জনপ্রতিনিধির যাপন!!

 জনপ্রতিনিধির যাপন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-একজন জনপ্রতিনিধি কি শুধুই একজন রাজনীতিক? এর বাইরে কি তার ব্যক্তিগত জীবনচর্যা বা নিজস্ব যাপন থাকতে পারে না ?অবশ্যই পারে।কারণ দিনের শেষে তিনি একজন স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক।অন্যকে আঘাত না করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা সাধারণ নাগরিকের মতো তারও মৌলিক অধিকার।তবে তদপরবর্তী প্রশ্নটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ,সেটি হল,একজন সাধারণ নাগরিক নিজস্ব অভিরুচি অনুযায়ী যতখানি স্বাধীন, সার্বভৌম জীবনযাপন করতে পারেন, একজন জনপ্রতিনিধি ততখানি করতে পারেন কি না।বস্তুত এই প্রশ্নটি নতুন করে সামনে এসেছে দুই সাংসদ কংগ্রেসের শশী থারুর এবং তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রর ব্যক্তিগত যাপনের কিছু যুগল ছবি সামনে আসায়।রবিবাসরীয় সকালে সেই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বা মতান্তরে করা হয়েছে।বিষয়টি ইতিমধ্যে টেলিভিশনের সান্ধ্য চন্ডীমণ্ডপে আলোচিত হচ্ছে, সমাজ মাধ্যমে ঘুরছে।দেখা বোঝা যাচ্ছে, রাজনীতির বাইরে সম্ভবত ব্যক্তিগত স্তরে একান্ত যাপনের কিছু ছবি। কারা এই ছবি ভাইরাল করল, এর নেপথ্যে কারা রয়েছে তা এখনও অজানা।সম্ভবত এই ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে কেউ কেউ অন্য কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন।পাশাপাশি বসে দুই সাংসদকে সহাস্যে পানপাত্র হাতে দেখা গেছে (যদিও ছবিগুলির সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক সংবাদ)।অন্য একটি ছবিতে দেখা গেছে, তৃণমূল সাংসদের হাতে সিগার, অন্য একটি ছবিতে দুই সাংসদ আলিঙ্গনরত।পৃথক রাজনৈতিক দলের সাংসদ হলেও দিল্লীর রাজনৈতিক অলিন্দে মহুয়া ও শশী বন্ধু বলেই পরিচিত।এই বন্ধুত্বের বৃত্তে আরও সাংসদ রয়েছেন। তাদের এই বন্ধুত্বের আধার তারা উদার মনোভাবাপন্ন, ধর্মনিরপেক্ষ ও মতাদর্শগতভাবে কাছাকাছি। রাজনৈতিক জীবনে তো বটেই, ব্যক্তি জীবনেও এই দুজনার কিছু মিল রয়েছে। রাজনীতিতে আসার আগে দুজনেই স্ব-ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ম্যাসাচুসেটসের নামী শিক্ষায়তন থেকে অর্থনীতি ও গণিতে স্নাতক মহুয়া ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে বিদেশে কর্মজীবন শুরু করেন। বিলাতের নামী অর্থকরী প্রতিষ্ঠন জেপি মর্গ্যান চেজ-র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।২০০৯ সালে সেই চাকরি ছেড়ে রাহুল গান্ধীর হাত ধরে দেশে ফিরে তার রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ।পরে কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান। অন্যদিকে বহুবিধ গুণের অধিকারী শশী থারুর নিজের জোরেই জগৎসভায় সুপরিচিত। তিরুঅনন্তপুরম লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিন বারের এই কংগ্রেস সাংসদ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূতপূর্ব আণ্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল, টাফটস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে পিএইচডি করার কৃতিত্বে অধিকারী, বিশ্বের বেশ কয়েকটির খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপক, গোটা কুড়ি গ্রন্থের লেখক, যার মধ্যে দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান নভেল বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত। এহ বাহ্য, শশী থারুর উত্তর- ঔপনিবেশিক চর্চা ও ইংরেজি সাহিত্য, ভারতীয় রাজনীতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের অগ্রপথিক, সর্বোপরি চলমান শব্দকোষ।আবার রাজনৈতিক ভাবে মহুয়া ও শশী দুজনেই সংসদ এবং সংসদের বাইরে বিজেপি, কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বললেন নরেন্দ্র মোরি তুখোড় সমালোচক।অধুনা সনাতনী সংস্কৃতি জাতীয় রাজনীতির একটি অভিপ্রেত চর্যা। দশ বছর আগেও রাজনীতির অঙ্গনে এই চর্যা। ছিল সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। এ-হেন চর্যা ভারতীয় সংস্কৃতিকে আরও বলিষ্ঠ করছে, না কি পশ্চাৎপদতায় নিয়ে যাচ্ছে তা বিতর্কের বিষয়। তবে শশী-মহুয়ার ছবিগুলি ভাইরাল হওয়ার পিছনে যে রাজনীতির ইন্ধন রয়েছে, তাতে কোনও বিতর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, আধুনিক সময়ের খুবই স্বাভাবিক এই ছবি।একজন জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত যাপনে ব্যক্তিগত পরিসর থাকবে না,এমন দিব্যি কেউ দেয়নি।প্রশ্নটি হল, জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত যাপনের কোনও নেতিবাচক প্রভাব তাদের কর্মের উপর না পড়লেই হল। সাধারণ নাগরিক এবং জনপ্রতিনিধিদের মূলগত তফাত হল, একজন জনপ্রতিনিধি সাংবিধানিকভাবে সাধারণ করদাতার অর্থ খরচের অধিকার পান, যা সাধারণ নাগরিক পান না। তাই তাদের আচরণ এমন কিছু হওয়া কাম্য নয়, যা সমাজে হিংসা কিংবা উচ্ছৃঙ্খলতাকে আমন্ত্রণ জানায়। কারণ, রাজনীতি আজ আমাদের জীবন, আমাদের পরিবারের সুখস্বাচ্ছন্দ্য প্রভাবিত করে। তবে রাজনীতিক মানেই খদ্দরে পোশাক পরে ঘুরতে হবে, এমন দর্শনও ভ্রান্ত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.