জিবি হাসপাতালে ক্যান্টিন ভাড়ার ১ কোটি টাকা কোষাগারে জমা পড়েনি!!
জল নেই, আছে বারুদ!!

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগও করে যাবার অঙ্গীকার, কেউ আজ এ বিশ্বকে নবজাতকের কাছে করে না।প্রাণপণে পৃথিবীর সমস্ত জঞ্জাল সরাবার প্রতিশ্রুতিও আজ কথার কথা।বরং গোটা দুনিয়া জুড়েই জঞ্জালের স্তূপ বাড়ছে।আন্তর্জাতিক আইন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাতর আবেদন, এমনকী যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে পায়ে ঠেলে গত ছয় দিন ধরে ইজরায়েল, মার্কিনী সর্বতো সহায়তা নিয়ে মানব ইতিহাসের যে জঘন্য নৃশংসতা ফিলিস্তিনের গাজায় রচনা করে চলেছে তাকে মানব সভ্যতার সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন ছাড়া আর কীইবা আখ্যা দেওয়া যেতে পারে?

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে টানা ১৫মাস সমানে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল।এই বছর ১৯ জানুয়ারীতে সেখানে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হয়েছিল সব পক্ষ।কিন্তু একতরফাভাবে ইজরায়েল যুদ্ধবিরতিকে অস্বীকার করে গত মঙ্গলবার ভোর থেকে আবারও নারকীয় পৈশাচিক কাজ শুরু করেছে গাজায়। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করার পর গত ৫ দিনে ইজরায়েলি বর্বরতায় ২০০ র বেশি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের শিশু স্বাস্থ্য সংস্থা ইউনিসেফ।সব মিলিয়ে গত ৫ দিনে গাজায় নিহত হয়েছে প্রায় ৭০০ ফিলিস্তিনি।অর্থাৎ গত দেড় বছর ধরে প্যালেস্টাইনের উপর ইজরায়েলি হামলায় এই পর্যন্ত কম করেও ৫০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন সোয়া লাখেরও বেশি। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নতুন করে ইজরায়েলি হামলায় মাত্র ৫-৭ দিনে গাজায় ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই ছোট্ পরিসংখ্যান থেকেই ইজরায়েলের বীভৎসতার প্রাথমিক চিত্রটা বোঝা যাচ্ছে।বাস্তব পরিস্থিতি যে কতটা বিপর্যয়ের সেটা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।প্রশ্ন হলো, ইজরায়েলের লাগাতর আক্রমণ চলছে গাজা ভূখণ্ডে।একটা গোটা জনপদ আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। একের পর এক অসামরিক স্থানগুলো শ্মশানভূমির চেহারা নিচ্ছে।এক ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে,গাজার এক বাসিন্দা তার ১ বছরের সন্তান ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হারিয়েছেন ইজরায়েলি বিমান হামলায়।সেই অসহায় পিতাকে মৃত সন্তানের সঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে আলিঙ্গন করতে দেখা যাচ্ছে।অসহনীয় এই ভিডিও ছবি দেখে বাকরুদ্ধ গোটা বিশ্ব। কিন্তু ইজরায়েলের নৃশংসতা নিয়ে বিশ্বের গোটা তাবড় রাষ্ট্রগুলি নীরব। পরিস্থিতি এতটাই অমানবিক যে, ইজরায়েল তার গাজায় প্রবেশের সমস্ত সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। আর উপর থেকে আকাশ পথে বিমানে বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এতে গাজায় ত্রান সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক জলের প্রয়োজন ১৫ লিটার। কিন্তু সেখানে মাথাপিছু তিন লিটার পর্যন্ত জল নেই। সব শিশুর ভাগ্যে একফোঁটা জলও জুটছে না গাজায়। একদিকে খাদ্য সংকট, ওষুধ সংকট, উপর তীব্র আকার ধারণ করেছে জল সংকট। এককথায় মানবাধিকারের সমস্ত বিধিনিষেধ অতিক্রম করে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ইজারায়েল। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে এটা মনে হয় ইজরায়েল সম্পূর্ণ দখল করতে চাইছে গাজা ভূখণ্ড। এত দমনপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা সত্ত্বেও ইজরায়েলকে নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের একটি শব্দ উচ্চারণ করার ক্ষমতা হয়নি। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অতীতে বহুবার ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব আটকে দিয়েছে আমেরিকা। ফলে একটা বিষয় পরিষ্কার, বিশ্বজুড়ে বর্তমান উত্তাল সময়ে যা চলছে এর একটাই সুর- ‘জোর যার মুলুক তার’ নীতি। এর ফলেই নারী-শিশু অবাধে হত্যালীলা চললেও ইজরায়েল নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের কোন ভূমিকা নেই। বিশ্বজুড়ে এত যথেচ্ছাচার, নৈরাজ্য, অন্যায়ভাবে আক্রমণ সব চলতে থাকলেও বিশ্বজুড়ে মানবতার জন্য কোন সহানুভূতি নেই।তাই গাজা ভূখণ্ড জুড়ে আজ জল নেই,আছে শুধু বারুদ। অথচ নৈতিকতার পাঠ আউড়ানো বিশ্ব রাষ্ট্রনেতারা আজ দর্শক।