জিবি হাসপাতালে স্পেশাল নার্স রাখতে চাপ : ক্ষোভ
অনলাইন প্রতিনিধি || রাজ্যের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত আগরতলা সরকারী মেডিকেল কলেজ ও গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতাল । রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে কার্যত শেষ ভরসার স্থল এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি। পাশাপাশি এই হাসপাতাল ঘিরে অভিযোগেরও অন্ত নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতাল, সাধারণভাবে জিবি হিসাবে পরিচিত হাসপাতাল ঘিরে নানা অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে রোগী ও তাদের পরিজনদের বড় অংশের বক্তব্য, তাদের নানাভাবে হয়রান করা হয় নিয়মিত। এই হয়রানির সঙ্গে অনেক সময় একাংশ চিকিৎসক ও নার্স জড়িত থাকেন বলে অভিযোগ। হাসপাতালে কর্মরত বেশিরভাগ চিকিৎসক নিজেদের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী। তাদের একাংশ আবার রোগীদের হয়রান করার যন্ত্র হিসাবে কাজ করেন ৷ আর একাংশ নার্স নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন না করে তা চাপিয়ে দিতে চান ধাই গোছের বিশেষ নার্সদের কাঁধে। এর জন্য রোগীর পরিজনদের বাধ্য করা হচ্ছে গাঁটের কড়ি খরচ করে স্পেশাল নার্স রাখতে। হাসপাতালের প্রায় সব বিভাগে এমন ঘটনা ঘটলেও সবচেয়ে বেশি ঘটছে শল্য তথা সার্জিকেল বিভাগে। শল্য চিকিৎসার অন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীর চিকিৎসা পরিষেবার প্রধান শর্তই হয়ে দাঁড়িয়েছে স্পেশাল নার্স রাখা। কোনও রোগীর পরিজন এক্ষেত্রে আপত্তি অথবা নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করলে বড়সড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। অভিযোগ, শল্য চিকিৎসা ওয়ার্ডে কর্মরত নার্সদের প্রায় কেউই সেই রোগীর দিকে ফিরেও তাকান না । এর উপর বাড়তি পাওনা হিসাবে মিলছে নার্সদের দুর্ব্যবহার। ফলে বেশিরভাগ রোগীর পরিজনদের প্রয়োজন না থাকলেও স্পেশাল নার্স রাখতে হচ্ছে। এ নিয়ে রোগীর পরিজনদের মধ্যে ক্ষোভ জমছে। মুশকিল হলো এই ক্ষোভ প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে। তাছাড়া রোগীর চিকিৎসার উপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় কেউই এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না। স্পেশাল নার্সরা কিন্তু আসলে নার্স নন। তাদের এ নিয়ে কোনও প্রশিক্ষণ নেই। নেই প্রয়োজনীয় পড়াশোনা। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মূলত প্রশিক্ষণহীন এবং অর্ধশিক্ষিতরাই স্পেশাল নার্স হিসাবে কাজ করছেন। দৈনিক দুই পর্বে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অনেকে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে পরদিন রাত ৮টা পর্যন্ত এক পর্বে টানা ১২ ঘণ্টা তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতি পর্বে এরজন্য তাদের হাজিরা হিসাবে দিতে হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এর বিনিময়ে তারা মূলত • রোগীকে সঙ্গ দেন। রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রায় কোনও কাজেই আসেন না “তারা। অবশ্য রোগীর শৌচকর্ম করানো, গা মুছিয়ে দেওয়ার মতো কাজ তাদের করতে হয়। এ নিয়ে আবার স্পেশাল নার্সদের মধ্যে অনেকে ওজর আপত্তি করে থাকেন।সমস্যা আছে আরও। একেক জন স্পেশাল নার্স আবার একসঙ্গে চার – পাচ জন রোগীর দায়িত্ব নিয়ে রাখেন বলে খবর। ফলে তাদের পক্ষে কোনও রোগীর -দায়িত্ব পালনই সম্ভব হয় না। তাদের একাংশের বিরুদ্ধে রোগী ও পরিজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে। অনেক সময় প্রায় সর্বক্ষেত্রে অজ্ঞ এসব স্পেশাল নার্সদের কারণে বিপাকে পড়তে হয় রোগীকে। এ কারণে তাদের – উপর পুরোপুরি ভরসা করা সম্ভব হয় না রোগীর পরিজনদের। আসলে রোগীর – চিকিৎসা অথবা পরিষেবা সম্পর্কে তাদের প্রায় কারও কোনও ধারণাই নেই। – এরপরও তাদের নামের সঙ্গে স্পেশাল নার্স শব্দবন্ধটি জুড়ে যাওয়ার কারণ রয়েছে। রোগীর সঙ্গে থেকে মাঝেমধ্যে তাকে ওষুধ খাওয়ানো সহ আনুষঙ্গিক – কাজ করার সূত্রেই এই নাম পড়েছে তাদের। নার্সের দায়িত্ব তারা পালন করেন বলে সাধারণ ধারণা থেকেই স্পেশাল নার্স শব্দযুগল জুড়ে গেছে তাদের নামের-সঙ্গে।
এমতাবস্থায় তাদের উপর রোগীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে জিবি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। আর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসা বিভাগে রীতিমতো চাপাচাপি চলে এ নিয়ে। এর পেছনে কোনও গূঢ় রহস্য অথবা কমিশনের সম্পর্ক জড়িতে থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তাছাড়া অন্য একটি কারণ বিশেষভাবে জড়িয়ে থাকতে পারে। আর তা হলো হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের বড় অংশের নিজের দায়িত্ব পালনে অনীহা। ফলে নিজেদের দায়িত্ব স্পেশাল নার্সদের উপর চাপিয়ে হাল্কা থাকতে চাইছেন তারা। এর ফাঁকে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা নিয়ে তৈরি হয় নানা আশঙ্কা। সেই সুবাদে ঘটছে নানা অঘটন। সাধারণত যেসব রোগীর পরিজনদের পক্ষে নিয়মিত হাসপাতালে থাকা সম্ভব হয় না তারাই বাধ্য হয়ে স্পেশাল নার্স রাখেন। স্পেশাল নার্স রাখলেও প্রায় নিয়মিত রোগীর পরিজনদের হাসপাতালে থাকতে হয়। তা না হলেই নানা সংকট তৈরি হয়। তবে যাদের পক্ষে দিনরাত রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে থাকা সম্ভব হচ্ছে তাদের স্পেশাল নার্স রাখতে বাধ্য করা যায় না। অথচ জিবি হাসপাতালে এমনই ঘটে চলছে দিনের পর দিন। বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। একই ‘সঙ্গে বাড়ছে আর্থিক চাপ। এই চাপ সহ্য করা বহু রোগীর পরিজনদের পক্ষেই “সম্ভব হয় না। এ নিয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ডা. সঞ্জীব দেববর্মার সঙ্গে। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে উল্লেখ করে জানান, এ প্রসঙ্গে তার কাছে সরকারীভাবে কোনও অভিযোগ আসেনি।