জাত কাহারে কয়!!

 জাত কাহারে কয়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সময় যত গড়িয়েছে ভারতীয় রাজনীতির মজ্জার ততই গভীরে সাপ্রাথিত হয়েছে বর্ণ এবং জাতিভেদের শিকড়। কর্মদক্ষতা ও নেতৃত্বগুণের প্রশ্নটি দূরে সরিয়ে কেবল জাতপাতের অঙ্কে রাজনীতি ধাবিত হলে তা দেশকে আদৌ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে কতদূর সফল হয়,অর্বুদ টাকার প্রশ্ন।বিজেপি উচ্চবর্ণের হিন্দুত্ববাদী দল বলে আগে বলা হতো।বলা হতো, মনুবাদের গর্ভ থেকে এই দলের উৎপত্তি।নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের আগে পর্যন্ত বিজেপি সম্পর্কে সেটাই জনমনে ধারণা ছিল।কিন্তু মোদি দল সম্পর্কে সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছেন।সমগ্র হিন্দু ভোটকে তিনি বৃহত্তর ছাতার তলায় এনে জড়ো করে ফেলেছেন।জাতপাতের রাজনীতি অর্থাৎ ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং’-এর হাত ধরে যে সব দল ক্ষমতায় স্বাদ পেয়েছে,যেমন বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রমুখদের ভোট ব্যাঙ্কেই সিঁদ কেটে দিয়েছে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি।ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে হেলায় জেতার পরেও, মূলত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিকে চেয়ে বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা করে, আলোচিত নেতাদের বাদ দিয়ে আনকোরা নেতাদের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়ে আনার পেছনেও হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে জাতপাতের রাজনীতির নিখুঁত সমীকরণ অনুসরণ করেছে বিজেপি, এবং সেটিও করা হয়েছে বিরোধীদের নয়া কাস্ট রণনীতি মোকাবিলায়।তবে এই দফায় হিন্দি জাতের সমীকরণ যেভাবে বাড়তি পেয়েছে, রাজনীতিতে এই পরীক্ষা নিরীক্ষা ‘মায়াবতী মডেল’ হিসাবে পরিচিত। ২০০৭ এ উত্তরপ্রদেশে এই দলিত নেত্রী দলের মাথায় বসান ব্রাহ্মণ সতীশ শর্মাকে। ২৫ শতাংশ আসনে প্রার্থী করেন উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের। তার আগে রাজ্যে ব্রাহ্মণ, দলিত, কায়স্থ সম্মেলন করে জাতের ঐক্য গড়ার রাস্তায় হেঁটে সফল হন।২০০৭-এর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভার ভোটে জাতের সামাজিক কারিগরির অঙ্কে বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টিকে ধরাশায়ী করেছিল বহুজন সমাজ পার্টি।ফলে এই যাত্রায় বিরোধীদের কাস্ট সেন্সাস ও সংরক্ষণ বৃদ্ধির রণকৌশলের মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ মায়াবতী মডেলকে হাতিয়ার করেছেন বললে অত্যুক্তি হয় না।জাতপাতের রাজনীতি যদি প্রকৃতই নিম্নবর্গীয়দের ক্ষমতায়নের অস্ত্র হয়, তবে অবশই স্বাগত।কিন্তু এর অন্যথা হলে সেই রাজনীতি হয়ে উঠে নিছকই ক্ষমতা ভোগের হাতিয়ার।স্বাধীনতা, সাম্য ও বন্ধুত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সংবিধান।বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকর চেয়েছিলেন সংবিধান সব ধরনের বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াক।কেউ যেন ভাষা ও ধর্মের বিচারে সংখ্যালঘু হিসাবে বিপন্ন না হয়, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য যেন মহিলাদের অগ্রগতির পথ আটকাতে না পারে, দলিত জনজাতি-ওবিসি সমাজ যেন স্বাধীন নাগরিক হিসাবে এগিয়ে আসতে পারে। সংবিধান সভায় প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণে আম্বেদকর ছত্রে ছত্রে বলেছেন, সংবিধানের পথে শুধু সরকার নয়,সমাজকে পরিচালনা করতে পারলেই আধুনিক ভারত গড়ে উঠবে, যার চাবিকাঠি হলো স্বাধীনতা,সাম্যও বন্ধুত্বের সুদৃঢ় ও সম্মিলিত ভিত্তি।এক নাগরিক এক ভোটের প্রতিশ্রুতিতে মুগ্ধ হয়ে আটকে না থেকে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রাম করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।ধর্মের নামে সামাজিক নিপীড়ন ওঅন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অদম্য স্পর্ধা হিসাবেই শ্রদ্ধেয় আম্বেদকর বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। অথচ নির্মম সত্য হলো,

সতীপ্রথা রুখতে ও বিধবাবিবাহ চালু করতে রামমোহন-বিদ্যাসাগরকে যেমন তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, একইভাবে হিন্দু মহিলার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হিন্দু কোড বিল আনার ফলে খলনায়ক বানানো হয়েছিল আম্বেদকরকে।নব্বই বছর আগের জনগণনা অনুযায়ী অবিভক্ত ভারতের বাহান্ন শতাংশ জনসংখ্যা পিছিয়ে পড়া জাতি বা ওবিসি।১৯৩১ সালের পর থেকে জাতিভিত্তিক জনগণনা আর হয়নি। অথচ ভারতের সংরক্ষণের মূল ভিত্তি হলো জাতি শিক্ষা ও সামাজিক বিচারে – পিছিয়ে পড়া বর্গ। ২০১১ সালে জাতিগত পরিসংখ্যান সং গৃহীত হলেও তা প্রকাশ হয়নি। আর ২০২১ সালের জনগণনা কবে হবে তা এখনও আমরা জানি না। তাই শুধুমাত্র রাজনীতি করতে নয়, দেশে দ্রুত জাতিভিত্তিক জনগণনা সম্পন্ন হোক, যাতে সংরক্ষণ নীতির বিন্যাস সঠিক পরিসংখ্যানগত ভিত্তিতে হতে পারে।নচেৎ তা হবে, বিদ্রোহী কবির ভাষায়, ‘জাত-জুয়াড়ির ভাগ্যে আছে আরও অশেষ দুঃখ সওয়া’।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.