চ্যালেঞ্জের উপভোট

 চ্যালেঞ্জের উপভোট
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আগামী ২৩ জুন রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ – নির্বাচন হবে । এই ভোটের বিষয়ে ইতিমধ্যে রাজ্যবাসী অবগত হয়ে গেছে । কেন এই উপনির্বাচন ? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে , চার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তিন কেন্দ্রে এই ভোট একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত । আরও স্পষ্ট করে বললে , জনগণের উপর আরেকটি ভোট চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু রাজনীতির চাওয়া পাওয়া , লাভ – লোকসান , ইচ্ছা – অনিচ্ছা , ভালো – মন্দ , পছন্দ – অপছন্দের হিসেব কষতে গিয়েই তিন বিধানসভা কেন্দ্রে ( সুরমা , আগরতলা অনেকটা অকাল বর্ষণের মতোই । টাউন বড়দোয়ালী ) ফের একবার নির্বাচন ডেকে আনা হয়েছে । বিষয়টি অনেকটা বর্ষণের মতোই। এই নিয়ে বিস্তারিত বলার কোনও প্রয়োজন বোধ হয় নেই । কেন না , রাজ্যবাসী সবকিছুই জানে , সবকিছু বুঝে । কেন ভোট ? কি কারণে ভোট ? তবে একটি কেন্দ্রে ( যুবরাজনগর ) উপ – নির্বাচন অনিবার্য । কারণ ওই কেন্দ্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ( বিধায়ক ) প্রয়াত হয়েছেন । মৃত্যুর উপর কারও হাত নেই । তাই নিয়ম অনুযায়ী যুবরাজনগরে উপ – ভোট অনিবার্য । কিন্তু অন্য তিন কেন্দ্রে র ভোটকে সেই অর্থে অনিবার্য বলা যায় না । সে যাই হোক , এই নিয়ে কথা বাড়িয়ে আর লাভ নেই ।

এবার আসল কথায় আসা যাক ।দেশের নির্বাচন কমিশন এমন এক সময়ে ভোটে ঘন্টি বাজিয়েছে , যে সময়ের মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে অনেক উত্থান – পতন হয়ে গেছে । রাজনীতির পট পরিবর্তন হয়ে গেছে । বদল হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ । পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডা . মানিক সাহা । যখন সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল , অন্তত দলের দাবি মোতাবেক । তখন কেন আচমকা মুখ্যমন্ত্রী বদল করা হলো ? কেন ২০১৮ সালের ত্রিপুরা জয়ের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করিয়ে , তার চেয়ারে দলের প্রদেশ সভাপতিকে বসানো হলো ? বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারনের দাবি নিয়ে দলেরই কিছু বিক্ষুব্ধ বিধায়ক যখন আওয়াজ তুলেছিল , দিল্লীতে ধরনা দিয়েছিল । দিনের পর দিন ‘ বিপ্লব হটাও ’ এর স্লোগান নিয়ে দিল্লীতে দরবার করেছিল , তখনও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বি লবের উপরই ভরসা রেখেছে । উল্টো বিপ্লবকেই শক্তিশালী করেছে । ওই সব দলের অভ্যন্তরের ক্ষমতার লড়াই যখন অনেকটাই স্থিমিত হয়ে এসেছিল , তখন কি এমন ঘটলো যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিপ লব দেবকে পদত্যাগ করতে বলা হলো ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কিন্তু আজও রাজ্যবাসী যেমন পায়নি , তেমনি দলের নেতা , মন্ত্রী , বিধায়ক কার্যকর্তা , কর্মী কেউই পায়নি । আজও সকলে অন্ধকারে ।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই , মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে আচমকা বিপ্লব কুমার দেবের পদত্যাগ , রাজ্য বিজেপির মনোবলে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে । ধাক্কা লেগেছে , সেই সব মানুষের মনেও যারা বিপ্লব দেবকে পছন্দ করে , ভালোবাসে । এমন একটি পরিস্থিতিতে রাজ্যে চার কেন্দ্রে উপ – নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । কাঙ্ক্ষিত হোক আর অনাকাঙ্ক্ষিত , এই উপভোটকেই কিন্তু রাজ্যের সব রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক মহল সেমিফাইনাল হিসাবে বিবেচনা করছে । কারণ , এই উপভোট থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ২০২৩ ফাইনালে কার পাল্লা ভারী । এমন এক চ্যালেঞ্জিং এবং কঠিন পরিস্থিতিতে শাসকদল বিজেপি ‘ বিপ্লবহীন ’ ভোটের লড়াইয়ে নামতে চলেছে । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে , বিপ্লবহীন শাসকদল এই লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারবে তো ? এই প্রশ্নের জবাব হয়তো সময়েই মিলবে । কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন । আমরা সেটা মন থেকে স্বীকার করি বা নাই করি পছন্দ করি বা না করি । বিশ্বাস করতে চাই বা না চাই সত্যকে আড়াল করা যায় না । যাবেও না । সত্য একদিন না একদিন প্রকাশ্যে আসবেই। তাই বিপ্লব দেবহীন উপ – নির্বাচন শাসকদলের সামনেও একটি অনাকাঙ্ক্ষিত কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই । চার কেন্দ্রে ভালোভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে ২০২৩ এর ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল কি হবে ? তা বোধ বলার প্রয়োজন নেই । উত্তরটা সকলের জানা ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.