চার আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল বামফ্রন্ট
আসন্ন উপ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলো বামফ্রন্ট ।সোমবার মেলারমাঠ সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে , চারটি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয় । তিনটি আসনে সিপিআইএম দলের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে । আর একটি আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে প্রার্থী দিয়েছে বামফ্রন্ট । ৬ আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে মজুমদারকে । ৮ টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্রে ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রঘুনাথ সরকারকে প্রার্থী করা হয়েছে । বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে ৪৬ সুরমা তপশিলি জাতি সংরক্ষিত বিধানসভা আসনে লড়াই করবেন সিপিআইএম প্রার্থী অঞ্জন দাস । ৫৭ যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের তরফে লড়াই করবেন সিপিআইএম প্রার্থী শৈলেন্দ্ৰ চন্দ্ৰ নাথ । এদিন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটির আহ্বায়ক নারায়ণ কর বলেছেন- সুষ্ঠু অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীরা বিপুলভাবে জয়ী হবেন । রাজ্যের মানুষ নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারলেই শাসক নিজেরা বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত ।
তার অভিযোগ , বিজেপি অপশাসনে রাজ্যে কর ভোটের নামে গত চার বছরে শুধুমাত্র প্রহসন হয়েছে । রাজ্যের লোকসভা নির্বাচন , পঞ্চায়েত ভোট ও সর্বশেষে পুর ও নগর নির্বাচনে শুধুমাত্র ভোট লুট , জবরদখল , ছাপ্পা ভোট হয়েছে । রাজ্যের মানুষ সাংবিধানিক অধিকার ভোট দিতে পারলেন না । এই ভোট লুটের দৌলতে দেশব্যাপী কলঙ্কিত হয়েছে ত্রিপুরা । বিজেপির অপশাসনে ভোটের নামে লুটপাটের জন্য ২০১৯ সালে রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব ত্রিপুরা আসনে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয় । অন্যদিকে এক হাজারেরও বেশি বুথে র্যাগিং ও ছাপ্পা ভোটের জন্য লোকসভার পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে অধিকাংশ বুথে পর্যন্ত পুনঃভোট করা হয় । কারণ এটা ভোটের নামে প্রহসন । তার অভিযোগ শাসকদল বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য রাজ্যের নির্বাচক মণ্ডলীর উপর আরেকটি নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে । যদিও আর দশ মাস পরে রাজ্যের সাধারণ নির্বাচন । কিন্তু আবার সিমনা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে না । এডিসির ভিলেজ কমিটির নির্বাচনও রাজ্যে হচ্ছে না । আইপিএফটির বিধায়ক দুইবার পদত্যাগপত্র দিলেন । তার দলও বিধায়ককে বহিষ্কার করেছে । কিন্তু এরপর সিমনা বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেই । অন্যদিকে ভিলেজ কমিটি নির্বাচন না হওয়ার কারণে উপজাতি এলাকা সর্বস্বান্ত হচ্ছে ।
কিন্তু এরপর নীরব শাসকদল বিজেপি । নারায়ণ করের অভিযোগ একজন বলেছিলেন রাজ্যে তিনি ২০৪৭ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন । কিন্তু তিনি পাঁচ বছরই থাকতে পারলেন না । তার দলই তাকে সরিয়ে দিল । কারণ ২০১৮ সালের ৩ মার্চ থেকে রাজ্যব্যাপী সন্ত্রাস চলছে । বিজেপিশাসনে ত্রিপুরায় দেশের সংবিধান কাজ করছে না । গণতন্ত্র , আইনের শাসনের অস্তিত্ব নেই । ফ্যাসিবাদী হামলা বর্তমানেও অব্যাহত আছে । সিপিএম দল সহ অন্যান্য গণসংগঠনের রাজ্য , মহকুমা , অঞ্চল অফিসে অগ্নিসংযোগ , লুটপাট , বুলডজার চালাল শাসকদল । দলীয় কর্মী খুন , কর্মী সমর্থক নেতৃত্ব বাড়িতে হামলা , হুজ্জতি , লুটপাট বর্তমানেও চলছে । অন্যদিকে রাজ্যের গ্রাম পাহাড় শহরে চরম সঙ্কট চলছে । মানুষের কাছে কাজ নেই । খাদ্যের সঙ্কটে সন্তান বিক্রি হচ্ছে । অনাহারে মৃত্যু পর্যন্ত হলো । বেকারের কাছে চাকরি নেই । শিক্ষক- কর্মচারী , শ্রমিক , কৃষক , ক্ষুদ্র – মাঝারি ব্যবসায়ী সহ সর্বস্তরের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিজেপি । বছরে ৫০ হাজার চাকরি , ভিশন ডকুমেন্ট প্রতারণার দলিলে পরিণত হয়েছে । সামাজিক ভাতা , রেগার মজুরি পর্যন্ত গায়েব। উল্টো রেগা , টুয়েপের কাজ বন্ধ । রাজ্যব্যাপী দুর্নীতি প্রশাসনিক মর্যাদা পেয়েছে । তাই এখন মুখ্যমন্ত্রী বদলের প্রলোভনে রাজ্যের মানুষ আর পড়বেন না । উল্টো বিজেপির বিদায় জানাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজ্যের মানুষ ঘরে ঘরে প্রস্তুত রয়েছেন । তার অভিযোগ রাজ্যের একাংশ পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে । তাই এদের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে না । এই কারণে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে । কারণ এখন পুলিশ ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে । বামফ্রন্টের দাবি প্রত্যেকটি বুথকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করা হোক । প্রত্যেক বুথে থাকতে হবে ওয়েব কাস্টিং । কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্বে উপনির্বাচন করতে হবে । বিরোধীদলের নেতা , কর্মী , সমর্থক সহ নির্বাচক মণ্ডলীকে কঠোর নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে । যাতে রাজ্যের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে । এদিকে চারটি কেন্দ্রের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটি । এদিন আরএসপি , ফরোয়ার্ড ব্লক , সিপিআইর নেতৃত্ব সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ।