া গত দুই দুইটি মোদি সরকারের প্রচার ছিল সীমাহীন। মোদিশাহের সমর্থকেরা সরকারের তিনটি প্রধান কাজের মধ্যে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারায় বিলোপকে উল্লেখযোগ্য বলিয়া দাবি করিতেন। অথচ লোকসভার নির্বচনে সেই কাশ্মীরে নিজেদের দলের প্রার্থী দিতে পারিল না বিজেপি। না চাহিলেও কয়েকজন প্রার্থীকে সমর্থন জানানো হইল, বাস্তবে তাহারা কেহই ভোটে জিতিয়া আসে নাই। এই রাজ্যে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা আর ফিরাইয়া দেওয়া হয় নাই। বিধানসভার নির্বাচনও করানো হয় নাই। আদালত সরকারকে বলিয়া রাখিয়াছে এই বৎসর সেপ্টেম্বরে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে নির্বাচন করিতে হইবে। নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তুতি যে যথার্থই প্রয়োজনীয় তাহা বুঝা গেল বিশ্ব যোগা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর সফরে। অন্যদিকে অক্টোবরে নির্বাচন করিতে হইবে মহারাষ্ট্রেও। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে উত্তরপ্রদেশের চাইতেও অধিক নিরাশ করিয়াছে মহারাষ্ট্র। ফলাফলের এই শোচনীয় অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে নামিয়া আসিয়াছে সেই রাজ্যে এনডিএ বা মহাযুতির মধ্যেকার অসন্তোষ। এই অসন্তোষ শেষপর্যন্ত সেই রাজ্যে কবিগুরুর “একলা চলো” গান স্মরণ করাইতেছে। লোকসভা নির্বাচনে হরিয়ানায় বিজেপির একচ্ছত্র শেষ হইয়া গিয়াছে। আধাআধি আসন বিজেপি, কংগ্রেসের। এই বৎসর বিধানসভার ভোট হইবে হরিয়ানায়। লোকসভার ফলাফলের নিরিখে বিধানসভার ফলাফল যে কোনও দিকে হেলিয়া পড়িতে পারে। ঝাড়খণ্ডের বিধানসভার মেয়াদও এই বৎসরেই শেষ হইতেছে। নির্বাচন এই বৎসর করাইতে হইবে। মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে রাখিয়া কিংবা জেল হইতে বাহির করিয়া, যে প্রকারেই ঝাড়খণ্ডের নির্বাচন হোক না কেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোদিকে যথেষ্ট বেগ পাইতে হইবে।এই চার রাজ্যের ফলাফল ভালো না করিতে পারিলে মোদিশাহের ওপর চাপ আরও বাড়িতে থাকিবে। কি ঘরে কি বাহিরে চাপ আরও তীব্র হইতে থাকিবে। বিরোধী ইন্ডিয়া জোট একদিকে দিনে দিনে শক্তি সঞ্চয় করিতে থাকিবে অন্যদিকে এনডিএ এবং বিজেপির অন্দরেও বাড়িতে থাকিবে অসন্তোষ। আজ মোদিশাহের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ৩৭০ পরবর্তী কাশ্মীর। মোদির সামনে ইহা বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ এই রাজ্যে বিজেপির ফলাফল শোচনীয় হইলে মোদির ভাবমূর্তি লইয়া দেশের বাহিরেও প্রশ্ন উঠিবে। ৩৭০ রদ এবং কাশ্মীর রাজ্য হইতে লাদাখ আলাদা করিবার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের সময়ে উপত্যকার সকল রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীদের গারদে পোরা হইয়াছিল। সেই সকল দলের কেহই আর বিধানসভা নির্বাচনে মোদি শাহের হাত ধরিবে না, লোকসভায়ও ধরে নাই। আবার একাল চলো গাহিয়াও ভোটে জেতা বিজেপির পক্ষে সম্ভব হইবে না। এক কথায় ৩৭০ পরবর্তী কাশ্মীরের প্রথম ভোটে বিজেপি যদি কিছু করিতে না পারে তাহা হইলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বিশেষত এই উপমহাদেশে মোদির মর্যাদায় আঁচড় ফেলিবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.