চিনকে টপকে যেতে পারে ভারত

 চিনকে টপকে যেতে পারে ভারত
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

জনঘনত্বে চিনকে টেক্কা দিতে চলেছে ভারত । একদিকে যেমন বিগত কয়েক বছর ধরেই চিনের জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে , অন্যদিকে , ভারতে ক্রমশ জনঘনত্ব বেড়েই চলেছে । ২০১৯ সালে রাষ্ট্র সংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছিল , ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের জন সংখ্যা ২৭৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৭.৩ কোটি বৃদ্ধি পাবে । তবে চিনা জনগণনাবিদদের মতে ২০২৭ সালের আগেই ভারত বিশ্বের সবথেকে বেশি জনবহুল দেশে পরিণত হবে । কিন্তু এখন যে হারে জন সংখ্যা বাড়ছে , তাতে এক বছরেই হয়তো জন সংখ্যার নিরিখে ভারত চিনকে টপকে যাবে।
২০১৯ সালের রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টেও বলা হয়েছিল , ২০২৭ সালের মধ্যেই জন সংখ্যার চিনকে টপকে যাবে ভারত ।

চিনা বিশেষজ্ঞদের মতে , ভারতে জন বিস্ফোরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে । ২০১৯ সালে ভারতে আনুমানিক জন সংখ্যা ছিল ১.৩৭ বিলিয়ন অর্থাৎ ১৩৭ কোটি , সেখানেই চিনের জনসংখ্যা ছিল ১.৪৩ বিলিয়ন অর্থাৎ ১৪৩ কোটি । প্রতি ১০ বছর অন্তর চিনে যে জনগণনা বা আদমসুমারি হয় , তার রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ।
সেই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে , চিনের জনসংখ্যা সব থেকে কম গতিতে বাড়ছে । ২০১৯-২০২০ সালে চিনে নিট জন সংখ্যা বেড়েছিল ১ কোটি ৪১ হাজার ১৭৮। বর্তমানেও চিন বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ হলেও আগামী বছর থেকেই সেই জনসংখ্যা কমবে বলে অনুমান ।

এদিকে , জনসংখ্যা কম হওয়ায় চিনের শ্রমিক সংখ্যাতেও ঘাটতি দেখা যাবে , যার সরাসরি প্রভাব মানুষের গ্রহণ ক্ষমতায় পড়বে এবং তা গোটা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে । চিনের সরকার পরিচালিত ‘ গ্লোবাল টাইমস ডেইলি’তে চিনা জনগণনাবিদদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে , ভারতের জন সংখ্যা রাষ্ট্রসংঘের অনুমান করা বছরের আগেই চিনকে টপকে ফেলবে । এর অন্যতম কারণ হল , আগামী বছর থেকে চিনের জন্ম হার , অর্থাৎ যে হারে মহিলারা গড়ে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন , তা হ্রাস পাবে । অন্যদিকে ভারতের জন্মহার তুলনায় বেশি হওয়ায় ২০২৭ নয় , ২০২৩ বা ২০২৪ সালের মধ্যেই তা জন সংখ্যায় চিনকে টপকে ফেলবে ।

রাষ্ট্রসংঘের ২০২০ সালের বিশ্ব জন্মহার ও পরিবার পরিকল্পনার রিপোর্ট অনুযায়ী , ২০১৯ সালে বিশ্বের জন্ম হার ছিল ২.৫ । একটি রিপোর্ট বলছে , এ বছরের নভেম্বরে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ছাড়াবে । ১৯৫০ – এর পর থেকে গোটা বিশ্বের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে গিয়েছিল । ২০২০ সালে তা এক শতাংশের নিচে নেমে যায় । কিন্তু নতুন এই রিপোর্ট বলছে , ২০৩০ – এর মধ্যে জনসংখ্যা ছাড়াবে ৮৫০ কোটি ২০৫০ সালে তা গিয়ে হবে ৯৭০ কোটি। রাষ্ট্রসংঘের এই রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যে উদ্বেগ বাড়বে ভারতে । খাদ্য , বাসস্থান ও কর্মসংস্থান নিয়ে এমনিতেই রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে দেশকে । দিনকে দিন কমে আসছে চাষযোগ্য জমি ।

ফলে জনবিস্ফোরণ যে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ডেকে আনবে তা বলাই বাহুল্য । বিশ্লেষকদের একাংশের মতে , দ্রুত আর্থিক উন্নতি করলেও জন সংখ্যা বৃদ্ধি ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ । ‘ একটি মাত্র সন্তান ‘ নীতির মাধ্যমে জন সংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে চিন । তবে গণতান্ত্রিক ভারতে এহেন নীতি কার্যকরী করা সহজ নয় । সঞ্জয় গান্ধীর আমলেও ‘ নির্বীজকরণ ’ করা নিয়ে ভারতে কম জল ঘোলা a হয়নি । ফলে শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমেই জন সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । চিনের পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক লিয়াং জিয়ানজ়াং জানান , আগামী বছরগুলিতে চিনের জন্মহার ক্রমশ কমতে থাকবে এবং বিশ্বের সর্বনিম্ন জন্মহারযুক্ত দেশে পরিণত হবে ।

জন সংখ্যার নিরিখে সবচেয়ে এগিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া । এখনও চিনের জন সংখ্যার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি । বিশ্বের পুরো জন সংখ্যার ২৬ শতাংশের বসবাস এ অঞ্চলেই । তার মধ্যে চিন এবং ভারতে ১৪০ কোটির বেশি । রিপোর্ট অনুযায়ী , এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলেই জন সংখ্যা বৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি । ভারত ছাড়াও সে তালিকায় রয়েছে , কঙ্গো , মিশর , পাকিস্তান , নাইজিরিয়া , ইথিয়োপিয়া এবং তানজানিয়া ।
উল্লেখ্য , বিগত চার বছর ধরেই চিনের জন্মহার ক্রমাগত চলেছে । ২০২০ সালে সে দেশে মোট ১২ মিলিয়ন অর্থাৎ ১.২ কোটি শিশুর জন্ম হয়েছে ।

এই বিষয়ে অধ্যাপক কমে লিয়াং বলেন , ‘ বর্তমান তথ্য অনুযায়ী , আগামী ১০ বছরে ২২ থেকে ৩৫ বছর লয়সী মহিলার সংখ্যা ৩০ শতাংশেরও বেশি কমে যাবে । মূলত ২২ থেকে ৩৫ বছর বয়সেই মহিলারা সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন।
জনসংখ্যার সঙ্কট দেখা দেওয়ার কারণেই ২০১৬ সালে পরিবার পিছু এক সন্তানের নীতিতে পরিবর্তন আনা হয় এবং দুটি সন্তান ধারণের অনুমতি a দেওয়া হয় । কিন্তু এর প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি , কারণ অধিকাংশ চিনা নাগরিকই দ্বিতীয় সন্তান নিতে অস্বীকার করে । আগামী দিনে চিনে পরিবার পিছু সন্তান ধারণের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.