জ্বালানি নিয়ে বাগ্ যুদ্ধে কেন্দ্র-রাজ্য।

 জ্বালানি নিয়ে বাগ্ যুদ্ধে কেন্দ্র-রাজ্য।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ   আবার বাড়ছে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম । অর্থাৎ পরিভাষায় বেন্ট অয়েল । সুতরাং আবার দেশের বাজারেও পেট্রোল – ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা।বস্তুত এখনই যেভাবে অশোধিত তেলের দাম বেড়েছে সেই প্রেক্ষিতে ভারতের তেল উৎপাদন সংস্থাগুলি চাইছে অবিলম্বে যেন আবার অনেকটাই পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয় সরকার । এমনকি ১২৫ টাকা লিটার প্রতি দামেও পৌঁছতে পারে পেট্রোল । যদিও কাগজেকলমে পেট্রোল – ডিজেলের দাম স্থির করে তেল উৎপাদন সংস্থাগুলি । আর সেই মূল্য নির্ধারণ করা হয় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দামের ওঠাপড়ার উপর । সরকারের ভূমিকা থাকার কথা নয় । কিন্তু আদতে যে এই তেলের মূল্যবৃদ্ধি অথবা দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পিছনে থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সেটা নিয়ে সংশয় নেই । এর প্রমাণ হিসেবে বলাই যায় , মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পেট্রোপণ্যের দাম বাড়েনি । অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম তখন পৌঁছ গিয়েছিল গ্যালন প্রতি ১৩৯ ডলারে । কারণ তখন ভোট চলছিল পাঁচ রাজ্যে । আর এখন ১০৫ থেকে ১০৬ ডলারের মধ্যেই থাকছে । যদিও সম্প্রতি ১০০ ডলারের নীচেও নেমে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম । এই অবস্থায় আজ কেন্দ্র বনাম রাজ্য চরম বাগযুদ্ধ হয়ে গেলো পেট্রোল ডিজেল নিয়ে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিভিন্ন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ছিল এদিনের বৈঠক । কোভিড থেকে অর্থনীতি । জিএসটি থেকে ভ্যাকসিন । বিভিন্ন বিষয়ে এই আলোচনা তথা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত প্রবল বিতর্ক হিসেবে রয়ে গেলো প্রধানমন্ত্রীর একটি আহ্বান । তিনি এদিন কতিপয় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন । কারণ , তার মতে একঝাঁক রাজ্য পেট্রোল – ডিজেলের দামের উপর রাজ্যের ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছিল। ঠিক যেমন কেন্দ্রীয় সরকারও নভেম্বর মাসে এক্সাইজ ডিউটি কমিয়ে দেয় । কিন্তু বেশ কিছু রাজ্য এখনও একবারও ট্যাক্স কমায়নি । এর ফলেই দেশের ওইসব প্রান্তে মূল্যবৃদ্ধি আরও বেশি । কোনওভাবেই কমছে না । তাই এই রাজ্যগুলির এখনই উচিত পেট্রোল – ডিজেলের উপর ধার্য সেল ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া । এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ , মহারাষ্ট্র , তেলেঙ্গানা , তামিলনাড়ু , ঝাড়খণ্ড , অন্ধ্রপ্রদেশ , কেরল ইত্যাদি । অর্থাৎ সোজা কথায় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বলতে চেয়েছেন যে , বিরোধী দলের রাজ্যগুলিই পেট্রোল – ডিজেলের দামের উপর ধার্য হওয়া কর কমায়নি । এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , উদ্ধব ঠাকরে , কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণ করেন । তাদের বক্তব্য , কেন্দ্রীয় সরকার বিগত বছরগুলিতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে পেট্রোল – ডিজেলের উপর ধার্য শুল্ক থেকে । সেই টাকার কোনও ভাগ কেন রাজ্যগুলি পায়নি । ৫৩ হাজার কোটি টাকা এখনও জিএসটি বকেয়া রাজ্যগুলির । কেন্দ্র সেটা কেন দিচ্ছে না ? যখন পেট্রোলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে তখন ভারতেও দাম বাড়ানো হয়।  অথচ যখন দাম কমে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে তখন দাম কমানো হয় না কেন ? এই বাদানুবাদের মধ্যেই আগামী শনিবার দিল্লীতে আবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হবে । বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি , সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক হবে দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে । সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী । কলকাতা অফিসের সংযোজন : আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও । ঠিক চার ঘণ্টা বাদে নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর কথার ‘ জবাব ’ দেন মমতা । জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেমন অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছিলেন , মমতা সেই বল সপাটে কেন্দ্রের দুয়ারে পাঠিয়ে দিয়ে বলেন , ‘ উনি দাম বাড়িয়ে যাবেন , আর আমরা কমাব ? কী আবদার ! রাজ্যের উপর বোঝা না চাপিয়ে নিজের দিকে দেখুন । আপনি পেট্রোল , ডিজেল থেকে কত টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন ? ’ বিদ্রূপের সুরে ছড়া কেটে মমতা বলেন , ‘ আমাদের ঘাড়ে দিয়ে সব দোষ , সাধু সেজেছে নন্দ ঘোষ । পেট্রোপণ্য থেকে কত টাকা কেন্দ্র আদায় করেছে সেই হিসাব পেশ করে মমতা বলেন , ‘ ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেট্রোল আর ডিজেল থেকে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা অন্তঃশুল্ক বাবদ আদায় করেছে মোদি সরকার । ‘ ক্ষোভ উগরে মমতা বলেন , ‘ প্রধানমন্ত্রী মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন । গত তিন বছর ধরে আমরা পেট্রোলে লিটার পিছু ১ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি । এ জন্য আমাদের ১৫০০ কোটি টাকা রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে । ‘ সুর চড়িয়ে মমতা বলেন , ‘ কেন্দ্র রাজ্যের ৯৭০০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে । আপনি তার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা দিন , আমি ১০ হাজার কোটি টাকা দেব ( তথা জ্বালানিতে ছাড় ) । কেন্দ্রকে ঠুকে তিনি বলেন , ‘ কেন্দ্র বিজেপি রাজ্যগুলির প্রতি উদারতা  দেখালেও  বিরোধিদের হাতে থাকা রাজ্যগুলির সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে । তিনি বলেন , ‘ প্রধানমন্ত্রী একতরফাভাবে বলে গেছেন । বাকিদের কথা বলার কোনও সুযোগই ছিল না । আমি কিছুই বলতে পারিনি । ‘ এদিন মমতা ছাড়াও মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকার ও তামিলনাড়ুতে ডিএমকে সরকার মোদির কথার প্রতিবাদ জানিয়েছে । অন্যদিকে কংগ্রেসের বক্তব্য , গত ৮ বছরে কেন্দ্র সরকার পেট্রো পণ্য থেকে ২৭ লক্ষ কোটি টাকা অন্তঃশুল্ক আদায় করেছে । তুলনায় এই সময়ে রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১৬ লক্ষ কোটি টাকা । সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া , ‘ সাড়ে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা পেট্রো পণ্য থেকে লুঠ করে এখন জ্বালানির দাম কমাতে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে চোখ রাঙাচ্ছেন । অথচ বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা তেলের ( ক্রুড বেন্ট ) দাম ২০ শতাংশ কমে গেছে । ‘

Avatar

Dainik Sambad

Leave a Reply

Your email address will not be published.