জ্ঞান’-এর সম্ভাব্যতা!!

 জ্ঞান’-এর সম্ভাব্যতা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারতীদসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের মঞ্চে উপবিষ্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশে সহাস্যে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ছবিটি প্রথম শ্রেণীর প্রায় সব সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে।

একে নিছক একটি ছবি ভাবা ঠিক নয়, বরং এমন দৃশ্যপটের তাৎপর্য গভীর।আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অন্তত চারশো আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি।সেই লক্ষ্যে হিন্দুত্বের পাশাপাশি, গরিব, যুব সম্প্রদায়,কৃষক ও নারীদের সমর্থন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।গোটা পরিকল্পনাটির নাম দেওয়া হয়েছে জি (গরিব),ওয়াই (যুব), এ (অন্নদাতা),এন (নারী)বা সংক্ষেপে ‘জ্ঞান’।আগত নির্বাচনে দলের রণকৌশল ঠিক করতে গত মঙ্গলবার বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

সেখানে চারশো আসন ছোঁয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন দলের সভাপতি জে পি নাড্ডাপাশাপাশি,লোকসভায় দলের ভোট প্রাপ্তির হার অন্তত ৪৫ শতাংশে যাতে পৌঁছয়, সেদিকেও নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’জ্ঞান’ বাস্তবায়নে গড়া হয়েছে কমিটি।তার কাজ হবে দেশের জি ওয়াই এ এন-এই চার সমাজকে দলের ছাতার নীচে আনতে রণকৌশল নিরূপণ।লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের মধ্যে নির্বাচন হয় ৫৪৩ আসনে।সেখানে কোনও দলের পক্ষে একা চারশো আসনে জয়লাভ সহজসাধ্য নয়।পাঁচ বছর আগের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি ৩০২ টি আসন পেয়েছিল। প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৭ শতাংশের বেশি।সেখান থেকে ৪৫ শতাংশ ভোট অর্জন, সমধিক কঠিন লক্ষ্য।তবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদি নিজেকে যেভাবে উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তার প্রায় শীর্ষ বিন্দুতে অধিষ্ঠিত করেছেন, এমন স্বপ্ন তার কাছে মোটেও দিবাস্বপ্ন নয়।কংগ্রেসকে সর্বান্তঃকরণে পরাস্ত করতে মোদির সামনে এখনও দুটি বাধা রয়েছে।

দেশের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং জওহরলাল নেহরুর আসন জয়ের রেকর্ড।রাজীব গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস লোকসভায় ৪১৪ টি আসন পেয়েছিল,যা এখনও নজির। আর রাজীবের মাতামতহ নেহরুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ১৯৫৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে তদানীন্তন লোকসভার ৪৯৪টি আসনের মধ্যে ৩৭১টি আসনে (৪৭.৭৮ শতাংশ ভোট) জয়ী হয়েছিল। এহ বাহ্য, সেই নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল কমিউনিস্ট পার্টির তুলনায় কংগ্রেস পেয়েছিল পাঁচগুণ বেশি ভোট।তৃতীয় দফায় দিল্লীর মসনদে বসতে ওই দুই রেকর্ড মোদি ভাঙতে চাইবেন,সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু এটি করতে হলে বিজেপিকে দক্ষিণে আসন বাড়াতেই হবে।গতবার ভাল ফল করা তিন বড় রাজ্য যেমন মহারাষ্ট্র,বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে এ যাত্রায় দলের লড়াই কঠিন।পাঁচ বছর আগে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়েছিল বিজেপি।বর্তমানে সেই জোট ভেঙেছে।একইভাবে মহারাষ্ট্রে পাঁচ বছর আগে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ও বিজেপি হাত ধরে লড়াই করলেও,এখন উদ্ধব বিরোধী শিবিরে।পশ্চিমবঙ্গে গতবার ১৮টি আসন পেলেও,এ যাত্রায় বিহার ও মহারাষ্ট্রের মতো সেখানেও আসন কমার আশা রয়েছে।এ ছাড়া উত্তর ও পশ্চিম ভারতে নতুন করে আসন সংখ্যা বাড়ানো কঠিন।কারণ, এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করে ফেললে জয়ের জন্য আর কোনও শৃঙ্গ অবশিষ্ট থাকে না, বরং অবরোহণের শঙ্কা থাকে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতে উনিশের নির্বাচনে বিজেপি কার্যত সেই শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে যায়।অতএব, বিশেষত দাক্ষিণাত্যে আরও বেশি আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে বিজেপির আগুয়ান হবে সেটাই অভিপ্রেত।এই আবহে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো শূন্য ভাঁড়ারের রাজ্যে জেতার লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপানোই দস্তুর।তেলেঙ্গানায় এবার মূল লড়াই ছিল বিআরএস বনাম কংগ্রেসের মধ্যে।তা সত্ত্বেও বিজেপির আসনসংখ্যা এক থেকে বেড়ে আট হয়েছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির ১৩০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে এখনই বিজেপির দখলে ২৯টি। এর মধ্যে ২৫টি লোকসভা কেন্দ্র কর্ণাটকে। বাকি চারটি তেলেঙ্গানায়।

তবে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল,পুদুচেরি থেকে বিজেপির কোনও সাংসদ নেই।এবার দাক্ষিণাত্যের মোট ১৩০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি ৬০টি লোকসভা কেন্দ্র জেতার যে লক্ষা নিয়েছে,তা পূর্ণতা পেলেই সফল হবে ‘জ্ঞান’।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.