জি-২০ সম্মেলনে প্রস্তুত ত্রিপুরাঃ আজ শহরে অতিথিরা

 জি-২০ সম্মেলনে প্রস্তুত ত্রিপুরাঃ আজ শহরে অতিথিরা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

জি-২০ বিজ্ঞান সামিটের লক্ষ্যে পুরোদমে প্রস্তুত ত্রিপুরা। দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের লক্ষ্যে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে নতুন মোড়কে সাজানো হয়েছে। প্রতিনিধি দল যেসব স্থানগুলিতে যাবেন সেখানেই লেগেছে রঙের আস্তরণ। লেগেছে মায়াবি লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড শো। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, নীরমহল, ছবিমুড়া, নারিকেল কুঞ্জ, মাতাবাড়ি সহ সংশ্লিষ্ট সব স্থানই অতিথিদের আপ্যায়নে নয়া সাজে প্রস্তুত। এ দিন নীরমহল এবং উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড শোয়ের সূচনা হয়। আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এ দিন শালবাগানের অক্সিজেন পার্কে অর্কিডোরিয়ামেরও উদ্বোধন হয়েছে। ৫০ প্রজাতির অর্কিড সমৃদ্ধ প্রজাতির অর্কিডোরিয়ামের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডা.মানিক সাহা বলেন, পর্যটকদের আপ্যায়নে কিছুতেই ত্রুটি রাখা হচ্ছে না ৷মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা এ দিন সম্মেলন কেন্দ্রিক একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এমবিবি বিমানবন্দর থেকে শুরু করে নানা স্থান সাজিয়ে তোলা হয়েছে।রবিবারই রাজ্যে পা রাখছেন সত্তর জনের বেশি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদল। তাদের সাথে আসছেন দেশের আধিকারিকগণও। মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা বলেন, গত আগস্ট মাস থেকেই জি-২০ সম্মেলনের তোড়জোড় চলছিল। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিদেশি দলের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে শলাপরামর্শও হয়। এই সম্মেলনের লক্ষ্যে উদ্দীপিত রাজ্যবাসী। দুই দিনের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দেশ ও বিদেশের প্রতিনিধিরা রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিতে পা রাখছেন। তাতে পর্যটনের আঙ্গিকেও বিশ্ব দরবারে রাজ্যের পরিচিতি লাভ হবে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রবিবার থেকে পথে নামছে টুরিস্ট পুলিশ। সামিটকে সার্বিক সফল রূপ দেওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসন থেকে সমস্ত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শনিবার সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হল সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্রা জি-২০ বিজ্ঞান সামিটের প্রস্তুতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, হাপানিয়াস্থিত আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণের উন্ডোর প্রদর্শনী হলে জি-২০ বিজ্ঞান সামিটের মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হবে। এই সামিটের থিম হচ্ছে ‘ক্লিন এনার্জি’ ফর এ গ্রিনার ফিউচার’। সামিটে জি-২০ ভুক্ত ১৪টি দেশের প্রতিনিধি, অতিরিক্ত আরও ৯টি দেশের আমন্ত্রিত সদস্য ও দেশের কেন্দ্রীয়স্তরের প্রতিনিধি সহ ৮৫ থেকে ৯০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। জি-২০ সামিটের প্রতিনিধিগণ ২ এপ্রিল দুপুরে রাজ্যে এসে পৌঁছবেন। এ দিন বিকালে প্রতিনিধিগণ এলবার্ট এক্কা পার্ক এবং কুমারীটিলা মিউজিক্যাল ফাউন্টেনটি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় রাজ্য সরকারী অতিথিশলায় প্রতিনিধিগণের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব জানান, ৩ এপ্রিল সকাল ৯টায় আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণের ইন্ডোর প্রদর্শনী হলে জি-২০ বিজ্ঞান সামিটের প্রথম সেশন শুরু হবে। ওই দিন বিকালের সেশনে থাকবে প্রদর্শনী স্টলের উদ্বোধন, সাংবাদিক সম্মেলন এবং ইনভেস্টর মিট। প্রদর্শনীতে ৫৫টি স্টল থাকবে। তাতে রাজ্যের হস্ততাঁত ও হস্তকার শিল্পের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর স্টল সহ বিভিন্ন দেশের স্টল প্রদর্শনীর জন্য থাকবে। ওই দিন সন্ধ্যায় উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড প্রদর্শন এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সচিব জানান, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টায় অক্সিজেন পার্কে যোগা সেশনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে জি-২০ দেশের প্রতিনিধিগণ যোগায় অংশগ্রহণ করবেন। সেই লক্ষ্যে অক্সিজেন পার্কের সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে এবং জি-২০ দেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।এছাড়াও ওই দিন জি-২০ দেশের প্রতিনিধিগণ পূর্বাশা, সিপাহিজলা অভয়ারণ্য এবং নীরমহল পরিদর্শনে যাবেন। সেই লক্ষ্যে ওই স্থানগুলির সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্রা জানান, জি-২০ দেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাতে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি রূপায়ণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে এলবার্ট এক্কা পার্কে শচীন দেববর্মণের মূর্তি স্থাপন, কুমারীটিলায় মিউজিক্যাল ফাউন্টেন স্থাপন, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ ও নীরমহলের সৌন্দর্যায়ন এবং লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড স্থাপন এবং সিপাহিজলা অভয়ারণ্যের রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়াও শহরের ৪টি স্থানে জি-২০ লোগো সম্বলিত বড় বেলুনও স্থাপন করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং।

