জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি!!

 জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সম্প্রতি আবারও একবার বাজারে বহুল চালু বেশ কিছু ওষুধ নিষিদ্ধ সময় ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।গুণমাণ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণেই জীবন স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকায় এবার ১৫৬ টি ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ওষুধগুলো শরীরের জন্য বিপজ্জনক বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।সদ্য বাতিল হওয়া এই ওষুধগুলোর প্রত্যেকটি অতিপরিচিত এব বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।স্বাভাবিক কারণেই বহুল ব্যবহৃত এই ওষুধগুলোর মধ্যে ১৫৬ টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধই আচমকা বাতিল করে দেওয়ায় অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর অস্বস্তিতে পড়েছেন।
মূলতঃ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যাথা, অ্যালার্জি, এসব রোগের নিরাময়ের জন্যই এই ওষুধগুলো এতদিন ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।ঘটনা হচ্ছে সম্প্রতি যে ১৫৬ টি ওষুধ বাতিল করা হয়েছে তার প্রতিটিই ফিক্সড ডোজা কম্বিনেশন ওষুধ।এফ ডিসি কিংবা ফিক্সড ডোজ কম্বিনেশন হলো সেই সমস্ত ওষুধ,যে গুলোতে দুই বা তার চেয়ে বেশি উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণগত মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়।এগুলোকে চলতি ভাষায় বলা হয় ককটেল ওষুধ।একটি ওষুধের মধ্যে অনেকগুলো ওষুধের সংমিশ্রণ নির্দিষ্ট অনুপাতে ঘটিয়ে যখন নতুন কোন ওষুধ তৈরি করা হয়।তখন তা বাজারজাত করার আগে উপযুক্ত পরীক্ষা ও গবেষণা না করেই বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে চালু করার ফলে এই সমস্যাগুলো দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে।কারণ এই জাতীয় ওষুধের প্রভাব মানুষের শরীরে কেমন, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক বহুদিনের। এর আগেও এমন বহু মিশ্র ওষুধ সরকারী পর্যায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল।বাজারে বহুল প্রচলিত এবং বিক্রি হওয়া ওষুধগুলোর গুনমাণ কেমন তা দেখতে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে।সেই কমিটির পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার নিরীখে ৩৪৪ টি এফডিসি জাতীয় ওষুধের মধ্যে ১৪ টি উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরও ১৫৬ টি ওষুধ। বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছে, এই ধরনের ককটেল ওষুধ ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ।বাজারে এসব ওষুধের অনেকগুলো বিকল্প ওষুধ রয়েছে।যা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই নিরাপদ।তাই বৃহত্তর জনস্বার্থেই ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট ১৯৪০ অনুযায়ী এসব ওষুধের উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।যদিও এবারের তালিকায় এমন অনেক ওষুধও রয়েছে, যেগুলির উৎপাদন নির্মাতা সংস্থাগুলো অনেকদিন আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল।এখন প্রশ্ন হলো, একাধিক রাসায়নিক গঠনযুক্ত ওষুধের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে এর আগেও বহুবার প্রশ্ন উঠেছে।তা সত্বেও উৎপাদনের পরপরই বাজারজাত ও বিক্রির আগে কেন সেক্ষেত্রে এই সব ওষুধের গুণমাণ পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি?সব ককটেল ওষুধ মন্দ নয়। কিন্তু সেগুলোর গবেষণাই হয়নি। যেগুলো বাজারজাত করা
বে-আইনি। ওষুধের রাসায়নিক গঠন, কোন উপাদানের কী কার্যকারিতা তা জানতে হয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।প্যারাসিটামল নিরাপদ ওষুধ। কিন্তু এর সঙ্গে যখন আইবুপ্রোফেন সংমিশ্রণ ঘটানো হয়।তখন সেটির প্রভাব কার শরীরে কেমন হবে তা বলা সম্ভব নয়।ইংল্যান্ড কিংবা মার্কিন দেশে ফিক্সড ডোজ কম্বিনেশনের কোনও চল নেই।সেখানে প্যারাসিটামল বলতে প্যারাসিটামলকেই বোঝায়। এর সঙ্গে আরও চারটি অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে ওষুধ তৈরি হয় না।যেমন সেট্রিজিন খেলে ঘুম পায়। এটা যথেষ্ট কড়া ওষুধ।এর সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণ করা হলে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।হয়তো এফডিসি ওষুধের মূল্য অনেকটাই কম। কিন্তু এতে ঝুঁকি থেকে যায়। বছর কয়েক আগে এমন ওষুধ সম্পর্কে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যুগ্ম সংসদীয় কমিটি প্রশ্ন তুলেছিলেন-কি করে ড্রাগ কন্ট্রোল এসব ওষুধের অনুমোদন দিল।কমিটি এই সম্পর্কে রিপোর্টও তলব করেছে।কিন্তু এই পর্যন্ত। আসলে এই কম্বিনেশন ওষুধগুলো নিয়ে তেমন গবেষণা হয় না। এক বা দুইটি গবেষণাপত্রের উপর ভিত্তি করে এই ওষুধকে অনুমোদন দেওয়াও ঠিক না।একটি ওষুধ তৈরির সময় তার উপাদান, ট্রায়ালের ফল ও কার্যকারিতার বিস্তারিত রিপোর্ট থাকে।কিন্তু একাধিক ওষুধ মিলিয়ে যেটি তৈরি করা হয়। তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব কতটা সেটা নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না।সবটাই অনুমান নির্ভর। সুনির্দিষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক নয়। এমন অনেক মিশ্র ড্রাগ চালু হওয়ায় ৬ মাসের মধ্যে ফের নিষিদ্ধ করতে হয়েছে।তাই কম্বিনেশন ড্রাগ বাজারে চালুর আগেই ভেবেচিন্তেই তার অনুমোদন দেওয়া উচিত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.