বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
জলাশয়ে বহুতল, বিপন্ন শহর আগরতলা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আগরতলার স্বাস্থ্য ভালো নয়। কমছে এই শহরের জলাশয়ের আয়তন ও সংখ্যা। এক কালের জলাশয়ে মাথা তুলেছে বহুতল আবাসন। শহরের নাগেরজলার বিশাল আয়তনের পুকুরটি এখন ইতিহাস। ব্যক্তিগত এমন বহু পুকুর হারিয়ে গেছে। এর উপর গড়ে উঠেছে বাড়ি ঘর, বহুতল আবাসন।শহরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে, নষ্ট হয়ে পড়ছে পরিবেশ। বিষাক্ত হয় চলছে আগরতলার বাতাস। ত্রিপুরার রাজধানী শহরে কমছে গাছপালা। কমছে জলাশয়, কমছে পুকুর। শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ ঝুঁকির মুখে এসে ঠেকেছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে পরিবেশ প্রেমীদের। দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।এর প্রতিকার নিয়ে চলছে চিন্তাভাবনা, উদ্যোগ।
শহরের চরিত্রে বদল ঘটেছে। গত তিন থেকে দুই দশকে এই বদল চোখে পড়ার মতো করে হয়েছে। শহরে মাথা তুলেছে বহুতল আবাসন। কাটা পড়েছে গাছপালা। ভরাট করা হয়েছে পুকুর, জলাশয়। আর এ সব হয়েছে মাত্রাছাড়া ভাবে। বেড়েছে যানবাহন চলাচলের হার। সামগ্রিকভাবে চাপ বেড়েছে লাগাম ছাড়া গতিতে। ব্যক্তিগত মালিকানার পুকুর ও জলাশয় শহর থেকে হারিয়ে গেছে। এর প্রতিকারে আগে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।গত প্রায় এক দশক আগে থেকে অবশ্য বদল ঘটছে পরিস্থিতির। প্রশাসনিক স্তরে এর প্রতিকার নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। তার সুফল নগর বনায়নের উদ্যোগ। একই সঙ্গে চলছে শহরের পুকুর ও জলাশয় রক্ষার উদ্যোগ। এই উদ্যেগ শুরু হয়েছে সেই ২০১৫ সালে। বর্তমানে এর গতি আরও বেড়েছে। জলাশয় পুনরুদ্ধার ও রক্ষায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। আগরতলা পুর নিগমের তরফে তৎপরতা চলছে। রাজ্য প্রশাসনও বসেছে নড়েচড়ে। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য এ নিয়ে সমন্বয়ের অভাব ঘটছে। ফলে কাঙিক্ষত সুফল মিলছে না।রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলা এলাকা নিয়ে ভাঠিত পূর্বতন পুর পরিষদ এবং বর্তমান পুর নিগম। বয়স দেড়শো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। পূর্বের আগরতলার এখনকার আগরতলার বিস্তর ফারাক।
এই ফারাক কাজের ক্ষেত্র ও ধরন নিয়ে। নগর প্রশাসন এখন শুধু কর আরোপ এবং আদায় করলে চলে না। চলে না শুধু বাড়ি ঘর নির্মাণের অনুমোদন দিলে অথবা এ সব দেখভাল করলে। এর বাইরে নানা – কাজ করতে হয়। একইভাবে রাজ্য প্রশাসনের কাজের ক্ষেত্রও বেড়েছে। পরিবেশ রক্ষার দিকে নজর দিতে হয়। এর জন্য আগরতলা পুর নিগম শহরের জলাশয় রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্য প্রশাসন নগর বনায়নে এগিয়ে এসেছে। আসলে শহরে ব্যক্তিগত জলাশয়, পুকুর এখন প্রায় নেই। নেই নেই করেও কিন্তু সরাসরি পুকুর, জলাশয় আছে বহু। সব মিলিয়ে প্রায় ত্রিশটি। এগুলি এখন শহরের প্রাণ ভোমরা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগরতলার বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষার অনিবার্য উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এগুলি।এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে প্রায় এক দশক আগে। তখন থেকেই পুর প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় তৈরির চেষ্টা করে চলছে। নানা প্রকল্পের মাধ্যমে জলাশয় রক্ষায় চলছে কাজ। কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বহু কাজ হয়েছে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের অশ্রুত-২ প্রকল্পের মাধ্যমে জলাশয় পুনরুদ্ধার চলছে। শহরের মোট চারটি পুকুর সংস্কার এক্ষণাবেক্ষণ চলছে এর আওতায়। কেন্দ্রীয় সরকারের নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অর্থানুকূল্যে শহরের মধ্যাংশের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের শিববাড়ি পুকুর, পূর্ব দক্ষিণের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঋষিপাড়ার পুকুর, উত্তর মধ্যাঞ্চলের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অভয়নগর বাজার পুকুর পশু হাসপাতালের পুকুরের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে কাজ লছে।