জিবি মেডিসিন বিভাগে চরম অব্যবস্থা, দুর্ভোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্যের প্রধান সরকারী রেফারেল হাসপাতাল জিবিতে অস্বাভাবিক রোগীর চাপে মেডিসিন বিভাগের (ওয়ার্ডের) চরম অব্যবস্থায় রোগীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। রোগীর অস্বাভাবিক চাপের কারণে মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা ও সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে গত বুধবার মেডিসিন বিভাগে স্ট্রোকে আক্রান্ত সুভাষ দাসের চিকিৎসায় অবহেলা ও উদাসীনতায় মৃত্যু হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে হাসপাতালের গঠিত তদন্ত কমিটি শুক্রবার থেকে তদন্ত শুরু করেছে। শুক্রবার দৈনিক সংবাদে ‘রোগীর মৃত্যু ঘিরে স্বাস্থ্য সচিবের বৈঠক, তদন্ত কমিটি’ শীর্ষক সংবাদে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রাতে অনকলে নিউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকা হয়েছে বলে যা ছাপানো হয়েছে তার বদলে নিউরো সার্জন বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছে পড়তে হবে। কিন্তু নিউরো সার্জন রাতে অনকলের ডাক পেয়েও স্ট্রোকে আক্রান্ত সুভাষ দাসকে দেখতে হাসপাতালে আসেননি বলে অভিযোগ। সংবাদে নিউরো সার্জনের জায়গায় অসাবধানবশত নিউরোলজিস্ট উল্লেখ করা হয়। এদিকে হাসপাতালের মেডিসিন ইনডোর বিভাগে রোগীর চাপে দিনদিন চিকিৎসা পরিকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়লেও সঠিক চিকিৎসা পরিকাঠামোর দেখা নেই। মেডিসিন ইনডোর বিভাগে পুরুষ ও মহিলা রোগীর জন্য চারটি ইউনিট রয়েছে। হাসপাতালের খাতায় শয্যা (বেড) সংখ্যা রয়েছে ২৮০টি। কিন্তু অত্যধিক রোগীর চাপে প্রতিদিন গড়ে চারশর মতো রোগী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকেন। কোনও কোনও দিন তার বেশি রোগী মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসার জন্য ভর্তি থাকেন। তাতেই সহজেই অনুমেয় যে রোগীর যে রোগীর অস্বাভাবিক চাপে চিকিৎসা পরিকাঠামোর কি করুণ দশা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ২৮০ শয্যার জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ডবল সংখ্যক রোগী মেডিসিন বিভাগে ভর্তি থাকায় চিকিৎসা পরিষেবা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম অব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল হওয়ায় গোটা রাজ্য থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগী আসছেন। কিন্তু মেডিসিন বিভাগে বহুদিন ধরেই রোগীর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ওয়ার্ডের ভেতরে শয্যার অভাবে ফ্লোরে ঠাসাঠাসি করে রোগী যেমন কম্বল পেতে রাখা হচ্ছে, তেমনি বাইরে বারান্দায় ও ফ্লোরে ঠাসাঠাসি করে কম্বল পেতে রোগী রাখা হচ্ছে। তার পাশ ঘেঁষে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়, স্বাস্থ্যকর্মী সকলেই হেঁটে যাওয়া আসা করায় নোংরা ধুলাবালি গিয়ে পড়ছে রোগীর উপর। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ফ্লোরে কম্বল পেতে গুরুতর অসুস্থ অসহায় রোগীদের রাখায় অত্যান্ত অমানবিক হয়ে ঠেকেছে। অভিযোগ, রাজ্যের প্রধান সরকারী রেফারেল হাসপাতালের রোগীর প্রতি অমানবিকতার এখানেই শেষ নয়, মেডিসিন বিভাগে প্রবেশের অনেক আগে সিঁড়ির মধ্যেও অনেক রোগীকে রাখা হচ্ছে। র্যাম্পের মধ্যেও রাখা হচ্ছে অনেক রোগী। রাজ্যের প্রধান হাসপাতালের এই করুণ দশা দেখে সকলেই অবাক ও বিস্মিত। কিন্তু হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট অথরিটি স্বাস্থ্য দপ্তর ও রোগী কল্যাণ সমিতি যেন দিনের পর দিন এ বিষয়ে ছুঁটে জগন্নাথ, নির্বিকার-উদাসীন। রোগীর দুর্ভোগের শেষ নেই। এত রোগীর চাপের কারণে হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাও লাটে উঠেছে বলে রোগীর অভিযোগ। মেডিসিন বিভাগ জুড়ে নোংরা দুর্গন্ধে রোগীরা পড়েছেন আরও বিপাকে। অস্বাভাবিক রোগীর চাপে শৌচাগার আরও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নোংরাময় হয়ে থাকছে। শোচাগারের সংখ্যাও খুব কম। শৌচাগারে আবার সবসময় জলও থাকছে না। পানীয় জলের সংকটের কারণে দোকান থেকে জলের বোতল কিনে এনে তৃষ্ণা মিটাচ্ছেন বলেও রোগীর অভিযোগ। মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম রয়েছে। মাত্র ৯ জন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সকলেই আবার মেডিকেল কলেজের ফ্যাকাল্টি। মেডিকেল অফিসার (এমও) রয়েছেন মাত্র ১ জন। তিনিও অসুস্থতার কারণে সবসময় হাসপাতালে আসতে পারছেন না বলে অভিযোগ। ফলে মেডিসিন বিভাগে এত রোগীর চাপ সত্ত্বেও পর্যাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং এমও চিকিৎসক দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ইনডোর, আউটডোরে
রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি কলেজ ফ্যাকাল্টির কাজ সামলাতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবার কাজও প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মেডিসিন বিভাগে নার্স এবং জিডিএর স্বল্পতায়ও সমস্যা বাড়ছে। রোগীকে নিয়ে হুইল চেয়ারে পরিষেবা দেওয়ার মতো জিডিএ নেই। এদিকে রাজ্য সরকার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ দশা দূর করার জন্য নান পরিকল্পনা নিলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে ন বলেও অভিযোগ।