জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নীতি!!

 জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নীতি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী ২০২১ সালে দেশে জনগণনার সময়সীমা নরে নির্ধারিত থাকলেও, কোভিডের কারণে এখনও দেশে সেন্সাস হতে পারেনি। কথা আছে চলতি বছর ২০২৪ সালে দেশে লোকসভা নির্বাচন গরি সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২৬ সাল নাগাদ ভারতের জনগণনা অনুষ্ঠিত হবে। জনগণনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলোর আসনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এলাকার ডিলিমিটেশনের বিষয়টি। তাই দেশে আইন সভাগুলোর আসন পুনর্বিন্যাস এবং এলাকার পুনর্নির্ধারণের সঙ্গে জনগণনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই এই পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অন্তর্বর্তী বাজেটে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনবিন্যাসের পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে তা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটা নিরুপনে করতে একটি কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। আসলে দ্রুত হারেই গত বেশ কিছু দশক ধরে বেড়ে চলেছে ভারতের জনসংখ্যা। এই জনবিস্ফোরণের কারণে দেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ প্রকট হয়ে দেখা গিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া আর বিকল্প নেই। রাষ্ট্রসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮৫০ স্পর্শ করেছে। এই সংখ্যাটা চিনের লোকসংখ্যার প্রায় সমান। এর অর্থ হল এখন থেকে, জনসংখ্যার যে গড় বৃদ্ধি তাতে ভারত নিশ্চিতভাবে চিনকে ছাপিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান বলছে চিনের জনসংখ্যা ২০২২ সালের পর থেকে কমতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে চিনের জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে আরও কমতে থাকবে এবং চলতি শতাব্দি শেষ হওয়ার আগেই চিন তার জনসংখ্যা ১০০ কোটি মধ্যে নামিয়ে আনবে। অথচ যে গতিতে ভারতে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে চিনকে ছাপিয়ে গিয়ে আগামী কয়েক দশকে ভারতের জনবিস্ফোরণ বিপজ্জনক জায়গায় গিয়ে ঠেকবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি তৈরি করার কথা বাজেটে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও কবে নাগাদ এই কমিটি কাজ শুরু করবে, কতদিনের মধ্যে কমিটি সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে, তা কিছুই বাজেটে বলা হয়নি। আসলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ দেশের সামনে বড় সমস্যা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে সঙ্ঘ পরিবার বিজেপি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছিল। যদিও লোকসভা ভোটের মুখে হঠাৎই সরকারের এই পদক্ষেপ কার্যত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করে হিন্দু মেরুকরণের লক্ষ্যে এক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। একথা সাধারণের বিশ্বাস করা হয় এবং সংঘ পরিবার বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গেই বিশ্বাস করে যে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মূলত দায়ী মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজন। হিন্দু পরিবারের তুলনায় মুসলিমদের মধ্যেই অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা দেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধির আসল কারণ। মনে রাখতে হবে, দ্বিতীয় দফায় ভোটে জয়ী হয়ে এসেই প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশবাসীর কাছে পরিবার ছোট রাখার জন্য বার্তা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সকলের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত না হলে দেশ সুখী হতে পারে না। প্রকাশ্যে কোন গোষ্ঠীকে দোষারোপ না করে প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, সমাজের একটি গোষ্ঠী এবং তাদের পরিবার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলেও সর্বত্র এই প্রবণতা সমানভাবে রক্ষিত হচ্ছে না। কার্যত প্রধানমন্ত্রী ৫ বছর আগেই তার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আগামী ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন। আবার এটাও ঘটনা, ভারতে জন্মের হার গত কয়েক বছরে কিছুটা লাগাম পরানো দেশের জনসংখ্যায় বয়স্কদের হার বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে এটা চলতে থাকলে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি ব্রার্ষিকীতে দেশের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ নাগরিকের বয়স হবে ৬০ এর উপর। যা একপ্রকার প্রবীণ নাগরিকদের দেশে পরিণত হবে ভারত। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, এই মুহূর্তে দেশে জনবিস্ফোরণ ঠেকাতে এই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া সরকারের সামনে আর কোন পথ যে খোলা নেই সেটা পরিষ্কার। তবে জন্ম হার কমানো এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ রূপায়িত করতে গিয়ে সরকার এক সন্তান নীতি গ্রহণ করে, নাকি কঠোর অন্য কিছু পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.