মেলাঘর সংবাদ প্রতিনিধির সংযোজন :
এ দিন সন্ধ্যার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা নীরমহলে এই আলো ও ধ্বনির যুগলবন্দির সূচনা করেন। পরে নীরমহলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জি-টোয়েন্টি দেশের প্রতিনিধিদের ত্রিপুরায় আগমন এবং এই সম্পর্কিত যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন। তিনি বলেন, এবার বিশ্বের কুড়িটি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। এতে রাশিয়া, চিন, ব্রাজিল, প্রতিবেশী বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যোগদান করবেন। সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার সময়ে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে তাদের সময়ের কোনও সূচি ছিল না।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছাতে এই সম্মেলনে আগত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সামনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্র, তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। এরই অঙ্গ হিসাবে জি-টোয়েন্টি দেশের প্রতিনিধিরা আগামী ২ এপ্রিল থেকে তিন দিনের জন্য রাজ্যে পা রাখবেন। তাদের আগমনকে ঘিরে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সেই জন্য নীরমহলও সাজিয়ে তোলা হয়েছে।তিনি বলেন, এই পর্যটন কেন্দ্রের কত পরিবর্তন হয়েছে, ভাবাই যায় না। দীর্ঘ সময়কালে নীরমহলের এত রূপ, বৈভব তিনি ইতিপূর্বে কখনও দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন। মহারাজার এই অমর সৃষ্টকে ঘিরে রাজ্যের পর্যটন শিল্প আরও বিকশিত হবে। বিদেশি অতিথিদের মাধ্যমে তার পরিচিতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।এই উপলক্ষে পর্যটন কেন্দ্র সাজানো হলেও দেখা যায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে যাবার পর তার রক্ষণাবেক্ষণে দায়ভার ঝেড়ে ফেলার কারণে এই সৌন্দয্য রক্ষিত হয় না – সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা ধরে রাখার প্রয়াস নেওয়া হবে। একটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে। জি-টোয়েন্টি সম্মেলন উপলক্ষে পর্যটন – পুলিশ নিয়োগের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পর্যটন পুলিশ সবসময়ে থাকবে কিনা এই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টি ভেবে দেখা হবে বলে জানান। পর্যটন ক্ষেত্রগুলির ইতিহাস সঠিকভাবে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার জন্য গাইড ও মাইকের ব্যবস্থা রাখার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। বিদেশ থেকে যারা আসে তারা স্থানীয় ভাষা জানে না। তাদের সামনে ইংরেজিতে এই সমস্ত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। পর্যটককে ঘিরে রাজ্যের আর্থিক অবস্থান মজবুত হবার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন বাঁশ ও রাবারভিত্তিক উৎপাদিত পণ্য পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হতে পারে।আজ সন্ধ্যায় রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, মন্ত্রী শান্তনা চাকমা, বিধায়ক কিশোর বর্মণ, মুখ্যসচিব সহ বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ পদাধিকারীরা আলোকমালায় উদ্ভাসিত নীরমহল, রুদ্রসাগরের প্রধান ঘাট, এলাকা পরিদর্শন করেন। জি-টোয়েন্টি দেশের প্রায় আশিজন প্রতিনিধি চার এপ্রিল বেলা দেড়টায় নীরমহল পরিদর্শনে আসবেন।এই বিদেশি প্রতিনিধিদের সামনে রাজ্যের ইতিহাস, ভারতের অন্যতম জলমহল নীরমহলের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আলো ও ধ্বনির যুগলবন্দির সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাসাদের রাণীর বাগানে আয়োজিত আলো-ধ্বনির যুগলবন্দিতে রাজন্য ত্রিপুরার বিষয়। ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান, ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তি, জাতি- উপজাতি, হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি এই যুগলবন্দিতে স্থান পেয়েছে। ত্রিশ মিনিটব্যাপী এই আলো-ধ্বনির যুগলবন্দিতে ধ্বনি সেভাবে বিকশিত হয়নি। অতীব ধীরলয়ে বা ক্ষীণ আওয়াজে এই উদ্যোগ যেন অনেকটাই নিষ্প্রভ।এছাড়া নীরমহলকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নান্দনিকভাবে। গোটা প্রাসাদ নতুনভাবে রং করা হয়েছে। প্রাসাদের অভ্যন্তরের ফুলের বাগানগুলি বাহারি ফুল গাছে সুশোভিত করে তোলা হয়েছে। রুদ্রসাগর জলাশয়ের প্রধান ঘাট এলাকা থেকে নীরমহল প্রাসাদ পর্যন্ত এলাকায় কচুরিপানা, জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করে নীরমহলকে তার স্বমহিমায় বিদেশি অতিথিদের সামনে তুলে ধরতে যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.