জাত গণনা রাজনীতি!

বিহার ভোটের আগে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের প্রচার ভোঁতা করে দিতেই কি আচমকা দেশে জাত গণনা করার ঘোষণা করে দিল মোদি সরকার ? গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জাত গণনা নিয়ে বেজায় সরব। বিশেষ করে রাহুল গান্ধী যখন তার প্রথম ভারত জুড়ো যাত্রা শুরু করেছিলেন সেই থেকে দেশে জাত গণনার দাবি জানাতে থাকেন। এরই মধ্যে গত লোকসভা ভোটের সময়ও ইন্ডিয়া জোট বিশেষ করে কংগ্রেস এবং আরও বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা প্রতিটি প্রচারে দেশের জাত গণনার দাবি জানিয়েছিলেন। এরই মধ্যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ একটা ভাব নিয়ে দেশ যখন উত্তাল সে সময়ই আচমকা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জাত গণনার ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয় আগামী জনগণনা অর্থাৎ আদমসুমারির সাথে দেশে কাস্ট সেন্সাস অর্থাৎ জাতগণনাও হবে। যদিও কবে আদমসুমারি হবে তা অবশ্য জানায়নি কেন্দ্র। বিরোধীরা একে অবশ্য তাদের জয় হিসাবে দেখছে। রাহুল গান্ধী বলেছেন, তাদের চাপেই কেন্দ্র তা করতে বাধ্য হয়েছে। প্রশ্ন হল হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই সরকার জাত গণনার ঘোষণা কেন দিল। সামনেই বিহার ভোট। বিহারে তেজস্বীদের দাবিকে ভোঁতা করে দিতেই কি জাত গণনার ঘোষণা আচমকা। বিরোধীদের জাতগণনার মূল লক্ষ্য ওবিসি জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা জানা। তার প্রতিনিধিত্ব কী রকম রয়েছে তা জানাই বিরোধীদের লক্ষ্য। ২০২১ সালে দেশে জাতগণনা (আদমসুমারি) হবার কথা ছিল। চার বছর পেরিয়ে গেলেও তা এখনও হয়নি। জাতগণনা কবে হবে তার কোন ঘোষণা নেই। ২০১১ সালে শেষবার দেশে জনগণনা (সেন্সাস) হয়েছিলো। যদিও এবারের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার জনগণনার জন্য মাত্র ৪৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অথচ গত বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিলো ১৩০৯ কোটি টাকারও বেশি। সাধারণত জনগণনার সময় এসসি, এসটিদের সংখ্যা গণনা করা হয়। কিন্তু ওবিসিদের সংখ্যা গোনা হয় না। স্বাধীনতার আগে ১৯৩১ সালে দেশে শেষবারের মতো জাত গণনা হয়েছিলো। সেসময় ওবিসিদের সংখ্যাও গোনা হয়েছিলো। অখিলেশ যাদব, রাহুল গান্ধীরা তা দেখাতে চাইছেন, দেশে আদতে ওবিসি জনগোষ্ঠী কত রয়েছে। সে জন্যই তারা জাতি গণনার দাবি তোলেন। দেশে মোট এসসি, এসটিদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে ২২.৫%। মোট সংরক্ষিত আসন ৫০%-এর বেশি হতে পারবে না। দেশে যখন মণ্ডল কমিশন হয়েছিলো তখন তারা মোট সংরক্ষিত আসন ৪৯.৫ শতাংশ বেঁধে রেখে ওবিসিদের জন্য ২৭% আসন সংরক্ষিত করেছিলো। তখন অবশ্য ওবিসি জনসংখ্যা কত তা চিহ্নিত ছিল না। বাস্তবে ওবিসিদের জনসংখ্যার ভাগ ৫০% বেশি বলেই অনুমান।
কংগ্রেসের ভোটার অঙ্ক হচ্ছে, ওবিসিরা কত শতাংশ জনসংখ্যায় রয়েছে তা প্রকাশ্যে এলে সেই অনুযায়ী তারা সংরক্ষণের দাবি তুলবেন। তাই ৫০% সংরক্ষণের যে ঊর্ধ্বসীমা তা তুলে দেবার দাবি করছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের লক্ষ্য বিজেপির ওবিসি ভোট বাঙ্কে ভাগ বসানো। কেননা ওবিসিরা এখনও বিজেপির অন্যতম ভোট ব্যাঙ্ক। যদিও বিজেপি সরকার জাত গণনার ঘোষণা করলেও ওবিসি সংরক্ষণ হবে কিনা তা নিয়ে কোন কথা বলেনি।
কংগ্রেসের আরও লক্ষ্য হলো-জাতগণনা করে জনসংখায় দলিত, আদিবাসী, ওবিসির কার কত ভাগ তা নির্ধারণ করে চাকরি, শিক্ষায় তার প্রতিনিধিত্ব চালু করা।
বিরোধীরা জাতগণনার ঘোষণায় বেজায় উচ্ছ্বসিত। অখিলেশ যাদবের বক্তব্য – জনংখ্যায় ৯০% ই অনগ্রসর। তাদেরই জয় হয়েছে এই দাবি মানার ফলে। বিজেপি পাল্টা এ নিয়ে কংগ্রেসকে বলেছে, কংগ্রেস জমানায় জাতগণনা কেন করা হয়নি। তবে হঠাৎ বিজেপির এই বিলম্বিত বোধোদয়ের কারণ হচ্ছে সঙ্ঘের চাপ। সঙ্ঘই প্রথম চাপ দেয় যে অনগ্রসরদের দিকে নজর দিতে গেলে জাতগণনা করানো দরকার। শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘের চাপেই কি বিজেপির এই হঠাৎ জাতগণনার ঘোষণা – বিজেপির অন্দরেই কানাঘুষা চলছে।