জিবিতে ফের রোগীর মৃত্যু প্রশ্নের মুখে চিকিৎসা ব্যবস্থা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের প্রধান সরকারী হাসপাতাল জিবিতে চিকিৎসার গাফিলতি ও অবহেলাতে আবার রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের প্রিয়জনের এভাবে মৃত্যুর পর হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগে মৃতার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন হাসপাতালের বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দিকে আঙুল তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে জানান, চিকিৎসার গাফিলতি ও অবহেলার তদন্ত করা হবে। কোন্ চিকিৎসকের গাফিলতি থাকলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে,পূজা দাসকে (২৩) শুক্রবার সকালে প্রচণ্ড পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ইউনিট দুই নম্বরে ভর্তি করা হয়। তার বাড়ি বিবেকানন্দ আবাসনে। পিতার নাম সুদীপ দাস।পেশায় অটোচালক।রোগীকে মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দেখেন।ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর যেহেতু পেটে ব্যথা সে কারণে পূজা দাসকে সার্জিক্যাল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এসে দেখার জন্য মেডিসিন বিভাগ থেকে কল দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে রোগীকে রক্ত দেওয়ার জন্যও রিক্যুজিশনে লিখে দেওয়া হয়। দপুরে মেডিসিন বিভাগ থেকে সার্জিক্যাল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে কল দেওয়া ও রক্তের জন্য রিক্যুজিশন লিখে দিলেও দিনভর সার্জিক্যাল বিভাগ থেকে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেডিসিন বিভাগে এসে রোগী পূজা দাসকে দেখে যাননি। পেটের প্রচন্ড ব্যথায় দিনভর রোগী শয্যায় কাতরালেও সার্জিক্যাল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে রোগী দেখার কোনও প্রয়োজনবোধ করেননি বলে রোগীর পরিবার ও মেডিসিন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।তার পাশাপাশি রোগীর পরিবারের তরফে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকেও বহু চেষ্টা করে রিক্যুইজিশন অনুযায়ী রক্তও সংগ্রহ করতে পারেননি।একদিকে মেডিসিন বিভাগ থেকে দুপুরে কল দেওয়া সার্জিক্যাল বিভাগ থেকে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে রোগী না দেখায় ও ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে না পারায় শুক্রবারই রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একপ্রকার বিনা চিকিৎসাই হাসপাতালের শয্যায় পেট ব্যথা ও যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে পূজা দাস মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে ক্ষুব্ধ মৃতার শোকাহত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা এই অভিযোগ করেন। মৃতার পরিবারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয় রাজ্যের প্রধান সরকারী রেফারেল হাসপাতালে কেন চিকিৎসা পরিষেবায় চরম গাফিলতি ও অবহেলা করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বাড়িতে পূজা দাসের পেট ব্যথা শুরু হয়। পরদিন সকালে জিবির মেডিসিন বিভাগে এনে ভর্তি করা হয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। ওষুধ লিখে দেন। যেহেতু পেটে প্রচন্ড ব্যথা তাই সার্জারি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে রোগী দেখে যাওয়ার জন্য মেডিসিন বিভাগ থেকে দুপুরে কল দেওয়ার পরও রাত সাড়ে আটটায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত কেন সার্জারি বিভাগ থেকে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে রোগী দেখেননি তা নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম অবহেলা ও গাফিলতির আঙুল উঠেছে। মৃতার বাবা সুদীপ দাস সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, বিনা চিকিৎসায় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা ও যন্ত্রণায় হাসপাতালে আনার পরও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শয্যায় ছটফট করার পাশাপাশি মৃত্যুর আগে প্রচন্ড শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা ও মুখে ফ্যানা পর্যন্ত চলে আসে। মৃতার পরিবারের প্রশ্ন কোথায় রাজ্যের প্রধান হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ও ব্যবস্থাপনা।
এদিকে, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে শনিবার বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, চিকিৎসায় গাফিলতি ও অবহেলার বিষয়ে তদন্ত করা হবে। গাফিলতি থাকলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত তিন সপ্তাহ আগে রাত পৌনে দুটোয় সুভাষ দাস (৬০) নামের স্ট্রোকে আক্রান্ত এক রোগীকে মেডিসিন বিভাগে এনে ভর্তি করানোর পর মেডিসিন বিভাগ থেকে নিউরো সার্জনকে কল দেওয়া হয়েছিল জরুরিভিত্তিতে রোগী এসে দেখার জন্য। কিন্তু সেই সময়ও অভিযোগ উঠেছিল অনকল দেওয়া সত্ত্বেও রাতে কোনও নিউরো সার্জন মেডিসিন বিভাগে এসে গুরুতর অসুস্থ রোগী সুভাষ দাসকে দেখে যাননি। পরদিন বেলা সাড়ে এগারটায় যখন রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তখন শোকাহত পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল রাতে তো নিউরো সার্জন আসেননি। এমনকী সকালেও রোগী দেখতে আসেননি। রোগীর মৃত্যুর পর রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে শোকাহতরা হাসপাতালে সেদিন উত্তেজিত হয়ে তুমুল বিক্ষোভদেখান। এক চিকিৎসককেও নিগৃহীত করা হয়। পুলিশ ছুটে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। শোকাহত পরিবারের দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। তারপর এখনও হাসপাতালের হুঁশ ফেরেনি। সেই ঘটনার তদন্তেও স্বাস্থ্য দপ্তর ও হাসপাতালের তরফে তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করানো হয়। কিন্তু তদন্তের কি ফলাফল আজ পর্যন্ত কেউ কিছু জানতে পারলো না।
এদিকে,মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, পূজা দাস বহুদিন ধরেই জটিল রোগে ভুগছেন। কদিন পরই তার শরীরের রক্ত কমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। ফলে কদিন পর পর শরীরে রক্ত দিতে হতো। বহি:রাজ্যেও চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু বহি:রাজ্যে জটিল চিকিৎসার খরচ অনেক বেশি বলে গরিব পরিবারের পক্ষে এতো টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছিল না।মৃতার পিতা জানান, মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার সঙ্গে একবার দেখা করে এই বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারপর আর এগোয়নি।