জোটের অঙ্ক কষা
রাজনীতি বিষয়টার সাথে বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত যোগাযোগ রয়েছে। কখনও মনে হয়, রাজনীতির সাথে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের খুব বেশি মিল। যেমন ক্রিয়া ঠিক তার সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া।
নির্বাচনের আগে কোনও রাজনৈতিক দল কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এবং সে ব্যাপারে কীভাবে মানুষকে কনভিন্স করতে পারছে, ঠিক তার উপর নির্ভর করে ভোট যন্ত্রের প্রভাব। আবার কখনও মনে হয়, এ এক নিখুঁত পারমুটেশনের অঙ্ক। ঘুঁটি সাজিয়ে চলা নিরান্তর…। খেলতে জানলে কোনও একটা তো ক্লিক করবেই। এই ক্ষেত্রে ঝুঁকি অবশ্যই বেশি। ঠিকমতো অঙ্ক কষতে না পারলে, পরিনাম সকলের জানা।২০২৪ দেশে লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে শাসক- বিরোধী সকলেই এমন অঙ্ক কষে চলেছে। বিরোধীরা সক্রিয় হয়েছে বিজেপি বিরোধী জোট গঠন করতে। বিরোধীদের এই উদ্যোগ যদিও নতুন নয়৷ এর আগেও একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি। প্রতিবারই জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়। কিন্তু মাঝপথে এসে সব প্রয়াস ভেস্তে যেতে দেখেছে দেশবাসী।তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এবার বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে সক্রিয় হয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমার৷ তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, নীতীশ কুমার এতদিন বিজেপি এবং মোদির সাথেই ছিলেন।গত বছর এনডিএ জোট থেকে তিনি বেড়িয়ে এসে ফের আরজেডি অর্থাৎ লালুপ্রসাদের হাত ধরেছেন। আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকালে দিল্লীতে হাজির হয়েছিলেন নীতীশ কুমার।
দিল্লীতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সাথে বৈঠক করেছেন। এদিন বিকালে তারা বৈঠক করেছেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী তথা সদ্য জাতীয় দলের স্বীকৃতি পাওয়া আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাথে।খবরে প্রকাশ; ২০২৪ কে পাখীর চোখ করে মূলত দুটি সূত্র মেনে বিরোধী জোট গড়তে চাইছে কংগ্রেস।প্রথমত, লোকসভা নির্বাচনের আগেই কোনও আনুষ্ঠানিক বিরোধী জোট বা মঞ্চ তৈরির বদলে, যে রাজ্যে যে দল সব থেকে বেশি শক্তিশালী, ততবেশী আসনে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিজেপি বিরোধী ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা হবে। দ্বিতীয়ত, আনুষ্ঠানিক বিরোধী জোট ঘোষণা না করা। এতে জোটের নেতা বা মুখ নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এর পিছনে মূল কারণটাও পরিষ্কার। অনেক বিরোধীরাই আপত্তি রয়েছে রাহুল গান্ধীকে বিরোধী জোটের নেতা বা মুখ হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে। কংগ্রেস সেটা বুঝতে পেরে আগে থেকেই ওই পথে হাঁটতে চাইছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। বিরোধী নেতাদের সাথে বৈঠকে রাহুল গান্ধী নিজেও এমন বার্তা দিয়েছেন বলে খবর।
এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বিরোধীদের এই জোটের অঙ্ক যদি শেষ পর্যন্ত মিলে যায়, তাহলে প্রথম যে দুটি প্রশ্ন উঠে আসে সেগুলি হলো,এক – কংগ্রেস কতটা লাভবান হবে? দুই -বিরোধীরা জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?দেশবাসী কিন্তু ভোটের আগেই দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব চাইবে। এই নিয়ে দ্বিমত নেই। বিরোধীরা মানুষকে কতটা আশ্বস্ত করতে পারবে, কতটা কনভিন্স করতে পারবে – তার উপরই নির্ভর করবে ভোটের প্রভাব। ঘুঁটি সাজালেও অঙ্কটা সঠিকভাবে কষতে না পারলে পরিণাম কী? সেটা সকলেই জানে।