জিএসটির হার ও প্রবৃদ্ধি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আবারো মূল্যবৃদ্ধির খাঁড়া নামিয়া আসিতেছে সাধারণ মানুষের ওপর।অঘোষিত মুল্যবৃদ্ধির চাপে ন্যুব্জ সাধারণ জনজীবন। দুই দুইটি বৎসর ধরিয়া সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় করোনা লকডাউনে দেশের আর্থিক অবস্থা এমনিতেই তলানিতে গিয়ে পৌঁছাইয়াছে। শিল্পোৎপাদন কমিয়াছে , কমিয়াছে চাহিদা । তাহার সঙ্গে পাল্লা দিয়া কমিয়াছে মানুষের কর্মসংস্থান । লকডাউন উঠিয়া যাইবার পর হইতে নূতন করিয়া খাঁড়া নামিল সাধারণ মানুষের ওপরে । দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এক নিয়মিত চেহারা লইয়া দেশের সামনে দেখা দিল । সারা বিশ্বে যখন অপরিশোধিত তেলের মূল্য হু হু করিয়া কমিয়া যাইতেছিল তখনো ভারতে তেলের দাম বাড়িতে থাকিল লাগামহীনভাবে ।

ফলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠিয়াছে দেশময় । দেখা গেল বাজারের মন্দাগতির কারণে একদিকে যেমন স্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটিল , ঘটিল কর্মহীনতা । আবার সরকারীভাবে জ্বালানির দাম ততদিন বাড়িয়া চলিল যতদিন না কোনও এক বা একাধিক রাজ্যে নির্বাচন আসিল । অর্থাৎ নির্বাচন আসন্ন হইলেই খানিক লাগাম ধরা হইয়া থাকে তেলের দামে । এই ধরনের দুঃসহ অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার আবারো জিএসটির হার বাড়াইয়া দিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে , ফলে আরও এক দফা অবধারিতভাবেই পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হইবে । আরও প্রাণান্তকর অবস্থার শিকার হইবেন সাধারণ মানুষ । অবশ্য সরকার যে এই পথে হাঁটিবে তাহার ইঙ্গিত আগেই ছিল । আর্থিক বৎসরের প্রতিটি ত্রৈমাসিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একদিকে রেপো রেট বাড়াইতেছে আর আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়িতেছে না বলিয়া মাথা কুটিতেছে ।

সরকারী কোষাগারে রাজস্ব বাড়াইয়া ব্যয় কমাইবার জন্য মরিয়া অর্থ দপ্তর সর্বশেষ জীবন বিমার শেয়ার বাজারে আনিয়াছে । ইহার পর সংস্কারের আর কিছু বাকি আছে বলিয়া ধর্তব্যে আসিতেছে না । আরও যেই সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত লইয়া রাখিয়াছে সরকার সেই সকল প্রতিষ্ঠান আবার কিনিবার জন্য আগ্রহী পাওয়া যাইতেছে না । কিন্তু সরকারী কোষাগারে রাজস্ব বাড়াইতেই হইবে । সেই কারণেই হয়তো জিএসটির হার বৃদ্ধির চেষ্টা চলিতেছিল গত ছয় মাস ধরিয়া । রাজ্যগুলির আপত্তির কারণে প্রথম বেশিদূর আগাইয়া যাওয়া সম্ভব হয় নাই । জিএসটি কমিশন রাজ্যগুলিকে লইয়া পৃথক বৈঠকে আশ্বাস দিল , তাহাদের জিএসটি সংগ্রহের যে ঘাটতি বা লোকসান তাহা পুষাইয়া দেওয়া হইবে ।

এরপর আর রাজ্যগুলির আপত্তি টিকে নাই । এইবার দাম জিএসটির হার বৃদ্ধি পাইল চর্মজাত পণ্যে । অর্থাৎ যে সকল জুতার দাম হাজার টাকার কম সেই সকল জুতায় জিএসটির হার বাড়িল। আবার সম্ভার হোটেল যেইগুলিতে রাত্রি যাপনের দৈনিক খরচ হাজার টাকার কম সেই সব হোটেলের সার্ভিস চার্জে জিএসটির হার বাড়িল ।
স্পষ্টতই হাজার টাকার কম দামের জুতা কিংবা হোটেল , যেইগুলি সাধারণত গরিব নিম্নবর্গের মানুষেরই বিষয় সেইখানে মূল্যবৃদ্ধিতে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হইবেন উহা সহজেই অনুমেয় । দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষ ন্যায্যমূল্যের দোকানে বিনামূল্যে চাল গম পাইতেছেন , কিন্তু মধ্যবিত্তের সেই সুযোগ নাই ।

তাহাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মধ্যে সর্ববৃহৎ না হইলেও কারদাতা নাগরিকগণের মধ্যে বিশাল এবং সর্ববৃহৎ , তাহাতে সন্দেহ নাই । সেই হিসাবে রাজস্ব বৃদ্ধিকল্পে আমাদের দেশের অর্থমন্ত্রক সঠিক জায়গায় হাত দিয়াছে বলিতে হইবে । করদাতা মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের উপরে করের চাপ বাড়িতেছে । আবার এই অর্থনৈতিক অবস্থানের মানুষের ওপরেই প্রাণঘাতী খাঁড়া নামিয়া আসিয়াছিল নোটবন্দির সময়ে । নোটবন্দির কারণে দেশের মাঝারি শিল্প মুখ থুবড়াইয়া পড়িয়াছে । মধ্যবিত্তের এই শিল্পোদ্যোগেই দেশের বৃহৎ অংশের মানুষের কর্মসংস্থান ঘটিত । মানুষ এই সকল প্রতিষ্ঠানে সহজেই শ্রম বেচিতে পারিত । কিন্তু নোটবন্দি এই সকল শিল্পোদ্যোগের ঝাঁপ বন্ধ করিয়া দেয় । আর এরপর করোনার আস্ফালন সেই সব ঝাঁপে তালাই মারিয়া দেয় ।

এরপরের ইতিহাস সকলেরই জানা । জিডিপি বৃদ্ধির পথ হিসাবে মাঝারি শিল্পোদ্যোগ খুলিবার প্রয়োজনের কথা ভাবিল সরকার । কিন্তু ততদিনে দেরি হইয়া গিয়াছে । সরকারী আশ্বাসে অনেক শিল্পোদ্যোগী তাহাদের ঝাঁপ খুলিলেও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধিতে বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রাখিয়া উৎপাদন করিতে পারিল না । যাহারা উৎপাদন করিলেন তাহারা বাজার পাইলেন না । আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধিও তাই আটকাইয়া রহিল প্রস্তর চাপা হইয়া । ঊর্ধ্বগামী হইল না । রেশন দোকানে বিনামূল্যে চাল বিলি দেশের অন্নের অভাব রুখিয়া দিতে পারিলেও প্রবৃদ্ধি বাড়াইতে পারিল না , পারিল না বাজার তেজি করিতে । এইবার জিএসটির হার বৃদ্ধি আপৎকালীনভাবে কোষাগারে রাজস্ব বাড়াইতে পারিলেও দেশে জিএসটি সংগ্রহ বাড়াইবে কি ?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের ফল মে-র প্রথম সপ্তাহে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ফলাফল প্রকাশ হবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে।একযোগে রাজ্য পর্ষদের মাধ্যমিক,…

22 hours ago

রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিকাশে,সি-প্লেন পরিষেবা চালুর উদ্যোগ চলছে: সুশান্ত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সি-প্লেন পরিষেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটন দপ্তর।রাজ্যের সি-প্লেন পরিষেবা…

22 hours ago

শ্লোগানই সার, এদের ভাগ্য আর বদল হয় না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান সরকারের শ্লোগান হচ্ছে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। কিন্তু বাস্তবে এই শ্লোগান কতটা…

22 hours ago

বাণিজ্য সংকট!!

বাণিজ্য সংকট বলতে আমরা সাধারণত কী বুঝি?অথবা বাণিজ্য সংকট কাকে বলে?খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে,…

22 hours ago

বিধানসভায় দেওয়া তথ্যে রাজ্যে শূন্যপদের সংখ্যা ৫১,৭৮৪!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে শূন্যপদ ৫১ হাজার ৭৮৪টি।নিয়োগ নেই।২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত…

23 hours ago

যান স্বল্পতায় বিলম্বিত বিমান যাত্রীরা রাতে দুর্ভোগে পড়েন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- অনেক রাতে এমবিবি আগরতলা বিমানবন্দরে বিলম্বিত বিমান যাত্রীরা আবারও যানবাহনের অভাবে চরম…

2 days ago