জিবি হাসপাতালে ক্যান্টিন ভাড়ার ১ কোটি টাকা কোষাগারে জমা পড়েনি!!
জিবি হাসপাতালে ক্যান্টিন ভাড়ার ১ কোটি টাকা কোষাগারে জমা পড়েনি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-জিবি হাসপাতালে ক্যান্টিনের ঘর ভাড়া দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা না মিটিয়ে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে গেছে ক্যান্টিন পরিচালক সংস্থা বা মালিক।গত পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে হাসপাতাল ক্যান্টিন ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে গেছে দুটি সংস্থা। অপর একটি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্যান্টিন ঘর ভাড়ার টাকা মিটিয়ে না দিয়েও এখনও ক্যান্টিন পরিচালনা করছে। জিবি হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতায় ও উদাসীনতায় ক্যান্টিন ভাড়া বাবদ প্রায় এক কোটি টাকা হাসপাতালের কোষাগারে জমা পড়েনি বলে অভিযোগ। ক্যান্টিন ঘর ভাড়া বাবদ বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে হাসপাতালের তরফে দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। আদালতে মামলার রায় হাসপাতালের পক্ষে গেলেও বকেয়া টাকা কিন্তু হাসপাতাল কোষাগারে জমা পড়েনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের কিচেন ঘর তথা পুরোনো ব্লাডব্যাঙ্ক যে জায়গায় ছিল তার কাছে আগে একটি ক্যান্টিন চালু ছিল।অপর ক্যান্টিনটি চালু ছিল স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগ ভবনে প্রবেশের গেটের উল্টোদিকে রাস্তার পাশে পৃথক ঘরে।হাসপাতাল তরফে দরপত্র আহ্বান করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে খাবারের ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। ২০২২ সালের প্রথমদিকে আগের ব্লাডব্যাঙ্ক লাগোয়া ক্যান্টিন ছেড়ে দিয়ে ক্যান্টিন পরিচালক সংস্থা সরে যায়। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী দীর্ঘদিন ক্যান্টিন ঘর বাবদ ভাড়া মিটিয়ে দেয়নি। প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকার মতো বকেয়া ফেলে রেখে আচমকাই ক্যান্টিন পরিচালক সংস্থা ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়ে উধাও হয়ে যায়।
অপর ক্যান্টিন পরিচালক সংস্থাও ক্যান্টিন ঘর ভাড়া বাবদ পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা না দিয়ে একইভাবে ২০২৩ নাগাদ আচমকা ক্যান্টিন বন্ধ করে উধাও হয়ে যায়। রাজ্যের এই দুটি ক্যান্টিন পরিচালক সংস্থা হাসপাতালকে এতো বিশাল অংশের টাকা না মিটিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত এনসিসি থানায় এফআইআর করা হয় হাসপাতালের তরফে। আদালত এই মামলায় দুটি সংস্থাকেই ক্যান্টিন ঘর ভাড়ার সব টাকা হাসপাতালের কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় বলে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়। আদালত এই রায় ঘোষণা করেছে তাও আবার প্রায় চার বছর হয়ে গেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, দুটি সংস্থা এখনও সেই টাকা হাসপাতাল কোষাগারে জমা দেয়নি। এ বিষয়ে সোমবার হাসপাতাল মেডিকেল সুপার ডা. শংকর চক্রবর্তী জানান, ক্যান্টিনের ঘর ভাড়ার বিশাল অংকের টাকা উদ্ধারে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পুনরায় আইন আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।
এদিকে, আবার এখন স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে ঢোকার মুখে বাইরে এরোমা সংস্থা পরিচালিত যে ক্যান্টিনটি চালু রয়েছে সেই ক্যান্টিনের ঘর ভাড়া বাবাদও বকেয়া প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা পাওনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তরফে তিনবার নোটিশ দেওয়ার পরও সেই টাকা এখনও সেই সংস্থা মিটিয়ে দেয়নি। দরপত্রের শর্তে প্রতি মাসে ক্যান্টিন ঘর ভাড়া বাবদ দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টিন ঘর ভাড়া বাবদ কোনও টাকা হাসপাতালকে মিটিয়ে দিচ্ছে না। এই ব্যাপারে হাসপাতাল মেডিকেল সুপার ডা. চক্রবর্তী জানান, তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা মিটিয়ে দেয়নি। এপ্রিল মাসে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকে এই ক্যান্টিন পরিচালককে উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। কিন্তু ক্যান্টিন পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হলেও বকেয়া পঁচিশ লক্ষ টাকা উদ্ধারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে হাসপাতাল মেডিকেল সুপার কোনও সঠিক কিছু জানাতে পারেননি। ক্যান্টিন ঘর ভাড়ার টাকা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির কোষাগারে পাঠানোর কথা ছিল বলে হাসপাতাল মেডিকেল সুপার জানান। তবে ক্যান্টিন ঘর ভাড়া বাবদ পড়ে থাকা এতো বিশাল অংকের টাকা উদ্ধারে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ায় এখনও টাকা উদ্ধার করা যায়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।