চারশ বস্তা চাল বেহদিশ ! কেন্দ্রীয় কারাগারে বড় ঘোটালা হাতেনাতে ধরলেন খোদ মন্ত্রী

 চারশ বস্তা চাল বেহদিশ ! কেন্দ্রীয় কারাগারে বড় ঘোটালা হাতেনাতে ধরলেন খোদ মন্ত্রী
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি || বিশালগড় কেন্দ্রীয় কারাগারে এবার বড় ধরনের কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে এলো।বিস্ময়কর ঘটনা হলো, এই কেলেঙ্কারি হাতেনাতে ধরেছেন খোদ কারামন্ত্রী শান্তনা চাকমা। দুর্নীতির নমুনা দেখে মন্ত্রীর নিজেরই চোখ কপালে উঠেছে। তড়িঘড়ি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত রিপোর্ট জমার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। নির্দেশ মোতাবেক আজ বুধবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সিলবন্দি হয়ে আইজি প্রিজনের কাছে গেছে বলে খবর। সেখান থেকে রিপোর্ট যাবে মন্ত্রীর টেবিলে।কেন্দ্রীয় কারাগারে এতবড় দুর্নীতি দেখে মন্ত্রীর নিজেরই মাথা ঘুরছে বলে খবর। ছয়শ বস্তা চাল ক্রয় করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।কাগজেপত্রে, স্টক রেজিস্টারে সেই চালের উল্লেখ রয়েছে। ছয়শ বস্তা চাল, প্রতি বস্তা ৫০ কেজি করে বুঝে পেয়েছেন বলে স্টক রেজিস্টারে স্বাক্ষরও করেছেন জেলার, ডেপুটি সুপার এবং স্টোরকিপার। এই পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। কিন্তু আসল ঘটনা হলো কেন্দ্রীয় কারাগারের স্টোরে মাত্র দুশো বস্তা চাল আছে।চারশ বস্তা চালের কোনও হদিশ নেই।মোদ্দা কথা, দুশো বস্তা চাল স্টোরে মজুত করা হলেও চারশ বস্তা চাল মজুত করা হয়নি।অথচ রেজিস্টার থেকে শুরু করে সর্বত্র ছয়শ বস্তা চাল ক্রয়ের এন্ট্রি রয়েছে।কারামন্ত্রী নিজে গিয়ে এই দুর্নীতি হাতেনাতে ধরেছেন। এরপরই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ওই চারশ বস্তা চাল কোথায়? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয়,ওই চারশ বস্তা চাল অন্যত্র রয়েছে,তাহলে দায়িত্বে থাকা জেলার, ডেপুটি সুপার, স্টোরকিপার কী করে স্টক রেজিস্টারে হয়শ বস্তা চাল স্টোরে মজুত করা হয়েছে বলে এন্ট্রি করলেন এবং তাতে স্বাক্ষর করলেন?বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, আগরতলা মহারাজগঞ্জ বাজারের ঠিকাদারি সংস্থা গোপাল গোবিন্দ ব্যবসায়ী সমিতি থেকে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে এই সুপার ফাইন চাল ক্রয় করেছে কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।প্রতি বস্তা চালের দাম আঠারশো টাকা। শুধু চালের গরমিলই নয়, কন্টিজেন্ট ওয়েজেস এর অর্থও অবৈধভাবে খরচ করা সহ একাধিক অনিয়ম মন্ত্রীর নজরে এসেছে। গত ১১ মে কারামন্ত্রী শান্তনা চাকমা আইজি প্রিজন অদিতি মজুমদারকে সাথে নিয়ে আচমকা বিশালগড় কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে যান।মন্ত্রী বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। ওই সময়ে মন্ত্রী কারাগারের রেশন সামগ্রী ক্রয় এবং তার ব্যবহারের সব ধরনের স্টক রেজিস্টার থেকে বিল রেজিস্টার ইত্যাদি খতিয়ে দেখতে গিয়েই এই বড় ধরনের অনিয়মের হদিশ পান।যা দেখে মন্ত্রীর মাথাও ঘুরে যায়। জানা গেছে, গত বছরের উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ছয়শ বস্তা (৫০×৬০০) সুপার ফাইন চাল ক্রয় করে। কিন্তু স্টোরে রয়েছে মাত্র দুশো বস্তা চাল। চারশ বস্তা চাল কোথায় তার কোনও হদিশ বা ব্যাখ্যা নেই।ক্ষুব্ধ মন্ত্রী কারাসচিব তাপস রায়কে বিষয়টি জানিয়ে সত্বর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনজনের কমিটি গঠন করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। কমিটিতে রয়েছেন, বিশালগড় এসডিএম, অ্যাডিশনাল এসডিএম এবং খাদ্য দপ্তরের ডিসিএম। তিনজনের কমিটি তদন্ত শেষ করে পোর্ট জমা দিয়েছেন আইজি প্রিজনকে। এরই মধ্যে গতকাল ১৬ মে কেন্দ্রীয় “রাগারের স্টোরকিপার দেবরাজ সিন্হাকে কাঞ্চনপুর মহকুমা কারাগারে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।শুধু তাই নয়, আরও কয়েকজন শাস্তির কোপে পড়ে রেন বলে খবর।বিস্ময়কর ঘটনা হলো,এই সীমাহীন অনিয়ম প্রকাশ্যে আসার পরই মূল চক্রীর
একজনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার জন্য রাত দিন এক করে দৌড়ঝাপ করে চলেছেন। অভিযোগ,এতবড় অনিয়মের পিছনে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার। তার ইশারা ছাড়া এতবড় অনিয়ম সংঘটিত করা একা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।সব থেকে বড় কথা তিনি নিজে স্টক রেজিস্টারে স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগ, তিনি এখন স্টোরকিপারের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজে পার পেতে চাইছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কি এই দায় এড়াতে পারেন?দাবি উঠেছে, অন্তত গত এক বছরের কেন্দ্রীয় কারাগারের যাবতীয় বিষয় নিয়ে স্পেশাল অডিট করানোর। তাহলে আরও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেখার কারা দপ্তর কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.