এগুলির মধ্যে ঋষিপাড়ার পুকুরে ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা, শিববাড়ির পুকুরের জন্য ১ কোটি ৮০ লক্ষ, অভয়নগরের দুইটি পুকুরের জন্য ২ কোটি ৭৮ লক্ষ এবং ২ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ হবে মোট ৮ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা।
এরমধ্যে পুকুরের সীমানা নির্ধারণ করা সহ নোংরা আবর্জনা জল পবিষ্কার এবং সৌন্দর্যায়ন। সৌন্দর্যায়নের অঙ্গ হিসেবে পুকুরের পাড় বৈদ্যুতিক আলোকে সাজানো হবে। গত বছর ২০২৪ সালের মার্চ মাসে এই কাজে হাত পড়েছে। কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি ২০২৫ সালের মার্চ মাস।উল্লেখিত পুকুরের বাইরেও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব গেছে আরও তিনটি পুকুরের জন্য। কেন্দ্রীয় সরকারের জলাশয় পুনরুদ্ধার বিষয়ক অটল মিশন, মানে অদ্ভুত-২ প্রকল্পে শহরের ২৯ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুকুর রয়েছে। এগুলির জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে অচিরেই। শহরের স্বাস্থ্য বাঁচাতে কোনও জলাশয় জবরদখল অথবা নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। এর জন্য সব কয়টি সরকারী জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণ করে সুরক্ষার ব্যবস্থা হবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু ক্ষেত্রে এই কাজ হয়ে গেছে।আগরতলায় জলাশয় পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কাজ শুরু হয় শহরের মধ্যাংশের হিমসাগর দিয়ে। এছাড়া কুমারীটিলার পুকুর, অফিস লেনের মুক্তা পুকুর, বটতলা ও মেলারমাঠ এলাকা টিএনজিসিএল পুকুর এবং সাত লাখি পুকুর ও মধুতি রূপশ্রী পুকুর সংস্কার হয়েছে। কাজ হয়েছে আইজিএম হাসপাতাল পুকুর, বোধজং বালিকা বিদ্যালয় পুকুর, কামারপুকুর, মিলন সংঘ এলাকা মন্ত্রী পুকুর, মধ্যপাড়ার চলমান সংঘ এলাকার পুকুর, এগিয়ে চলো সংলগ্ন বিক্রম সাগর, হকার্স কর্নারের পেছন দিকের খোসবাগান পুকুর, জয়নগরের যুব সমাজ এলাকার পুকুর এবং নাগেরজলার ভট্টপুকুর এলাকার পুকুরের সংস্কার হয়েছে ইতোমধ্যে। এগুলির প্রতিটিতে খরচ হয়েছে গড়ে দেড় কোটি টাকা করে। এসব কাজ ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েক বছরে শেষ করা হয়েছে পুর নিগমের নিজস্ব তহবিলে। এছাড়া রাজ্য সরকারের তরফে স্মার্টসিটি প্রকল্পের আওতায় কলেজটিলা এলাকার তিনটি পুকুর সহ কৃষ্ণনগরের ছাত্র সংঘ এলাকার পুকুর এবং গোর্খাবস্তি এলাকার রাণীর পুকুরের সংস্কার হয়েছে। হয়েছে সৌন্দর্যায়ন সহ আলোক সজ্জা। এগুলির প্রতিটিতে খরচ পড়েছে দুই কোটি টাকা করে। আগরতলা শহরের স্বাস্থ্য উদ্ধারে এই কাজ যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। আগরতলার প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়েছে উন্নত। এমনই দাবি করা হয়েছে পুর নিগমের তরফে। সেই সঙ্গে সংস্কার এবং সৌন্দর্যায়ন করা বেশ কিছু পুকুরের নতুন করে কাজ করার সময় এগিয়ে এসেছে। এর জন্য অর্থের সংস্থান করতে গিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলার অবস্থা চলছে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের। প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে চলতি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেলে এর জন্য অর্থ চাওয়া হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। এর প্রস্তুতি চলছে।