চড়া বেকারত্ব।।

 চড়া বেকারত্ব।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রে প্রথম দফায় ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বছরে দেশে ২ কোটি কাজের বন্দোবস্ত করা হবে।তারপর বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা তো দূরের কথা,বরং একে একে নোট বাতিল এবং জিএসটি চালুর তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের জেরে দেশে বহু মানুষ কাজ হারান। সেই থেকে শুরু হওয়া দেশে বেকারত্বের ধাক্কা সরকারকে পিছু ছাড়ছে না।বরং দ্বিতীয় বার কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফেরার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।প্রথমে ২০১৯ সালে দুনিয়া জুড়ে মহামারির থাবা
দেশের অর্থনীতির উপর ছায়া ফেলতে শুরু করে। কিন্তু এক বছর বাদেই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে যে তীব্রগতিতে আছড়ে পড়ে তাতে দেশের অর্থনীতি কার্যত বড়সড় সংকটের মুখে পড়ে যায়।একদিকে নোট বাতিল এবং জিএসটি চালুর জেরে কাজ হারান বহু মানুষ।এবার কোভিড মহামারির পরপর ধাক্কায় পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে যায়। অর্থনীতির এই অসহায়ত্ব ও শ্লথগতির চিত্র প্রকাশ্যে ধরা পড়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষায়।ছোট ও মাঝারী বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে। ছাঁটাই হন বহু কর্মচারী।পরিযায়ী শ্রমিকের দল কোভিডের জেরে নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন।কিন্তু মহামারি কেটে যাওয়ার পর তারা আর হারানো কাজ ফিরে পাননি।এর সবকিছুর প্রভাব পড়ে বাজারে।আর্থিক মন্দার জেরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। বাজারে চাহিদা কমতে থাকে
ভোগ্যপণ্যের।বাজারে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বিস্কিট কোম্পানি থেকে শুরু করে গাড়ি নির্মাতা সংস্থার উপরও এর প্রভাব পড়ে।শুরু হয় কর্মী ছাঁটাই।এভাবেই দেশে বেকারত্বের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে।বেকারত্বের এই ধাক্কা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে দেয়,যখন অনিয়মিত বৃষ্টির জেরে গ্রামে কৃষিজাত ফসল উৎপাদন কমতে থাকে।সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি তাদের যে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাতে দেশে কাজের বাজার ও বেকারত্বের মলিন দশা প্রকট হয়ে ওঠে। এনএসএস ও তাদের সমীক্ষায় দেখিয়েছিল ২০১৭-১৮ সালে ভারতে বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশ।এই রিপোর্ট নিয়ে সারা দেশে শোরগোল পড়ে যায়।কারণ এটাই ছিল দেশের বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব।অথচ দিন যত যাচ্ছে,অর্থনীতির চেহারাটা ততই আরও মলিন হয়ে উঠছে।সিএমআইই অর্থাৎ সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে এ বছর অক্টোবর মাসে দেশের বেকারত্ব তিন মাসের সর্বোচ্চ বেড়ে ১০ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।রিপোর্টে বলা হয়েছে,অক্টোবর মাসে দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ১০.৮২ শতাংশ।যা আগের তুলনায় ২ শতাংশের কিছু বেশি।গত বছর অক্টোবর মাসে এই বেকারত্বের হার ছিল ৮.৪৪ শতাংশ।আর মাত্র মাস পাঁচেক বাদেই দেশের সাধারণ নির্বাচন।লোকসভার ভোটের আগে এখন চলছে ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের জোরদার লড়াই।এর ঠিক প্রাক্কালে দেশের এই বেকারত্ব বৃদ্ধির খবর নিঃসন্দেহে কেন্দ্রের শাসকের জন্য সুখের খবর নয়।এই পরিসংখ্যান নিশ্চিতভাবেই বিজেপির জন্য চিন্তা বাড়াবে।কারণ চলতি বছর টানা ৬ মাস ধরে দেশে বেকারত্বের হার ৭-৮ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।যা অবশ্যই উৎকণ্ঠার। কারণ পরিসংখ্যানকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করলে যা দাঁড়ায় তা হলো দেশে এখন প্রতি ১০ জন যুবক-যুবতীর মধ্যে অন্তত একজন রোজগারহীন এবং কর্মহীন। এখানে একটা কথা বলা খুবই প্রাসঙ্গিক যে, এই তথ্যে বেকার হিসাবে শুধু তাদেরকেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যারা কাজ চেয়েও কাজ পাননি। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার মুখে যতই দেশজুড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করে চললেও,বাস্তব পরিস্থিতি এখনো ভিন্ন।২০২২ সালের লকডাউনের জেরে দেশে বেকারত্ব ও কাজের বাজারের যে হাল হয়ে উঠেছিল সেই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে দেশ এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাও খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হলেও পরিস্থিতি সামালতে না সামালাতেই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহভাবে আছড়ে পড়ায় তা কর্মসংস্থানকে যে ধাক্কা দিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার সেই পরিস্থিতি এখন শোধরাতে পারেনি। বর্তমানে ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে রোজগার মেলা করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।কিন্তু তাতে আদৌ পরিস্থিতি পাল্টায়নি। এরই মধ্যে ভোটের বাজারে বিরোধী দল বেকারত্ব ইস্যু নিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়েছে। যদিও বিজেপি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে বলছে, ৫ রাজ্যের মধ্যে ৩ রাজ্যেই বর্তমানে ক্ষমতায় বিরোধীরাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো লোকসভা ভোটে বেকারত্বের এই করুণ চিত্র কি আদৌ বিজেপির আত্মপক্ষের সমর্থনের রাজনীতিতে কোন প্রলেপ দিতে পারবে? কারণ বিমুদ্রাকরণ এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালু সহ কোভিডের ধাক্কাকে যতই আর্থিক মন্দা, কর্মহীনতা এবং বেকারত্বের কারণ হিসাবে দেখা হোক না কেন, আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ঢিলেমি এবং কোন কোন রাজ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে যেভাবে গ্রামীণ রোজগার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে,এই ঘটনাক্রমও গ্রামীণ কর্মসংস্থানের অভাবের জন্য অন্যতম দায়ী।একই সঙ্গে গোটা দেশে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রকল্প বাবদ বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ।এতে গ্রামীণ এলাকায় কর্মহীনতা বাড়ছে। পরিযায়ী শ্রমিক হন্যে হয়ে কাজের সন্ধানে ঘুরছেন। যার নীট ফল দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.