জমল না রাধিকা আপ্তে এবং বিক্রান্তের কেমিস্ট্রি
মুসৌরির ছোট্ট শহরে বাস করে আনিয়া তার মাসি মেঘা ধর্মা ( রাধিকা আপ্তে ) এবং দিদার সঙ্গে । মেঘা পুলিশ অফিসার । খুব ছোটবেলায় আনিয়া তার মা এবং বোনকে হারিয়ে ফেলে । মেঘা এই ঘটনার জন্য দায়ী করে তার জামাইবাবু অভয় খান্নাকে ( রোহিত রায় ) । মেঘার সঙ্গে অভয়ের ভাই জনি খান্না ( বিক্রান্ত মাসি ) -র একটা সম্পর্ক তৈরি হলেও তা ভেঙে যায় । মেঘার দিদি এবং তার মেয়ে মারা যাওয়ার পর থেকে । সেই থেকেই আনিয়া তার মাসি এবং দিদার কাছেই বড় হতে থাকে । অত ছোট বয়সে মা এবং বোনকে হারানোর যন্ত্রণা তাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে । সেই কারণেই আনিয়াকে নিয়মিত মনোবিদ রঞ্জনা গুপ্ত ( প্রাচী দেশাই ) এর কাছে যেতে হতো ।
অন্যদিকে জনি ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে । যে কোনও কঠিন কেসও সে সহজেই সমাধান করে দিতে পারে । মেঘা কোনও মতেই আনিয়াকে তার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে দিতে নারাজ । বেশ কিছু বছর জনির সঙ্গেও মেঘার সম্পর্ক ছিল না । কিন্তু ঘটনাচক্রে আবারও জনিকে ফিরতে হয় মুসৌরিতে । একের পর এক শিশু খুনের কিনারা করতে তার ডাক পড়ে । প্রতিটা খুনের পিছনে একটা কমন বিষয় ছিল । প্রতিটা বাচ্চা মেয়ের জন্মদিনের দিনই তাদের খুন করা হয়েছিল । এই বিষয়ের তদন্ত করতে আসে জনি । সেখানেই আবার তার সঙ্গে দেখা হয় মেঘার । আনিয়া তার বাবা এবং কাকার কাছে যেতে চাইলেও মেঘা কিছুতেই রাজি হয় না ।
কিন্তু আনিয়ার বোনের মৃত্যু কি স্বাভাবিক ছিল ? পরবর্তীকালে মুসৌরিতে ঘটে যাওয়া পরপর শিশু খুনের সঙ্গে আনিয়ার বোনের খুনের সম্পর্কটাই বা কি ? আনিয়ার জীবনও কি ঝুঁকিপূর্ণ ? তাকে কি বাঁচাতে পারবে মেঘা এবং জনি ? কে এই কিডন্যাপার ? জনি তদন্ত করে দেখেছে , যে এই খুন করছে বা কিডন্যাপ করছে সেই খুনির উচ্চতা সাড়ে চার ফুটের বেশি হওয়ার কথা নয় । কে এই খুন করছে বা কারা করছে এবং কেনই বা করছে এগুলোই কিন্তু ‘ ফরেনসিক ‘ ওয়েব সিরিজের মূল আকর্ষিত বিষয় । অন্যদিকে মনোবিদ রঞ্জনা গুপ্তর জীবনেরও একটা বড় ইতিহাস আছে । সেই অতীতের সঙ্গে কি কোনও ভাবে এইসব খুনের সম্পর্ক রয়েছে ?
ভাল দিক : মালায়ালম সিনেমা ” ফরেনসিক ‘ এর হিন্দি রিমেক এই সিনেমা । হিন্দিতেও একই নাম রাখা হয়েছে সিনেমার । সাধারণত দেখা যায় , রিমেক হলে একেবারে হুবহু কপি করার চেষ্টা করা হয় । কিন্তু হিন্দি ‘ ফরেনসিক ‘ – এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু জায়গায় চিত্রনাট্যে পরিবর্তন করা হয়েছে । অরিজিনাল সিনেমার প্রধান যে টুইস্টগুলো ছিল সেগুলো বদলে দিয়েছেন পরিচালক । তাই যারা তেলেগু ছবি ‘ ফরেনসিক দেখেছেন , তাদেরও কিন্তু মনে হবে না যে তারা একেবারে কপি – পেস্ট কিছু দেখছেন । বরং তারা বুঝতে পারবেন , পরিচালক কতটা বুদ্ধি করে প্রতিটা টুইস্টের জায়গায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন । কিছু জায়গায় অবাস্তব লাগলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিনেমার পরতে পরতে চমক আছে ।
এই সিনেমার আরও কিছু পজিটিভ দিক হল সিনেমাটি দেখলে বোঝা যাবে চিত্রনাট্য লেখার সময় যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন চিত্রনাট্যকাররা । বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে একজন ফরেনসিক অফিসার কীভাবে বিজ্ঞান , বুদ্ধি এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তদন্ত করে থাকেন । অন্যান্য ছবিতে এত গভীরে গিয়ে এই বিষয়গুলো বোধহয় দেখানো হয় । না , যা এই ছবিতে দেখানো হয়েছে । সিনেমা শুরু হওয়া থেকে যে চমক থাকে তা সিনেমার প্রায় শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছেন পরিচালক । অনেকদিন পর বিন্দু দারা সিং , অনন্ত মহাদেবন , সুব্রত দত্তকে দেখে ভাল লাগবে ।
খারাপ দিক : জনির চরিত্রটা এখানে বেশ লাউড । রাধিকা আপ্তে এবং বিক্রান্ত মেসি খুব ভাল অভিনেতা । কিন্তু কোথাও যেন তাদের অভিনয় আউট অফ দ্য বক্স নয় । তাদের কাছ থেকে আরও ভাল অভিনয় আশা করা যায় । রাধিকা আপ্তে এবং বিক্রান্ত – এর মধ্যেকার কেমিস্ট্রি কোনও ভাবেই দর্শকদের মন ছুঁতে পারেনি । ছবির বিভিন্ন জায়গায় যে আবেগের জায়গা তৈরি হওয়া উচিত ছিল তা কিন্তু হয়নি । ডা রঞ্জনা গুপ্তর চরিত্রে প্রাচী দেশাইও আরও অনেক ভাল অভিনয় করতে পারতেন । কিছু জায়গায় এমন কিছু দৃশ্য রাখা হয়েছে যা না রাখলেও হতো । সিনেমায় জনির বাচন ভঙ্গী এবং শরীরী ভাষার মধ্যে দিয়ে যে কমেডির পরিমণ্ডল তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে , সেটাও ঠিক ভাবে করা হয়নি । মালায়ালাম ছবি ‘ ফরেনসিক ’ এর থেকে বিশাল ফুরিয়া যেভাবে হিন্দিতে তার ছবি রিমেক করেছেন । তা একেবারে এড়িয়ে যাওয়ার মতো না।