জ্যোতিহীন বিদ্যাজ্যোতি!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় একটি অতি প্রচলিত প্রবাদ বাক্য রয়েছে।সেটি হলো ‘ঢাল নেই,তলোয়ার নেই,নিবিরাম
সর্দার।এই প্রবাদের মূল অর্থ কী?কেন এই প্রবাদের ব্যবহার হয়?সেটি কম বেশি সকলেরই জানা আছে।ফলে এখানে নতুন করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। শুরুতে প্রবাদ বাক্যটি উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, বর্তমানে রাজ্যে প্রচলিত ‘বিদ্যাজ্যোতি’ প্রকল্পটির সাথে একেবারে হুবহু ওই প্রবাদ বাক্যের অন্তনির্হিত অর্থের মিল রয়েছে।
বছরখানেক আগে রাজ্যের বিজেপি জোট সরকার একেবারে ঢাক- ঢোল পিটিয়ে, ঘটা করে প্রথমে একশটি বিদ্যালয়কে ‘বিদ্যাজ্যোতি’ স্কুল হিসাবে ঘোষণা করে। পরবর্তীকালে আরও পঁচিশটি বিদ্যালয়কে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখন একশ পঁচিশটি বিদ্যাজ্যোতি স্কুল রয়েছে।ওই একশ পঁচিশটি বিদ্যালয়ই এখন ইংরেজি মাধ্যম এবং ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা বোর্ড ছেড়ে, সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্থাৎ সিবিএসই বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রথমে গোটা রাজ্যবাসী, বিশেষ করে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা এবং অভিভাবকরা দারুণভাবে উৎসাহিত হয়েছিল। প্রত্যেকেই ভেবেছিল,রাজ্যের শিক্ষার গুণমান,পরিকাঠামো থেকে শুরু করে সবকিছু আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। ফলে শুরুতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাংলা মিডিয়াম স্কুল থেকে এনে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলিতে ভর্তি করানোর জন্য উঠে পড়ে লাগেন।ছাত্রছাত্রীরাও একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলিতে ভর্তি হওয়ার জন্য।শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে।সবগুলি মহকুমার জনপ্রতিনিধিরাও নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যাজ্যোতি স্কুল অনুমোদনের জন্য দিনের পর দিন মহাকরণে চক্কর কেটেছেন।মোদ্দা কথা, বিদ্যাজ্যোতি নিয়ে গোটা রাজ্যে একটা বাড়তি উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল।রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তরও ঢালাওভাবে বিদ্যাজ্যোতির প্রচার করছে।
কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা গেল বিদ্যাজ্যোতি জ্যোতিহীন হয়ে পড়েছে।আর এখনতো বিদ্যাজ্যোতি ‘জ্যোতি’ হারিয়ে অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে।বেরিয়ে এসেছে বিদ্যাজ্যোতির কঙ্কালসার বেহাল অবস্থার ছবি।যে অভিভাবকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন, তারাই এখন আবার সরকার ও শিক্ষা দপ্তরের ছাল-চামড়া তুলে, নানা উপাধিতে ভূষিত করেছেন।সম্প্রতি সিবিএসই বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে।সেই ফলাফলেই ফুটে উঠেছে রাজ্যের বিদ্যাজ্যোতির জ্যোতিহীন বেহাল অবস্থার ছবিটা। রাজ্যজুড়ে এখন ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে আগেই রাজ্য সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল।শুধু তাই নয়, প্রকল্প চালু, হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সময়ে সময়ে বিদ্যাজ্যোতির বেহাল অবস্থার ছবি ও সংবাদ তুলে ধরা হয়েছে।কিন্তু সরকার কোনও কিছুতেই কর্ণপাত করেনি।বরং উল্টো পথে হেঁটেছে।গত বছরখানেক ধরে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর অনেকটা অভিভাবকহীন বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা নিজেই শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্বে। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী নিজের কাছে এতগুলি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রেখে দিয়েছেন যে, তিনি এখন দপ্তরের ভারে ন্যুব্জ।ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।খবরে প্রকাশ, বিদ্যাজ্যোতির বেহাল অবস্থা দেখে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন।সোমবার মহাকরণে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলির শোচনীয় ফলাফল এবং বেহাল অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন বলে খবরে প্রকাশ।
প্রশ্ন হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করা কার বিরুদ্ধে?এই পরিস্থিতির জন্য তো তিনি এবং তাঁর সরকারই দায়ী।রাজ্যে কোনও ধরনের পঠনপাঠনের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন না করে, তড়িঘড়ি বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প চালু করে দেওয়া হয়েছে।সব থেকে বড় সমস্যা শিক্ষকের শূন্যতা।পরীক্ষার একমাস আগে পর্যন্ত সিবিএসই সিলেবাস হাতে না পেলেও, দপ্তর এবং সরকারের কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যায়নি।ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হলেও, পঁচানবুই শতাংশ স্কুলের শিক্ষকদের ইংরেজি পড়াতে পা কাঁপছে। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের কী পড়াবেন?পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, ক্লাস রুম নেই, শিক্ষক শিক্ষিকাদের সিবিএসই ধাঁচের প্রশিক্ষণ নেই।ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, তথাকথিত বিদ্যাজ্যোতির নামে।মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে কাজের কাজ কিছু হবে না।বরং পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনের উদ্যোগ নিন।তবেই বিদ্যাজ্যোতির জ্যোতি বাড়বে।নতুবা জ্যোতিহীন
বিদ্যাজোতি- এই তকমা নিয়েই চলতে হবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

1 day ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

1 day ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

1 day ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

1 day ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

2 days ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

2 days ago